সহকর্মীকে ‘অশ্লীল ভিডিও’ পাঠানোর অভিযোগে তদন্তের মুখে ডিআইজি, পদ থেকে অপসারণ
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) সাবেক কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ানের বিরুদ্ধে ট্যুরিস্ট পুলিশের এক নারী কর্মকর্তাকে আপত্তিকর ও অশ্লীল ভিডিও পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগে তার বিরুদ্ধে অভিযোগনামাও জরি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
গত ২৪ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খলা-১ শাখা থেকে অভিযোগনামাটি জারি করেন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি।
অভিযোগনামা জারির পর আবু সুফিয়ানকে আরএমপি কমিশনার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি পুলিশ অধিদপ্তরে কর্মরত আছেন। গত ২৬ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (পুলিশ-১ শাখা) মো. মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তাকে পুলিশ অধিদপ্তরে বদলি করা হয়।
অভিযোগনামায় বলা হয়, আবু সুফিয়ান আরএমপি কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আগে ঢাকায় অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে ট্যুরিস্ট পুলিশে কর্মরত ছিলেন। সেখানে তার ইউনিটে পূর্ব পরিচিত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার এক নারী কর্মকর্তা ছিলেন।
ওই নারী কর্মকর্তা ট্যুরিস্ট পুলিশে যোগদানের আগে ফেনী জেলায় দায়িত্ব পালনের সময় আবু সুফিয়ানের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল এবং তাদের মধ্যে মেসেঞ্জারে নিয়মিত কথাবার্তা হতো। আবু সুফিয়ানের গ্রামের বাড়ি ফেনীতে।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর আবু সুফিয়ান মেসেঞ্জারে ওই নারী কর্মকর্তাকে আপত্তিকর ও অনাকাঙ্ক্ষিত মেসেজসহ একটি আপত্তিকর ভিডিও ক্লিপ পাঠান। পরবর্তীতে এসব মেসেজ তিনি মুছে ফেলেন, যা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক প্রতিবেদনে প্রমাণিত হয়েছে এবং আবু সুফিয়ান তার জবানবন্দিতে স্পষ্টভাবে স্বীকারও করেছেন বলে অভিযোগনামায় উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগনামায় আরো বলা হয়, মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বে থেকে একজন জুনিয়র নারী সহকর্মীকে অশ্লীল ভিডিও ক্লিপ পাঠিয়ে চরম অপেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছেন, যা নিতন্তই অকর্মকর্তাসুলভ এবং নৈতিকতা বিবর্জিত। তার এই কার্যকলাপ পুলিশের মর্যাদা ক্ষুন্ণ করেছে, যা সরকারি চাকরি বিধিমালা (শৃঙ্খলা ও আপিল) ২০১৮ এর বিধি অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগনামায় আবু সুফিয়ানকে কেন চাকরি থেকে বরখাস্ত অথবা অন্য কোনো উপযুক্ত দণ্ড প্রদান করা হবে না, তা অভিযোগ পাওয়ার ১০ কর্মদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে জানাতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি আত্মপক্ষ সমর্থনে তিনি ব্যক্তিগত শুনানির ইচ্ছা পোষণ করেন কি না, সেটিও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে লিখিতভাবে জানাতে বলা হয়েছে।
এদিকে অভিযোগনামাটি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে পাননি বলে জানিয়েছেন অভিযুক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান। অশ্লীল ভিডিও পাঠানোর কথা স্বীকার করলেও সেটি তিনি ওই নারী কর্মকর্তার কাছ থেকে পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
আবু সুফিয়ান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'তার (নারী কর্মকর্তা) অনেকগুলো আইডি। একটি আইডি থেকে আগে আমাকে মেসেজ দিত, কথাবার্তা হতো। একদিন রাতে ওই আইডি থেকে আমাকে একটি ভিডিও পাঠিয়েছেন। পরবর্তীতে আমি ওই আইডিতে তাকে ফোন দিয়ে না পেয়ে তার আরেকটি আইডিতে ভিডিওটি পাঠিয়ে জিজ্ঞাসা করি, আমাকে কেন ভিডিওটি দিয়েছেন। ঘটনা হলো এটা। কিন্তু এখন ওই নারী কর্মকর্তা নাকি অস্বীকার করছেন, ওইটা তার আইডি না।'
তিনি আরও বলেন, 'আমি নোটিশ পেলে জবাব দেব। এখনো সময় আছে।'
অভিযোগকারী নারী কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, 'আমি তাকে আগে চিনতাম না। ট্যুরিস্ট পুলিশে আমার পোস্টিং হওয়ার পর দেখা হলে সালাম বিনিময় ছাড়া কখনোই কোনো আলাপ-আলোচনা হয়নি। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর তিনি রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পান। এরপর ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে তিনি একতরফাভাবে আমাকে অসংলগ্ন ও অপ্রাসঙ্গিক বার্তা পাঠাতে শুরু করেন। যখন বিষয়টি সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য পর্যায়ে পৌঁছায়, তখন আমি নির্ধারিত বিভাগীয় নিয়ম অনুসরণ করে বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করি।'
তিনি বলেন, 'বর্তমানে বিষয়টি প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। … আমি আমাদের বিভাগীয় নিয়ম-প্রক্রিয়ার ওপর আস্থা রাখতে চাই।'
