‘ভাগ্যবান’ মাহমুদউল্লাহর হাতে উঠলো শিরোপা

দলে সুযোগ পেয়েছিলেন বিকল্প খেলোয়াড় হিসেবে। সেই সুমন খানই বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপের ফাইনালে হয়ে উঠলেন মাহমুদউল্লাহ একাদশের প্রধান বোলিং অস্ত্র। পুরো আসরে নিজের ছায়া হয়ে থাকা লিটন কুমার দাসও ব্যাট হাতে জ্বলে উঠলেন। তাতে নাজমুল একাদশ পাত্তাই পেল না ফাইনালে। লিগ পর্বের দুই হারের প্রতিশোধ নিয়ে প্রেসিডেন্টস কাপের শিরোপাও উচিয়ে ধরলো মাহমুদউল্লাহর দল।
বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপের ফাইনালে নাজমুল একাদশকে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে সেরার মুকুট জিতলো মাহমুদউল্লাহ একাদশ। অথচ ফাইনালে উঠতে অন্য দলের দিকে তাকিয়ে ছিল দলটি। 'ভাগ্যগুণে ফাইনালে উঠেছি' বলে মন্তব্য করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। লিগ পর্বে নাজমুল একাদশের বিপক্ষের দুই হারও চাপ বাড়াচ্ছিল। কিন্তু শিরোপার লড়াইয়ে কিছুই আর বাধা হলো না, মাহমুদউল্লাহর দল হয়ে উঠলো অপ্রতিরোধ্য।
রোববার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামে নাজমুল একাদশ। ম্যাচ সেরা সুমন খানের প্রতাপ পুরো ইনিংসজুড়ে সহ্য করতে হয়েছে তাদের। টুর্নামেন্টের সেরা ব্যাটসম্যান ইরফান শুক্কুরের ৭৫ রানের দারুণ ইনিংসের পরও ৪৭.১ ওভারে ১৭৩ রানে অলআউট হয়ে যায় নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
জবাবে শুরুটা ভালো না হলেও চাপ কাটিয়ে উঠতে সময় লাগেনি মাহমুদউল্লাহর দলের। মুমিনুল হক, মাহমুদুল হাসান জয় দ্রুত ফিরে গেলেও নিজেকে ফিরে পাওয়া লিটন কুমার দাস দলকে পথ দেখাতে থাকেন। পরে যোগ দেন ইমরুল কায়েস। এই দুই ব্যাটসম্যানের ব্যাটেই জয় নিশ্চিত হয়ে যায় তাদের। মাহমুদউল্লাহর দল ম্যাচ জিতে নেয় ২৯.৪ ওভারেই।
লক্ষ্য খুব একটা বড় ছিল না, ৫০ ওভারে ১৭৪ রান। তবু ধীর-স্থির শুরু করেনি মাহমুদউল্লাহর দলের দুই ওপেনার লিটন কুমার দাস ও মুমিনুল হক। যদিও উদ্বোধনী জুটি দীর্ঘ হয়নি। দলীয় ১৮ রানে বিদায় নেন মুমিনুল হক। এরপর মাহমুদুল হাসান জয়কে নিয়ে এগোতে থাকেন লিটন দাস। মাহমুদুল দেখেশুনে খেললেও লিটন ওয়ানডে মেজাজেই ব্যাট চালাতে থাকেন।
এই জুটি থেকে ৪৮ রান পায় মাহমুদউল্লাহ একাদশ। দলীয় ৬৬ রানে নাসুম আহমেদের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে সাজঘরে ফেরেন মাহমুদুল। এরআগে ১৮ রান করেন বাংলাদেশের বিশ্বজয়ী যুব দলের এই সদস্য। অসাধারণ এক ইনিংস খেলা লিটন সঙ্গী হিসেবে পান ইমরুল কায়েসকে। এরপর আর বিপদে পড়তে হয়নি মাহমুদউল্লাহ একাদশকে।
লিটন-ইমরুল ৬৩ রানের জুটি গড়ে তোলেন। এই জুটিতে ১২৯ রানে পৌঁছে যায় মাহমুদউল্লাহর দল। লিটনের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। ফেরার আগে ৬৯ বলে ১০টি চারে ৬৮ রান করেন ডানহাতি এই ওপেনার। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে বাকি কাজটুকু সারেন ইমরুল। ৫৫ বলে একটি চার ও ৬টি ছক্কায় ৫৩ রানে অপরাজিত থাকেন ইমরুল। মাহমুদউল্লাহ করেন অপরাজিত ২৩ রান। নাজমুল একাদশের নাসুম আহমেদ ২টি ও আল আমিন হোসেন একটি উইকেট নেন।
এর আগে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা ভালো করতে পারেনি নাজমুল হোসেন শান্তর দল। দলীয় ৪ রানেই ওপেনার সাইফ হাসানের স্টাম্প ভাঙেন রুবেল হোসেন। ইনসাইড এজে স্টাম্পে বল আঘাত হানে। সৌম্য সরকারের সঙ্গে যোগ দিয়ে শুরুর ধাক্কা সামনে নেওয়ার চেষ্টা করেন অধিনায়ক শান্ত।
যদিও একটু পরই চোখের সমস্যার কারণে সৌম্য মাঠ ছাড়েন। টুর্নামেন্ট সেরা মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে এগোতে থাকেন শান্ত। তাদের জুটি দীর্ঘ হয়নি। দলীয় ৩৫ রানে বিদায় নেন মুশফিক। এরপর মাঠে ফেরেন পুরো টুর্নামেন্টে ব্যাট হাতে ব্যর্থ থাকা সৌম্য সরকার। ১৫তম ওভারে সব এলোমেলো করে দেন সুমন। এই ওভারে সৌম্য ও আফিফ হোসেনকে বিদায় করে দেন তিনি।
আগের ম্যাচগুলোয় নিজের ছায়া হয়ে থাকা শান্ত এদিন সাবলীল ছিলেন। অবশ্য তিনিও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। ৩২ রান করে মেহেদী হাসান মিরাজের শিকারে পরিণত হন শান্ত। এরপর ইরফান শুক্কুর ও তৌহিদ হৃদয় জুটি গড়েন। তাদের ৭০ রানের জুটিতে মূলত নাজমুল একাদশ লড়াইয়ের পুঁজি পায়। হৃদয় ২৬ রান করে বিদায় নেন।
বাকিটা পথ একাই লড়েছেন ধারাবাহিকভাবে রান করে আসা শুক্কুর। ৭৭ বলে ৮টি চার ও ২টি ছক্কায় ৭৫ রানের দারুণ একটি ইনিংস খেলেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। সুমন খান ৩৮ রান খরচায় ৫টি উইকেট নেন। টুর্নামেন্টের সেরা বোলার রুবেল হোসেন ২টি এবং এবাদত হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ একটি করে উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
নাজমুল একাদশ: ৪৭.১ ওভারে ১৭৩/১০ (শান্ত ৩৪, মুশফিক ১২, হৃদয় ২৬, শুক্কুর ৭৫; সুমন ৫/৩৮, রুবেল ২/২৭, মিরাজ ১/৩৯, মাহমুদউল্লাহ ১/২৮)।
মাহমুদউল্লাহ একাদশ: ২৯.৪ ওভারে ১৭৭/৩ (লিটন ৬৮, মাহমুদুল ১৮, ইমরুল ৫৩*, মাহমুদউল্লাহ ২৩*; নাসুম ২/৪৮)।
ফল: মাহমুদউল্লাহ একাদশ ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: সুমন খান (মাহমুদউল্লাহ একাদশ)
ম্যাচের সেরা বোলার: সুমন খান (মাহমুদউল্লাহ একাদশ)
ম্যাচের সেরা ব্যাটসম্যান: ইরফান শুক্কুর (নাজমুল একাদশ)
ম্যাচের সেরা বোলার: সুমন খান (মাহমুদউল্লাহ একাদশ)
ম্যাচের সেরা ফিল্ডার: নুরুল হাসান সোহান (মাহমুদউল্লাহ একাদশ)
সিরিজ সেরা: মুশফিকুর রহিম (নাজমুল একাদশ)
টুর্নামেন্ট সেরা ব্যাটসম্যান: ইরফান শুক্কুর (নাজমুল একাদশ)
টুর্নামেন্ট সেরা বোলার: রুবেল হোসেন (মাহমুদউল্লাহ একাদশ)
টুর্নামেন্ট সেরা ফিল্ডার: নুরুল হাসান সোহান (মাহমুদউল্লাহ একাদশ)
কামব্যাক অব দ্য টুর্নামেন্ট: তাসকিন আহমেদ (নাজমুল একাদশ)
সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়: রিশাদ আহমেদ (নাজমুল একাদশ)