প্রধান উপদেষ্টার কাছে দ্রুত নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দাবি ১৩ রাজনৈতিক দলের

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জাতীয় নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ দ্রুত ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন ১৩টি রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতারা।
আজ বুধবার (২২ জুলাই) প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিয়ে রাজনৈতিক দল ও জোটের প্রতিনিধিরা বলেন, সরকারের পক্ষপাতমূলক আচরণ বন্ধ করে নির্বাচনের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিনিধিরা অভিযোগ করেন, সরকার জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রতি অতিরিক্ত সদয় আচরণ করছে, যা রাজনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টি করছে এবং বিভাজনকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। সরকারের নিরপেক্ষতা না থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর অভিযোগ করে বলেন, 'সরকার এনসিপির প্রতি সরাসরি পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে, যা অন্য সব রাজনৈতিক দলের জন্য অবমাননাকর। এ আচরণ অব্যাহত থাকলে সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না।'
তার আশঙ্কা- পতিত আওয়ামী লীগ যেকোনো ইস্যুকে কেন্দ্র করে অরাজকতা তৈরির চেষ্টা করতে পারে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, বিচার ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার সরকারেরই দায়িত্ব। অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা হলে জনগণের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসবে। তিনি আরও বলেন, 'লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে এবং সব দলের প্রতি সমান আচরণ করতে হবে।'
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, 'গোপালগঞ্জ ও উত্তরার সাম্প্রতিক ঘটনা দেখিয়ে দেয় ফ্যাসিস্টরা সুযোগ নিচ্ছে এবং ষড়যন্ত্র করছে। সরকারের ভূমিকা দেখে মনে হচ্ছে, তারা নিজেরাই সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে দ্বিধায় আছে।'
তিনি আরও বলেন, 'অধ্যাপক ড. ইউনূস রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্যকে ফ্যাসিবাদের সুযোগ হিসেবে চিহ্নিত করলেও, এই বিভেদের জন্য সরকারই দায়ী।' নির্বাচনের আগে ঘন ঘন সংলাপের প্রয়োজন রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান ড. শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, 'সরকারি প্রটোকলে এনসিপির প্রচারণা চোখে পড়ার মতো।' তিনি বলেন, বৈঠকে ৫ আগস্ট নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দাবি জানানো হয়েছে।
এলডিপির মহাসচিব ও মুক্তিযোদ্ধা ড. রেদোয়ান আহমেদ বলেন, 'রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকলেও দেশের স্বার্থে ঐক্য সম্ভব। কিন্তু সরকার সবচেয়ে দুর্বল অবস্থানে রয়েছে এবং বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে পক্ষপাত স্পষ্ট।'
সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, 'নির্বাচনের তারিখ সুনির্দিষ্টভাবে ঘোষণা না করলে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দূর হবে না। কোনো দল যদি সরকারের পক্ষ হিসেবে চিহ্নিত হয়, তবে সংকট আরও বাড়বে।'
বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, 'সরকার বিপদে পড়লেই রাজনৈতিক দলগুলোকে আহ্বান করে। অথচ এনসিপির এখনো নিবন্ধন হয়নি, তবুও তাদের রাষ্ট্রীয় প্রটোকল দেওয়া হচ্ছে। এটা চরম বৈষম্যের উদাহরণ।'
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সরকার দুর্বল হয়ে পড়েছে, দিন দিন দেশ অরাজকতার দিকে যাচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকারকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বারবার সংলাপ করতে হবে।
উল্লেখ্য, গতকাল মঙ্গলবার যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপি, এনসিপি, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।