রুশ অগ্রগতির ফলে যুক্তরাষ্ট্রের শঙ্কা ইউক্রেন যুদ্ধ ভয়াবহ পর্যায়ের দিকে যাচ্ছে

মার্কিন সামরিক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা সিদ্ধান্তে এসেছেন, ইউক্রেনে যুদ্ধ এখন আর অচলাবস্থা নয়। বরং যুদ্ধে রাশিয়া ধীরে ধীরে অগ্রগতি করছে। এতে, কিয়েভ ও ওয়াশিংটনের মধ্যে হতাশার অনুভূতি বাড়ছে।
মনোবল কমে যাওয়া এবং মার্কিন সহায়তা অব্যাহত থাকবে কি-না, সে বিষয়ে প্রশ্ন ইউক্রেনের যুদ্ধ প্রচেষ্টার জন্য নিজস্ব হুমকি তৈরি করছে। ইউক্রেন পূর্বাঞ্চলে জমি হারাচ্ছে এবং তাদের বাহিনী রাশিয়ার অভ্যন্তরে আংশিকভাবে পিছিয়ে পড়েছে।
ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনী সৈনিক নিয়োগ এবং নতুন ইউনিট গঠন করতে সংগ্রাম করছে। সংঘাতে নিহত ইউক্রেনীয় সৈনিকের সংখ্যা প্রায় ৫৭ হাজার। এর তুলনায় রাশিয়ার ক্ষতি প্রায় অর্ধেক।
পশ্চিমা কর্মকর্তারা এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, রাশিয়ারও সৈন্য ও সরঞ্জামের অভাব বাড়ছে। এবং যুদ্ধের মধ্যে অগ্রগতির জন্য তাদের অনেক খরচ করতে হয়েছে।
মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, যদি আগামী গ্রীষ্মের আগে ইউক্রেন শক্তিশালী মার্কিন সমর্থন পায়, তবে কিয়েভ রুশদের দুর্বলতাসহ প্রত্যাশিত সৈন্য ও ট্যাংকের ঘাটতির সুবিধা নেওয়ার সুযোগ পেতে পারে।
এই গ্রীষ্মে মার্কিন সরকারের বিশ্লেষকরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন, রাশিয়া আগামী মাসগুলোতে ইউক্রেনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করতে পারবে না। কারণ হিসেবে কর্মকর্তারা বলেছিলেন, রুশ বাহিনীর প্রশিক্ষণ কম থাকায় তারা ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছে। কিন্তু সেই মূল্যায়ন ভুল প্রমাণিত হয়েছে।
রুশ সেনাবাহিনী পূর্ব ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলে অগ্রসর হয়েছে। তারা এই বছরে কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনীয় বাহিনীর দখল করা জমির এক তৃতীয়াংশেরও বেশি পুনরুদ্ধার করেছে। ইউক্রেনে রুশ ড্রোন হামলার সংখ্যা জুলাইতে ৩৫০ থেকে আগস্টে ৭৫০ এবং সেপ্টেম্বরের মধ্যে ১ হাজার ৫০০ তে পৌঁছেছে।
কুরস্কের কাছে সীমান্তে দায়িত্বে থাকা একজন ইউক্রেনীয় মেজর বলেন, "পরিস্থিতি সুবিধার নয়।" তিনি বলেন, "আমরা ক্রমাগত আগের দখল করা অবস্থান হারাচ্ছি। প্রতিপক্ষ সৈন্য ও গোলা-বারুদের পরিমাণের দিক দিয়ে আমাদের থেকে এগিয়ে আছে। আমরা লাইন ধরে রাখার চেষ্টা করছি।"
২০২২ সালে ইউক্রেনে আক্রমণ শুরু করার পর রুশ বাহিনী যেভাবে বারবার ব্যর্থ হয়েছিল, সেই পরিস্থিতি এখন আর নেই। একজন জ্যেষ্ঠ মার্কিন সামরিক কর্মকর্তার মতে, রুশ সামরিক বাহিনী উন্নতি করেছে এবং "অগ্রসর হচ্ছে।"
কিয়েভ তিন বছরের যুদ্ধের ফলে ক্লান্ত বাহিনী গড়ে তোলার উপায় খুঁজে বের করার মাঝেই কিছু মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এবং কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তা ইউক্রেনের রুশ অগ্রগতি থামানোর সক্ষমতা নিয়ে আশাবাদী।
তবে রাশিয়া নিজের লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। বিশেষ করে, এটি ইউক্রেনীয় বাহিনীর অন্যতম লজিস্টিক্স কেন্দ্র পোকরভস্ক শহর দখল করতে পারেনি। স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী বছর রাশিয়া রাডার, সাঁজোয়া যান এবং সৈন্য ঘাটতির মুখোমুখি হবে।
তবে ইউক্রেনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উন্নতি যুদ্ধক্ষেত্রে নয় বরং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভোটের বাক্সে আসবে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ভবিষ্যতে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থনের ব্যাপারে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্রুত রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তার রানিং মেট সিনেটর জেডি ভ্যান্স একটি শান্তি পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন, যেটির সাথে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রস্তাবিত পরিকল্পনার খুব মিল রয়েছে।
অন্যদিকে, কমলা হ্যারিস লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, যদি রাশিয়াকে ইউক্রেনে থামানো না যায়, তাহলে রুশ বাহিনী ন্যাটোকে আক্রমণ করতে পারে।
আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবং এর অজানা ফলাফল ইউক্রেনীয়দের ওপর ভারী প্রভাব ফেলছে। গত সপ্তাহে কিয়েভে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে একটি বৈঠকের পর মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, ইউক্রেনের নেতা ক্লান্ত এবং চাপের মধ্যে রয়েছেন। তার বাহিনীর যুদ্ধক্ষেত্রের পিছিয়ে পড়া এবং মার্কিন নির্বাচনের কারণে তিনি উদ্বিগ্ন।
গত সপ্তাহে ইউক্রেনে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন বলেন, "এটি খুব কঠিন একটি যুদ্ধ এবং এটি খুব কঠিন একটি পরিস্থিতি।"
ইউক্রেনে রুশ অভিযানের মুখে মনোবল ক্ষয় হচ্ছে এবং পশ্চিমা সমর্থন ও সরবরাহের প্রবাহ শেষ হয়ে যাওয়ার ভয় রয়েছে।
২০৬ তম টেরিটোরিয়াল ডিফেন্স ব্যাটালিয়নের কমান্ডার সিনিয়র লেফটেন্যান্ট ইয়েভহেন স্ট্রোকান বলেন, "ফ্রন্টলাইনে পরিস্থিতি এখন খুব কঠিন। সবকিছুর অভাব, লোকের সংখ্যা কম, রুশ সৈন্যের সংখ্যা বেশি এবং তাদের কাছে অস্ত্রও বেশি।"
এই হতাশা পশ্চিমের রাজধানীগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে।
আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের স্কলার ফ্রেডেরিক ডব্লিউ. কাগান বলেন, "সবাই একসঙ্গে খারাপ অনুভব করছে। এটি একটি দীর্ঘ, কঠিন বছর এবং রুশরা এখনও অগ্রসর হচ্ছে।"
কিন্তু ড. কাগান বলেন, নিজেদের বিজয়কে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতোই অনিবার্য বলে প্রচারণা চালাচ্ছে রুশরা। তিনি বলেন, "রুশরা আপনাকে বিশ্বাস করাতে চাইবে, বর্তমান পরিস্থিতি ১৯৪৪ সালের পূর্ব ফ্রন্টলাইনের মতোই। কিন্তু পরিস্থিতি এমনটি নয়।"

ইউক্রেনের বিভিন্ন সংকট
এই বছরের শুরুতে ইউক্রেনীয় সেনারা মার্কিন সহায়তা অনুমোদন দেরি হওয়ায় গোলাবারুদ সরবরাহের অভাবে সংগ্রাম করছিল।
এপ্রিল মাসে কংগ্রেস যখন আরো সহায়তা অনুমোদন দেয়, তখনও ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা অভিযোগ করে বলেন, অস্ত্র প্রবাহ খুব ধীর গতিতে হচ্ছে। ফলে, ফ্রন্টলাইনে [সম্মুখ সারি] অস্ত্র পুনঃসরবরাহ করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
এই সপ্তাহে জেলেন্সকি বলেন, "এটি যুদ্ধের নিয়ম। কারণ আপনাকে খুব নির্দিষ্ট জিনিসের ওপর নির্ভর করতে হবে এবং সেটিও খুব নির্দিষ্ট সময়ে। নাহলে আপনি এই পরিস্থিতি পরিচালনা করতে পারবেন না। আপনি নিজেদের লোকদের সুরক্ষিত করতে পারবেন না, আপনি শীতের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারবেন না।"
মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান এবং জেলেনস্কির একজন শীর্ষ উপদেষ্টা আন্দ্রি ইয়েরমাক ওয়াশিংটনে দুই ঘণ্টা বৈঠক করেন। তারা বছর শেষের আগে ইউক্রেনের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, সাঁজোয়া যান এবং আকাশ প্রতিরক্ষার জন্য জরুরি গোলাবারুদ দ্রুত সরবরাহের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন।
কিন্তু মার্কিন সামরিক কর্মকর্তাদের মতে, অস্ত্রের সরবরাহ এখন আর ইউক্রেনের প্রধান অসুবিধা নয়।
মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, ইউক্রেন রাশিয়ার অস্ত্রশস্ত্রের সুবিধা মারাত্মকভাবে সংকীর্ণ করে ফেলেছে এবং ইউক্রেনীয় সৈন্যরা বিস্ফোরক ড্রোন ব্যবহার করে রুশ সাঁজোয়া যানগুলোকে ধ্বংস করেছে।
তারা বলছেন, এখন ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় সমস্যা সৈন্যের অভাব।
ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা পর্যাপ্ত সৈন্য আনার জন্য একটি সামরিক খসড়া বাস্তবায়নে সংগ্রাম করছেন। দেশটি সৈন্য নিয়োগের নির্ধারিত বয়স কমানোর বিষয়ে দ্বিধায় আছে। পাশাপাশি, দেশের জনসংখ্যার ওপর এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়েও উদ্বিগ্ন।
একজন ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা বলেছেন, সৈন্যদের অভাব মোকাবেলায় ইউক্রেন সীমিতভাবে একটি "গণতান্ত্রিক এবং পরিমিত" প্রতিক্রিয়া প্রদানের চেষ্টা করছে কিন্তু এর ফলে ইউক্রেনের সৈন্য সংখ্যা কম।
ইউক্রেন ইলেকট্রনিক উপায়ে, যেমন মোবাইল নম্বর, ই-মেইল এবং অন্যান্য মাধ্যম ব্যবহার করে অতিরিক্ত লোককে সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে নিবন্ধন করাচ্ছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। তারা আরও বলেছেন, তারা আরও জোরপূর্বক উপায়ও ব্যবহার করছে। যেমন, কনসার্ট হল থেকে লোকদের টেনে নিয়ে আসা হচ্ছে যাতে খসড়ার জন্য যোগ্য লোকদের খুঁজে পাওয়া যায় এবং তালিকাভুক্ত করা যায়।
যদিও অনেকেই দেশপ্রেমের জন্য সামরিক বাহিনীতে যোগ দিয়েছেন, তবে যথেষ্ট লোক যোগ দিচ্ছে না। এবং ইউক্রেনের সৈন্যদের যুদ্ধের সময়ে কোনও প্রকৃত বিরতি না দেওয়ার ফলে অনেক লোকজন উৎসাহ হারাচ্ছেন।
পেন্টাগনের এক কর্মকর্তা মূল্যায়ন করে বলেছেন, ইউক্রেনের কাছে ছয় থেকে বারো মাস যুদ্ধ করার জন্য যথেষ্ট সৈন্য আছে। তারপরে তিনি বলেন, ইউক্রেন একটি কঠিন ঘাটতির সম্মুখীন হবে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইউক্রেন তাদের নতুন কিছু ব্রিগেডকে কুরস্ক অঞ্চলে অভিযানে পাঠিয়েছে। মূলত এই ব্রিগেডগুলো পূর্ব ও দক্ষিণ ইউক্রেন রক্ষা বা ২০২৫ সালের পরিকল্পিত পালটা আক্রমণের জন্য সংরক্ষণে রাখা হয়েছিল।
মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী লয়েড অস্টিন ইউক্রেনের সৈন্য সংকটের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, নতুন সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং সামরিক শক্তি পুনর্গঠন করা এখন অত্যন্ত জরুরি।
কিয়েভে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সাথে সাক্ষাতে অস্টিন সৈন্য সংখ্যা পুনরুদ্ধার ও নিয়োগের গুরুত্বের ওপর জোর দেন এবং শীতকালীন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতির বিষয়ে আলোচনা করেন।
ইউক্রেনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে আলাদা বৈঠকে অস্টিন, ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ জেনারেল ক্রিস্টোফার জি. কাভোলি এবং অন্যান্য মার্কিন কমান্ডাররা শীতকালীন অভিযানের পরিকল্পনা এবং আগামী পাঁচ মাসে প্রেরণযোগ্য অস্ত্র ও গোলাবারুদের ধরণ নিয়ে আলোচনা করেন।
একটি জোরালো বক্তব্যে অস্টিন তাদের সমালোচনা নাকচ করে দেন, যারা মস্কোর শর্তে এই সংঘাতের অবসান চায়। তিনি বলেন, ইউক্রেনের পক্ষে যুদ্ধের গতি পাল্টানোর জন্য কোনো "যাদুকরী সমাধান" নেই।
তার মতে, ইউক্রেন কীভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং তারা কীভাবে কার্যকরভাবে মনোযোগ ধরে রাখে সেটিই আসল বিষয়। অস্টিন দৃঢ়ভাবে বলেন, "মস্কো কখনোই ইউক্রেনে বিজয়ী হবে না।"

অবিশ্বাস্য ক্ষতি
ইউক্রেনের জন্য একটি সম্ভাব্য সুযোগ হতে পারে, রাশিয়ার সাঁজোয়া যান কম থাকার বিষয়টি। রাশিয়া উন্নত ট্যাংকের ঘাটতি মেটাতে পুরোনো ট্যাংকের মজুদ ব্যবহার করলেও ইউক্রেনীয় ড্রোন পুরোনো সাঁজোয়া যানগুলোর অনেকগুলোই ধ্বংস করেছে।
ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কর্মকর্তারা বলছেন, রাশিয়াকে পূর্ব ইউক্রেনে অগ্রসর হতে ছোট ছোট পদাতিক ইউনিটের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। তবে তাদের মতে, অনেক যুদ্ধক্ষেত্রই এখন রুশ সেনাদের জন্য "মাংস পাঠানোর যন্ত্রে" পরিণত হয়েছে।
নতুন ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুত্তে সোমবার জানান, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ৬ লক্ষাধিক রুশ সেনা নিহত বা আহত হয়েছেন। এই ক্ষতির কারণে উত্তর কোরিয়া প্রায় ১০ হাজার সেনা রাশিয়ায় পাঠিয়েছে। তাদের ব্যবহার করে মস্কো ইউক্রেনকে কুরস্ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন।
এক শীর্ষ মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা এ সিদ্ধান্তকে "অপরিকল্পিত ও মরিয়া" বলে অভিহিত করেছেন।
অন্যদিকে কিছু পশ্চিমা কূটনীতিক মনে করেন, এটি মরিয়া সিদ্ধান্ত নয় বরং পশ্চিমকে ভীত করার একটি কৌশল।
মার্কিন কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন, রাশিয়া নতুন সৈন্য সংগ্রহ অব্যাহত রেখেছে এবং প্রতি মাসে ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার চুক্তিভিত্তিক নতুন সৈন্য যুক্ত করছে।
রাশিয়ার বর্তমান নিয়োগ কৌশল প্রচারণা চালিয়ে বলছে, ইউক্রেনের যুদ্ধ আসলে ন্যাটোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ। এটি নতুন সৈন্যদের প্রলুব্ধ করছে। পাশাপাশি, রাশিয়ায় সৈন্যদের জন্য বোনাসও বাড়ানো হয়েছে।
মার্কিন সামরিক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, এই কৌশলগুলোর মাধ্যমে পুতিনের জন্য রাজনৈতিকভাবে অজনপ্রিয় একটি সাধারণ খসড়া চালানোর প্রয়োজন নাও হতে পারে।
তবে রাশিয়ার সম্পদ সীমিত। ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার (আইএসডব্লিউ) রোববারের এক প্রতিবেদনে বলেছে, "এই খরচ চিরকাল বহন করতে পারবেন না পুতিন।"
রাশিয়ার ব্যাপক সেনা নিয়োগ অন্যান্য সমস্যার সৃষ্টি করেছে। সোমবার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে পুতিন শ্রমিক সংকটের কথা স্বীকার করেন। আইএসডব্লিউ বারবার উল্লেখ করেছে, শিল্প কারখানাগুলোর সেনাবাহিনীর সাথে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে কারণ সেনাবাহিনী এখন চাকরি প্রার্থীদের জন্য বড় বোনাস দিচ্ছে।
রাশিয়া ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়ালেও, তাদের প্রতিরক্ষা শিল্প [বিশেষ করে নতুন রাডার সিস্টেম তৈরিতে] সমস্যায় রয়েছে।
এ বছর রাশিয়ার অগ্রগতি সত্ত্বেও, ইউক্রেন মস্কোর কিছু বড় পরিকল্পনা ঠেকাতে সক্ষম হয়েছে। ইউক্রেন রাশিয়ার পোকরভস্ক আক্রমণ ব্যর্থ করেছে এবং শহরের দক্ষিণ-পশ্চিমে তাদের বাহিনী সরিয়ে দিয়েছে।
৩০ বছর বয়সী ইউক্রেনীয় ব্যাটালিয়ন কমান্ডার ওলেক্সান্ডার শিরশিন বলেন, "এখন মনে হচ্ছে আমাদের মিত্ররা যুদ্ধের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে এবং ন্যায়বিচারের চেয়ে মস্কোর সাথে সম্পর্কের প্রতি বেশি মনোযোগী।"
তবে, তা সত্ত্বেও অনেক ইউক্রেনীয় হাল ছাড়ছেন না। শিরশিন বলেন, "লড়াই করা আমাদের একমাত্র উপায়।"
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়