সাতকানিয়ায় গণপিটুনির আগে থানা থেকে লুট করা পিস্তল দিয়ে গুলি চালান নিহতদের একজন: পুলিশ

গত সোমবার (৩ মার্চ) রাতে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় গণপিটুনিতে নিহত দুজনের একজন কোতোয়ালি থানা থেকে লুট হওয়া একটি পিস্তল থেকে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়েন। পুলিশ রাতেই ঘটনাস্থল থেকে পিস্তলটি উদ্ধার করে এবং এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করে।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সাইফুল ইসলাম বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) তার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, নিহতদের মধ্যে নেজাম উদ্দিন গণপিটুনির আগে লুট হওয়া পিস্তল থেকে গুলি চালান।
সোমবার রাতে এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা পশ্চিমপাড়া এলাকায় নেজাম উদ্দিন (৪৫) ও মোহাম্মদ সালেক (৩৫) নামে দুই ব্যক্তিকে জনতা পিটিয়ে হত্যা করে।
পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়, নেজাম ও সালেক এলাকায় চাঁদাবাজ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ঘটনার দিন তারা সাতটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে অস্ত্রসহ স্থানীয় একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে যান। এর আগে তারা এক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যের স্ত্রীকে লাঞ্ছিত করেছিলেন, যা স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করে।
মসজিদের লাউডস্পিকারে ডাকাত আসার ঘোষণা দেওয়ার পর গণপিটুনি শুরু হয় বলে জানা গেছে। সংঘর্ষের সময় একজন দোকানদারসহ চারজন গুলিবিদ্ধ হন।
এসপি সাইফুল ইসলাম এ ঘটনার সঙ্গে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার আছে কি না সে বিষয়েও আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, 'হত্যাকাণ্ডের সময় কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা বা চেয়ারম্যানের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আমরা এ ঘটনার পেছনে কোনো রাজনৈতিক সংযোগ বা বিরোধী প্রভাব খুঁজে পাইনি।'
উদ্ধার করা পিস্তলটি ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সহিংসতার সময় চুরি হওয়া অস্ত্রগুলোর মধ্যে একটি বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। সেই সময় বিক্ষোভকারীরা চট্টগ্রামের আটটি থানা ও ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে ৮১৩টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৪৪ হাজার ৩২৪ রাউন্ড গুলি লুট করেছিল। এসব অস্ত্রের বেশিরভাগ এখনো উদ্ধার হয়নি।
এসপি সাইফুল ইসলাম বলেন, 'আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সক্রিয়ভাবে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন নির্বিকার হয়ে গেছে—কোনো অবস্থায় এমন ভাবার সুযোগ নেই।। আমরা আমাদের মতো প্রকৃত সত্য ঘটনা উদ্ঘাটনের জন্য যা কিছু দরকার, সবকিছু করব। সে জন্য একটু সময় নিচ্ছি।'
পুলিশের রেকর্ড অনুযায়ী, সালেকের বিরুদ্ধে দুটি খুন ও বিস্ফোরক সংক্রান্ত পাঁচটি মামলা রয়েছে, আর নেজামের বিরুদ্ধে রয়েছে একটি ফৌজদারি মামলা।
জামায়াতে ইসলামীর কাঞ্চনা ইউনিয়ন শাখার সেক্রেটারি জায়েদ হোসেন দাবি করেন, নেজাম ও সালেক সক্রিয় জামায়াত কর্মী ছিলেন এবং তাদের পরিকল্পিতভাবে ফাঁদে ফেলে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, 'তাদের মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বারবার মাথায় আঘাত করা হয়।'
তবে, জামায়াতে ইসলামীর সাতকানিয়া উপজেলা প্রধান মাওলানা কামাল উদ্দিন নিহতদের দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, 'যদিও তারা জামায়াতকে সমর্থন করতে পারেন, তারা তালিকাভুক্ত কর্মী ছিলেন না।'