নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ডিসেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে: ড. ইউনূস

আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নেবে কি নেবে না, তা তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। খবর বিবিসির।
সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মুহাম্মদ ইউনূস জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি ও তার দেশত্যাগের পর যখন তাকে দায়িত্ব নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়, তখন তিনি 'অবাক' হয়েছিলেন।
নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ বলেন, আমি কখনো ভাবিনি যে সরকারের নেতৃত্ব দেব। সরকার চালানোর অভিজ্ঞতা ছিল না, তাই শুরুতে সব কিছু সঠিকভাবে বুঝে নিতে হয়েছিল।
তিনি বলেন, 'প্রাথমিক ধাক্কা সামলে নেওয়ার পর আমরা সবকিছু গোছানো শুরু করি। আমাদের অগ্রাধিকার ছিল আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার ও অর্থনীতি ঠিক করা।'
শেখ হাসিনা ভারতে নির্বাসনে থাকলেও তিনি এবং তার দল আওয়ামী লীগ আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না, তা স্পষ্ট নয়। বাংলাদেশের আদালতে তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইউনূস বলেন, 'তারাই [আওয়ামী লীগ] সিদ্ধান্ত নেবে, তারা নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, আমি তাদের হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারি না'।
তিনি আরও বলেন, 'নির্বাচনে কারা অংশ নেবে, সেটা নির্বাচন কমিশন ঠিক করবে।'
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ইউনূস বলেন, 'শান্তি ও শৃঙ্খলা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তারপরে অর্থনীতি। অর্থনীতি এখন চূর্ণ-বিচূর্ণ অবস্থায় আছে, যেন গত ১৬ বছর ধরে কোনো ভয়াবহ ঝড় বয়ে গেছে, আর আমরা এখন তার ধ্বংসাবশেষ গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি।'
তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে চায়। তবে প্রয়োজনীয় সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করা গেলে নির্বাচন ডিসেম্বরেই হতে পারে, না হলে আরও কয়েক মাস লাগতে পারে।
২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর শেখ হাসিনা কঠোরভাবে দেশ পরিচালনা করেছেন। তার শাসনামলে বিরোধীদের দমন, মানবাধিকার লঙ্ঘন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের হত্যা ও গ্রেপ্তারের অভিযোগ ওঠে।
গত বছর ছাত্রদের নেতৃত্বে হওয়া এক গণ-অভ্যুত্থানের মুখে আগস্টে হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন। এরপর বিক্ষোভকারীদের আহ্বানে দেশে ফিরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন ইউনূস।
তবে ক্ষমতা বদলের সাত মাস পরও দেশের অনেক নাগরিক মনে করছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এ বিষয়ে ইউনূস বলেন, ভালো-মন্দ তুলনামূলক বিষয়। যদি গত বছরের একই সময়ের সঙ্গে তুলনা করেন, তবে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক মনে হবে। যা হচ্ছে, তা অন্য সময়ের চেয়ে আলাদা কিছু নয়।
বাংলাদেশের বর্তমান অনেক সমস্যার জন্য বিগত সরকারকে দায়ী করেছেন ইউনূস।
তিনি বলেন, 'আমি সমর্থন করছি না যে এই ঘটনাগুলো ঘটা উচিত। আমি বলছি, আপনাদের মনে রাখতে হবে, আমরা এমন একটি আদর্শ দেশ বা শহর তৈরি করিনি, যা হঠাৎ করে আমরা গড়ে তুলেছি। এটি সেই দেশের ধারাবাহিকতা, যা আমরা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছি—একটি দেশ, যা অনেক বছর ধরে চলছে'।
শেখ হাসিনার সরকারের সময় যারা নিপীড়িত হয়েছেন, তাদের মধ্যে এখনও ক্ষোভ বিরাজ করছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে হাজারো মানুষ তাকে বিচারের মুখোমুখি করার দাবিতে রাস্তায় নেমেছে।
ফেব্রুয়ারিতে আওয়ামী লীগ নেতাদের কয়েকটি বাড়ি—যার মধ্যে শেখ হাসিনার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িও ছিল—আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ দাবি করেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সহিংসতাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে।
তবে এ নিয়ে ইউনূস বলেন, 'যদি কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে আদালত, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে। পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো উচিত, বিবিসির সাংবাদিকের কাছে নয়।'
ট্রাম্প প্রশাসনের বৈদেশিক সহায়তা কমানোর সিদ্ধান্ত এবং যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি)-এর অর্থায়নে পরিচালিত প্রায় সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার প্রভাব বিভিন্ন দেশের ওপর পড়বে, যার মধ্যে বাংলাদেশও আছে।
এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, 'এটি তাদের সিদ্ধান্ত।'
তিনি আরও বলেন, 'এটি আমাদের জন্য সহায়ক ছিল। কারণ, তারা এমন কিছু করছিল যা আমরা করতে চেয়েছিলাম—যেমন দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই ইত্যাদি, যা তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না।'
বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্র তৃতীয় বৃহত্তম উন্নয়ন সহায়তাকারী দেশ। গত বছর তারা ৪৫০ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
এই ঘাটতি কীভাবে পূরণ করা হবে—এমন প্রশ্নে ইউনূস বলেন, 'যখন এমনটা হবে, তখন আমরা সামলে নেব।'