Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Saturday
June 07, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
SATURDAY, JUNE 07, 2025
আমি স্বপনে তাহারে কুড়ায়ে পেয়েছি

ইজেল

প্রতিভা সরকার
19 January, 2025, 03:15 pm
Last modified: 19 January, 2025, 06:38 pm

Related News

  • ঋত্বিক ঘটকের কন্যা: এক অসমাপ্ত আলাপ
  • শোক হতে শ্লোক
  • আমার স্নিকার্স
  • আপনার প্রিয় পোষা প্রাণীর যত্নে কাজ করেন তারা
  • রং চলিষ্ণু, রঙ্গিলা প্রেমিক...

আমি স্বপনে তাহারে কুড়ায়ে পেয়েছি

খুব খুব দুষ্টু ছিল পাই। সারাক্ষণ ছটফট করছে আর কুটকুট করে সবাইকে কামড়াচ্ছে! তাতে ব্যথা লাগে না, কিন্তু সুড়সুড় করে। দরজা খোলা পেলেই বেরিয়ে যেত, যেন ও ইচ্ছা করে হারিয়ে যেতে চায়। এমনও হয়েছে, সারা রাত ওকে ঘাটা-আঘাটায় খুঁজে আমরা বিফল মনোরথ হয়ে ফিরে এসেছি, তারপর ও একাই কুকুরের কামড়, গাড়ির চাকা এড়িয়ে ফিরে এসেছে। দরজার সামনে এসে আমাদের ডাকছে, আর সেই কান্না শুনে সবার আগে ছুটে গেছে জেট।
প্রতিভা সরকার
19 January, 2025, 03:15 pm
Last modified: 19 January, 2025, 06:38 pm
পোষা বিড়াল পাই।

রোজ শুরু হয় একইভাবে। ঘুমের মধ্যে টের পাই অন্ধকার থাকতেই যারা পেটের টানে সাইকেল, ঠেলা অথবা পায়ে হেঁটে স্টেশনের দিকে দৌড় মারে, তাদের ব্যস্ত কথাবার্তা, ঘণ্টির টিং টিং, পায়ের আওয়াজ, সব আমার চারদিকে বৃষ্টির ফোঁটার মতো ঝরে পড়ছে আর কে যেন শাণিত নখরে আমার দরজায় আঁচড়াচ্ছে, কান্নার মতো আওয়াজে আমাকে বলছে, দরজা খোল, আমি তোমার কাছে যেতে চাই, তোমার বুকের ওম ছাড়া কোনো শীত আমার কাটেনি জন্মাবধি। কিন্তু আমি কিছুতেই উঠতে পারি না বিছানা ছেড়ে, প্রাণপণ চেষ্টায় আমার মুখ দিয়ে শুধু গোঁ গোঁ আওয়াজ বেরোয়, পাশের মানুষটি বলে ওঠে, রোজ রাতে কেন বোবায় ধরে! ডাক্তার দেখানো দরকার। এই নাও জল খাও। 

আকণ্ঠ তৃষ্ণা নিয়েও আমি হাতের পেছন দিয়ে মৃদু ধাক্কায় গ্লাস সরিয়ে দিই, আলুথালু হয়ে ছুটে যাই দরজার দিকে, আমি স্পষ্ট শুনেছি ও আমাকে ডাকছে, ওর নখ কাটা হয়নি বহুদিন, দ্যাখো কেমন খরখর আওয়াজ হচ্ছিল!

কিন্তু দরজার ওপারে একা গা এলিয়ে পড়ে আছে অন্ধকার হলঘর, তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে ওর ঘরটি মুখোমুখি দেখা যায়, জানালার হলুদ পর্দাটি তখনো নড়ছে, যেন খেলাচ্ছলে কে নাড়িয়ে দিয়ে চলে গেছে!

একটু পরেই সকাল হবে। ওই জানালা খুলে দিলেই সোনালি আলোয় ভেসে যাবে প্যারাপেট, সেখানে বসে রোদ গায়ে লাগাতে কী আরাম পেত ও, কে জানে! বারান্দায় বসার বেশ গদিওয়ালা ব্যবস্থা করে দিলেও ওখানেই ফিরে ফিরে যেত। বেশি বিরক্ত করা পছন্দ ছিল না, ওর ব্যক্তিত্বপূর্ণ হাবভাব পরিষ্কার বুঝিয়ে দিত কার সীমানা কতটুকু। আরাম জমে ক্ষীর হয়ে উঠলে ব্রেকফাস্টেও অনীহা দেখা যেত, বাবা খাবার বেড়ে দাঁড়িয়েই আছে, পাত্তা যার দেবার কথা সে বাইরে তাকিয়ে ছাতারে পাখিদের ঝগড়াঝাঁটির সাক্ষী হয়ে থাকছে।

সকালে উঠেই এসব! পড়াশোনো নেই তোর? খালি পেটে প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ হচ্ছে? কানাই মাস্টার হবে নাকি? শিগগিরই খেতে যা!

আমি রোজকার মতো হাত চালানোর সঙ্গে সঙ্গে খই ফোটার মতো মুখ চালাতে থাকি। কিন্তু ওর অটুট গাম্ভীর্যের সঙ্গে পেরে উঠি না। রণে ভঙ্গ দিয়ে অন্য কাজে চলে যাই, পরে একসময় নজর পড়লে দেখি সংগোপনে এসে কখন খেয়ে গেছে, মা-বাবা কষ্ট পাবে এমন কাজ ও অপারগ না হলে কখনো করত না। তবে শত গাম্ভীর্যের আড়ালে লুকিয়ে রাখলেও দুষ্টুমি বুদ্ধি তো কিছু কম ছিল না, আর সব বাচ্চার মতোই মগজভর্তি! আর ওই বাদশাহজাদির মতো হাবভাব! সব সময় বুঝিয়ে দিত, যখন তোমরা যা বলবে তখনই হুকুম তামিল করে ফেলার বান্দা নই আমি! সব হবে, তবে আমার সময়মতো হবে।  

আলো ফোটার আগেকার আবছা আভায় ভরা ফাঁকা হলঘরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে এখন আমার মনে হয়, আমি মহাশূন্যে ঝুলে আছি, গন্তব্যহীন নিরালম্ব বায়ুভূত, ইহকাল পরকালে আমার কেউ নেই, কখনো ছিল না, আর কোনো দিন হবেও না! এত শূন্যতা কি সহ্য করতে পারি! এর থেকে যে বুক ফেটে মরে যাওয়া ভালো! ফিরিয়ে দাও, আমার কোল খালি করে যে চলে গেছে, হে মহাকাল, তোমার কালচক্রের আবর্তে তাকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে এসো!
 
আলো তার নিজস্ব নিয়মে ফোটে, জানালার বাইরে কিচিরমিচির শুরু হয়, পাশের ফ্ল্যাটে কেউ সশব্দে জিবছোলা চালিয়ে প্রাতঃকৃত্যের সূচনা করে। খ্যাখ্যাখ্যগ্যাগ্যাগ্যা সেই অর্থহীন বিকট আওয়াজ অন্য সময় ঘৃণা উদ্রেক করত, কিন্তু এখন আমার কিছুই মনে হয় না। জমাদার নিচ থেকে ঘণ্টা বাজায়, আমি গার্বেজ ব্যাগ হাতে নিয়ে যন্ত্রচালিত পুতুলের মতো দরজা খুলি। সামনে সিঁড়ির ধাপকে মনে হয় অন্তহীন!

ফিরতে ফিরতে ভাবি, ওর নাম রেখেছিলাম পাই। কিন্তু পাই মানে কি? একটা অর্থ তো পিঠেজাতীয় সুখাদ্য, এপল-পাই যেমন। অন্যটা অঙ্কসংক্রান্ত! প্রতিবছর ১৪ মার্চ এই ধ্রুবক সংখ্যাটির উদ্যাপন দিবস। পাইয়ের আর একটা ব্যাপার হচ্ছে যে সে পাওয়ার ক্রিয়াপদ। যেমন কুড়াইয়া পাইলাম। প্রিয় গানের কথায় 'আমি স্বপনে তাহারে কুড়ায়ে পেয়েছি, রেখেছি স্বপনে ঢাকিয়া!' তিনটে অর্থের মধ্যে এখন গানের কথাগুলোই সবচেয়ে জুতসই মনে হয়। সত্যিই তো, ও একটা সুস্বপ্নের মতো আমার জীবনে এসেছিল, আবার রোজ রাতে দুঃস্বপ্ন দেখার ব্যবস্থা পাকা করে দিয়ে চলে গেছে। আসলে সুস্বপ্ন, দুঃস্বপ্ন, আসা, চলে যাওয়া, পাওয়া, হারিয়ে ফেলা, এই শব্দগুলো ন্যাতানো ঘড়ির মতো ভেঙে ভেঙে আমার মনের মধ্যে তালগোল পাকিয়ে যায়। আমি টাইম মেশিনে চেপে বসে চলে যাই তেইশ বছর আগে।

একদিন স্কুল থেকে ফিরে বিহু আমায় বলল, একটা জিনিস এনেছি, মা। দেখে রাগ করতে পারবে না।

অদ্ভুত এক মেয়ে আমার, কোনো দিন বিকট দর্শন শুঁয়োপোকা, শত পায়ে হাঁটা কেন্নো কিংবা ডাইনি-ফড়িং, কী যে ওর স্কুলব্যাগ থেকে বার হতে পারে, আমি তা কল্পনাও করতে পারতাম না। ও ক্লাসে থাকে নাকি ক্লাসরুমের পেছনের জঙ্গলভর্তি মাঠটায় ঘুরে বেড়ায়, কে জানে বাপু! ভারি বিরক্ত লাগে একেক সময়! সবকিছুকে কি ফ্ল্যাটবাড়িতে পোষা যায়? কিন্তু সেদিন তো ও আমাকে অবাক করে দিল! মুঠোয় ধরে আছে একটা ছোট্ট বিড়ালছানা, সাদাকালো আর লালচে মেশানো ক্যালিকো একটা! সত্যিই মুঠোয় এঁটে যায় এত ছোট্ট ছানাটা! কিন্তু আমার বাড়িতে রয়েছে এক বাঘের মতো চেহারা, কিন্তু বড্ড নরম মনের এক গোল্ডেন রিট্রিভার। তার নাম জেট। তাহলে এর ঠাঁই হবে কোথায়! আমাকে নিশ্চিন্ত করে জেট বাচ্চাটাকে শুঁকে দেখল অনেকক্ষণ, তারপর মেঝেতে শুয়ে পড়ে ডান দিকের বিশাল থাবা দিয়ে ওকে টেনে নিল বুকের ভেতর। ড্রপারে দুধ খেয়ে পেট মোটা করা বাচ্চাটা এতক্ষণ কিছুতেই কুঁইকুঁই থামাচ্ছিল না, এইবার জেটের বুকের ভেতর ঢুকে যেন সে হারানো মায়ের স্পর্শ পেল। ঘুমিয়ে পড়ল সঙ্গে সঙ্গে। 

খুব খুব দুষ্টু ছিল পাই। সারাক্ষণ ছটফট করছে আর কুটকুট করে সবাইকে কামড়াচ্ছে! তাতে ব্যথা লাগে না, কিন্তু সুড়সুড় করে। দরজা খোলা পেলেই বেরিয়ে যেত, যেন ও ইচ্ছা করে হারিয়ে যেতে চায়। এমনও হয়েছে, সারা রাত ওকে ঘাটা-আঘাটায় খুঁজে আমরা বিফল মনোরথ হয়ে ফিরে এসেছি, তারপর ও একাই কুকুরের কামড়, গাড়ির চাকা এড়িয়ে ফিরে এসেছে। দরজার সামনে এসে আমাদের ডাকছে, আর সেই কান্না শুনে সবার আগে ছুটে গেছে জেট।
 
যত দিন জেট বেঁচে ছিল, ওর দৌরাত্ম্য ভাগ করে নেওয়ার কেউ ছিল, কিন্তু তারপর এক এক করে ডানা খসে পড়তে লাগল আমার, মা পাখিদের বুড়োকালে যেমন হয়। জেট চলে গেল চিরকালের জন্য, ছেলেমেয়েরা পড়াশোনোর নামে সেই যে বের হলো, আর তো ঘরে ফিরল না। ক্যাম্পাস হয়ে আরও অনেক দূরের শহরে চলে গেল। তবুও কিন্তু আমাদের ঘর খালি হলো না। পাই তার বাবা-মাকে আনন্দে রাখার ভার নিল আর সেই কাজটা করে যেতে লাগল খুব সুচারুভাবে। 

এত রূপবতী হয়ে উঠছিল সে দিন দিন, তার দিকে তাকালে আমার অনেক গল্প মনে পড়ে যেত। ছোটবেলায় আমার দাদু বেঁচে থাকতে আমরা ভাইবোনেরা স্কুল ছুটি হলেই খামারবাড়িতে গিয়ে থাকতুম। সেখানে ধানের মরাই, পোয়ালের পুঞ্জি ছিল, শীতের সবজিভরা খেত ছিল আর ছিল দোলং নামের এক নদী। যত দূর চোখ যায়, শুধু মাঠঘাট, দৃষ্টি কোথাও বাধা পায় না। দূরের আকাশে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আবছা পাহাড়ের রেখা, আমার ড্রয়িং খাতাকে সত্যি প্রমাণ করে তার দুই চূড়ার ফাঁক দিয়ে রোজ ভোরে সোনালি সূর্য উঠে আসত। আমাদের বেশি দূর যাওয়া বারণ ছিল, কিন্তু ঘোরার নেশায় বেশ কিছুটা চলে গেলেও হারিয়ে যাবার জো ছিল না। সরকার  কর্তার নাতিন না? এই প্রশ্ন করে কেউ না কেউ এসে ঘরে ফিরিয়ে দিয়ে যেতেন। 

কিন্তু একদিন নদীর দিকে যেতে যেতে বিশাল এক বাঁশবনের মধ্যে হারিয়ে গেলাম। সূর্য তখন মাথার ওপর, অত বাঁশগাছের মধ্য দিয়ে বাতাস বয়ে যাবার ফলে এমন হা হা রব চারদিকে, আমি ভয় পেয়ে ছুটতে যাব, শিকড়ে পা বেঁধে ধপাস। উপুড় হওয়া অবস্থাতেই মাথা উঁচু করেছি, দেখি নুপুর পরা হলুদ বরণ দুখানি পা। তার ওপরে লাল শাড়ির পাড়। মাথা যত উঁচু করি দেখি মাটির তৈরি প্রতিমা, তার কাঁখে বিড়াল, কোলে বিড়াল, পায়ের কাছে মাটির তৈরি ছোট ছোট বিড়াল। অবন ঠাকুরের ক্ষীরের পুতুল পড়া হয়ে গিয়েছিল তত দিন, মুহূর্তেই বুঝে গেলাম এ ষষ্ঠী, অনেকের বিশ্বাসে ইনি বিড়ালদের রক্ষাকর্ত্রী। কেউ কোত্থাও নেই, শুধু বেদম হাওয়ার শব্দ, গা ছমছমে ওই পরিবেশ থেকে পালাতে পারলে বাঁচি, প্রাণপণ দৌড় শুরু করবার আগে শুধু ধাঁ করে তুলে নিলাম একটি মাটির বেড়াল। আমি খেলব। খেলা মাথায় রইল। ঠাকুমা দেখে আমাকে এই মারে তো সেই মারে, কেন এনেছিস অমঙ্গুলে হতভাগী! বুড়ির নির্দেশে মুনিষ ছৈত্রলাল গিয়ে থানে ফিরিয়ে দিয়ে আসে সেই মাটির বেড়াল। 

পাই আসবার পর আমার ছোটবেলার না পাওয়া সেই স্বপ্ন যেন সাকার হলো। খালি বাড়িতে আমরা দুটি মানুষ ওকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে রইলাম। ওকে আমরা মা ছাড়া ডাকতাম না। ও আমাদের প্রতিটি ডাকে সাড়া দিত। দাদা-দিদিরা বাড়ি এলে খুশি হতো, কিন্তু জানত, এরা দুদিনের জন্য এসেছে, মা-বাবা ওকে ফেলে কোথাও যাবে না। সে ছিল এক দীর্ঘায়ু মার্জার, আর দুবছর বাঁচলে গিনেস বুকে তার নাম উঠে যেত হয়তো। মায়েরা যেমন অন্ধ বিশ্বাসে বাচ্চার কপালে কাজলের ফোঁটা দেয় খারাপ নজর প্রতিহত করবার জন্য, আমিও ফেসবুকে পাইয়ের ছবি দিলে তার বয়স লিখতাম উনিশ বছর। আসলে কিন্তু তখন সে ছিল বাইশ বছুরে। 

বাইশ-তেইশ বছর কি কোনো স্বপ্ন বেঁচে থাকে? তা সে যতই মধুর হোক না কেন? কিছুদিন হলো ভাবছিলাম এই বেশ আছি, কী দৌড়োদৌড়িই না করতে হয়েছে জীবনভর! ঘর আর বাহিরকে মেলাতে গিয়ে প্রাণ যায় যায়! এখন কোনো ঝামেলা নেই, আমাদের না-মানুষ কন্যাকে নিয়ে আমরা বেশ আছি। এখন সে-ও আর অত দুষ্টুমি করে না। দরজা খোলা থাকলেও বেরোয় না, ভেতরেই বসে অপেক্ষা করে, বাবা ঘরে ঢুকলে মেঝের ওপর আহ্লাদে সে কী গড়াগড়ি! আমি লিখতে বসলে গম্ভীর হয়ে আমার পাশে বসে থাকে! একটুও বিরক্ত করে না। এত বুদ্ধিমতী হয়েছে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে, কে কিসে বিরক্ত হবে, তা যেন ও বিলকুল বোঝে আর সেই কাজ করা থেকে বিরত থাকে। 

কিন্তু আস্তে আস্তে পাই একটু নির্জীব হয়ে যাচ্ছে, এটা সবারই নজরে পড়ছিল। খাচ্ছে কম, ঘুমোচ্ছে বেশি। বোঝাই যাচ্ছে বিছানা থেকে নামতে ওর কষ্ট হয়, তবু এত পরিচ্ছন্ন স্বভাব যে পটি করবার নির্দিষ্ট পাত্রে ও টলতে টলতে যাবেই। 

পঁচিশে ডিসেম্বর থেকে পয়লা জানুয়ারি এখানে বড্ড ধুম। বাজির পর বাজির ধুমধাড়াক্কা আওয়াজ, লোকে অনেক রাত অবধি জাগে, সামনের রাস্তায় বাইক আর গাড়ির প্রবল গর্জন, লোকের হর্ষধ্বনি, ডিজে গান। আমরা পাইয়ের শ্বাসকষ্ট কমাবার জন্য নেবুলাইজারের ব্যবস্থা করলাম। কিন্তু কাজ হলো না। ও বিছানায় বসে থাকত, আর মাথা ঘুরিয়ে রাখত আমাদের দিকে। চোখে কাতর মিনতি ফুটে উঠত, আমাকে ভালো করে দাও, মা! ও যেমন আমাদের কথা বুঝত, আমরাও ওর চোখের ভাষা কিছু কিছু বুঝতে পারতাম তো! কিন্তু হায়, মা-বাবার তো কোনো অলৌকিক ক্ষমতা নেই, এ কথা বাচ্চারা আর কবেই বা বুঝেছে!  

বাড়িতে পোর্টেবল এক্স-রে মেশিন আনা হলো, রিপোর্ট একদম ভালো। রোগ ওর শরীরে কোথায় থাবা বসিয়েছে, চিকিৎসকও বুঝতে পারলেন না। পয়লা জানুয়ারি সকালে ওকে সিরিঞ্জে করে চিকেন জুস খাইয়ে গদির ওপর বসিয়ে রেখেছি বারান্দায়। সোনালি রোদে ভেসে যাচ্ছে চারদিক। আমি রান্না করতে করতে বারবার এসে ওকে দেখে যাচ্ছি, হঠাৎ দেখি ও পটিপাত্রের দিকে হেঁটে যাচ্ছে, কিন্তু যেতে পারছে না, টলে টলে পড়ে যাচ্ছে, আমি চিৎকার করে ওর বাবাকে ডাকছি দেখে আবার গদিতে ফিরে গিয়ে ঘুরে পড়ে গেল। ওকে বিছানায় তুলে আনা হলে একটু পাক খেয়ে ঘুরে আবার পড়ে গেল, এবার শেষবারের মতো! বিস্ফারিত চোখ দুটি নিবদ্ধ রইল ওর বাবার দিকে, যাকে ও সবচেয়ে বেশি ভালোবাসত! আমার হাতের নিচে ছিল ওর হৃদয়, সবার জন্য মায়া-মমতায় ভরা সেই অতি প্রশস্ত হৃদয় যে কী করে ওই শরীরে এঁটে যেত, আমি জানি না! কিন্তু আমি স্পষ্ট টের পেলাম, স্পন্দন থেমে যাবার কিছুক্ষণ পরেও আবার অল্পক্ষণের জন্য সচল হয়ে উঠল ওর হৃদ্যন্ত্র, হয়তো প্রবল ইচ্ছাশক্তির জোরে, হয়তো বাঁচার অদম্য আকাক্সক্ষায়! ধুকপুক, ধুকপুক, ধুক পুক, ধু-ক!

সব স্বপ্ন সত্যি হয় না, কোনো স্বপ্নই চিরস্থায়ী হয় না। আমার একটি স্বপ্ন কিন্তু ব্যতিক্রমী। আমি চেয়েছিলাম, পাই আমাদের কাছাকাছি থাকুক, ও আমাদের ছাড়া থাকতে পারে না যে। এই বাড়িটার পেছনে অল্প একটু জমি ছিল। হতচ্ছাড়া প্রোমোটার সেখানে এমন রাবিশ ফেলেছিল, খুঁড়লে শুধু বালু-পাথর-লোহার টুকরো উঠে আসত। আমার একটু বাগানের শখ, তাই নিজের হাতে বিশ বছর ধরে খুঁড়ে চলেছি ওই রাবিশ। তার ওপর সবজির খোসা, নার্সারির মাটি, গোবর সার ঢালতে ঢালতে বছর পাঁচেক হলো একটু টপ সয়েল তৈরি হয়েছে। একটি জামরুলগাছ, একটি তেজপাতাগাছ বেশ বড় হয়েছে। 

পাইকে আমরা খুব যত করে বেতের ট্রেতে শুইয়ে ওই তেজপাতাগাছের ছায়ায় মাটির নিচে রেখে দিয়েছি। জাপটেজুপটে আদর করার সময় ওর গা থেকে খুব সুগন্ধ বেরোত, তাই তেজপাতার সুগন্ধি হাওয়া ওর জন্য রইল! 

নটেগাছটি এখানেই মুড়নো যেত, কিন্তু বেত্তমিজ মানুষের হৃদয়হীনতার কথা না লিখলে পাইয়ের কাহিনি পূর্ণতা পাবে না। ও বেঁচে থাকতে আমি ফেসবুকে বেড়ালের একটি গ্রুপে ওর হাসিখুশি ছবি শেয়ার করে লিখেছিলাম, ওর বয়স উনিশ। কমিয়ে লিখতাম, তার কারণটা আগেই বলেছি। পাই চলে যাবার পর মৃত্যুসংবাদ দিয়ে লিখেছিলাম, তেইশ বছরের পাইয়ের মৃত্যুতে পশুচিকিৎসক খেদোক্তি করেছেন যে আজ হয়তো এই শহরের সবচেয়ে বেশি বয়সী মার্জারটি চলে গেল। তারপরই দেখি একটি হা হা ইমোজি আমার পুরোনো পোস্টটিকে ভাসিয়ে তুলেছে। যেন চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া, দ্যাখো এই বাচ্চাটির মা কত মিথ্যেবাদী, আগে বয়স লিখেছিল উনিশ, মরার পরেই তা হয়ে গেল তেইশ! এই ছলনাটুকুর মধ্যে মাতৃহৃদয়ে কত অপারগতা লুকিয়ে আছে, তা বোঝে কে! ব্যক্তিটি কে, আমি আর খুঁজে দেখতে যাইনি! একটা এই রকম জটিল পৃথিবীতে বাস করি, যেখানে অন্যের মুখ কালো করে দেওয়া ছাড়া আর কোনো প্রিয় সাধ নেই। তাই স্বপ্নে যাকে পেয়েছিলাম, তাকে স্বপ্ন দিয়েই ঢেকে রেখেছি। দরজায় সে এসে ডাকে বলে মনে হয়। জানি তা স্বপ্ন, কিন্তু সে স্বপ্ন একান্তভাবে আমার, শুধু আমারই!


ছবি: লেখকের সৌজন্যে

Related Topics

টপ নিউজ

বিড়াল / পোষা বিড়াল / ইজেল / পোষা প্রাণী / পাই / আদরের বিড়াল / কুকুর

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ‘মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন’ থেকে বাতিল হল মুজিব বাহিনী, মুজাহিদ বাহিনীর নাম
  • তিক্ত লড়াইয়ে ট্রাম্প-মাস্ক: দুই ক্ষমতাধরের ‘ব্রোম্যান্স’ এখন অতীত, টালমাটাল ওয়াশিংটন
  • বিদেশি গণমাধ্যমে বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার রোধে সহায়তার প্রস্তাব চীনের
  • মাস্ক ‘বদ্ধ উন্মাদ' হয়ে গেছেন: ট্রাম্প; 'আমাকে ছাড়া ট্রাম্প জিততে পারতেন না': মাস্ক
  • জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে আমন্ত্রণ পাননি মোদি, ভারত-কানাডা সম্পর্কের টানাপোড়েনের প্রতিফলন
  • পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বন্যার ফলে যেভাবে সৃষ্টি হয়েছিল ভূমধ্যসাগর

Related News

  • ঋত্বিক ঘটকের কন্যা: এক অসমাপ্ত আলাপ
  • শোক হতে শ্লোক
  • আমার স্নিকার্স
  • আপনার প্রিয় পোষা প্রাণীর যত্নে কাজ করেন তারা
  • রং চলিষ্ণু, রঙ্গিলা প্রেমিক...

Most Read

1
বাংলাদেশ

‘মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন’ থেকে বাতিল হল মুজিব বাহিনী, মুজাহিদ বাহিনীর নাম

2
আন্তর্জাতিক

তিক্ত লড়াইয়ে ট্রাম্প-মাস্ক: দুই ক্ষমতাধরের ‘ব্রোম্যান্স’ এখন অতীত, টালমাটাল ওয়াশিংটন

3
বাংলাদেশ

বিদেশি গণমাধ্যমে বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার রোধে সহায়তার প্রস্তাব চীনের

4
আন্তর্জাতিক

মাস্ক ‘বদ্ধ উন্মাদ' হয়ে গেছেন: ট্রাম্প; 'আমাকে ছাড়া ট্রাম্প জিততে পারতেন না': মাস্ক

5
আন্তর্জাতিক

জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে আমন্ত্রণ পাননি মোদি, ভারত-কানাডা সম্পর্কের টানাপোড়েনের প্রতিফলন

6
আন্তর্জাতিক

পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বন্যার ফলে যেভাবে সৃষ্টি হয়েছিল ভূমধ্যসাগর

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net