খাল দখল ও পরিবেশ ধ্বংসকারীদের দলীয় মনোনয়ন না দিতে একমত রাজনীতিবিদরা

পরিবেশ ধ্বংসে জড়িতদের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে কঠোর অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
তারা একমত যে, খাল দখলকারী ও পরিবেশ ধ্বংসকারীদের কোনোভাবেই দলীয় মনোনয়ন দেওয়া উচিত নয়। একই সঙ্গে, রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে পরিবেশ যেন অগ্রাধিকার পায়, সেটিও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনার দাবি রাখেন তারা।
শনিবার (২৬ জুলাই) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত 'রোড টু গ্রিন ম্যানিফেস্টো: ডায়ালগ অন পলিটিক্যাল ম্যানিফেস্টো' শীর্ষক সংলাপে পানি, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে বিভিন্ন দলের নির্বাচনী অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি তুলে ধরা হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, খাল ও জলাশয় দখলের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা যেন আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন না পান, তা নিশ্চিত করা হবে। তিনি বলেন, "বিএনপির নির্বাচনী ইশতেহারে পরিবেশ সুরক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তাও বিশেষ গুরুত্ব পাবে।"
তিনি বলেন, "আগের স্বৈরশাসনকালে জবাবদিহির অভাব ছিল বলেই দখল ও দূষণ বেড়েছে। এবার সেটা হবে না। রাজনৈতিক দলগুলোকেও জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।"
তিনি আরও বলেন, "বিএনপি ক্ষমতায় এলে জনগণ বলতেই পারবে—'পরিবেশ নিয়ে সেমিনারে যে সব কথা বলেছিলেন, বাস্তবে কী করেছেন?'"
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুয়েল বলেন, "ঢাকার খালগুলোতে রাজনীতিবিদ, মেয়র ও ডিসিদের বছরে দুইবার গোসলের বিধান রাখলে পরিবেশ ঠিক হয়ে যাবে। ঢাকার নদীগুলো পরিষ্কারে আমরা মেয়র, এমপি ও স্থানীয় নেতাদের নেতৃত্বে বছরে দুইবার গোসল করব। বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদীতে আমরা নামব। আগে ঘোষণা দিয়ে এভাবে করলে পানি পরিষ্কার থাকবে। ইউরোপ ও চীনের মতো দেশেও মেয়রের নেতৃত্বে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়।"
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, "যারা নদী দখল করে, বায়ু দূষণ করে, যারা শিল্পের নামে পরিবেশ নষ্ট করে—তাদেরকে পরিবেশ অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা জরুরি। তাদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।"
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ বলেন, "পরিবেশ রক্ষায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য দরকার। এনসিপি স্মার্ট সিটির আদলে গ্রিন সিটি গড়তে চায়। জলবায়ু ও পরিবেশকে 'ক্লাইমেট কমপ্লেক্স'-এর আওতায় আনতে হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় এনসিপি কাজ করবে 'ক্লাইমেট জাস্টিস'-এর ভিত্তিতে।"
তিনি বলেন, "পরিবেশ, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার নামে বাজেটে বরাদ্দ থাকলেও বাস্তবে সেসব কার্যকর হয় না।"
এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, "বাসযোগ্য জমির চাহিদা বাড়ায় কৃষি জমি কমছে, ফলে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও কঠিন হয়ে পড়ছে। তাই পরিকল্পিত ব্যবহার ছাড়া পরিবেশ সুরক্ষা সম্ভব নয়।"
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, "নির্বাচনী ইশতেহারে পরিবেশ নিয়ে দলগুলো চমৎকার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবায়নে আন্তরিকতা দেখা যায় না। পরিবেশ কখনও 'সেকেন্ডারি' বিষয় হতে পারে না। রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিবেশকে আনতে হবে। এটি জনস্বার্থ ও রাষ্ট্রীয় অগ্রাধিকার। দলগুলোকে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।"
তিনি বলেন, "পরিবেশ রক্ষা এখন শুধু নীতির বিষয় নয়, এটি মানবিক দায়িত্ব। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য বাংলাদেশ গড়তে হবে। তরুণরা এখন বড় ভোটব্যাংক, তারাই রাজনীতিবিদদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে বাধ্য করতে পারে।"
সংলাপে আরও বক্তব্য রাখেন—বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।