ভারত সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করায় পাকিস্তানের ওপর যে প্রভাব পড়বে

কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছে ভারত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে নিরাপত্তা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির (সিসিএস) বৈঠকের পর নয়াদিল্লি জানিয়েছে, সিন্ধু পানি চুক্তি অবিলম্বে স্থগিত করা হয়েছে।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) ভারত সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পাকিস্তান আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস দমন না করা পর্যন্ত চুক্তিটি কার্যকর থাকবে না। একইসঙ্গে আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক মুহূর্ত হতে পারে।
৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে, যুদ্ধ ও কূটনৈতিক বিপর্যয়ের মধ্যেও চুক্তিটি টিকে ছিল। ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের অনেক কিছুই অনিশ্চিত হলেও, পানি ছিল একমাত্র নিশ্চিত বিষয়। কিন্তু এখন সেটি আর তেমন নেই।
এই সিদ্ধান্ত সম্ভবত দুটি দেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভিন্ন সম্পদ, অর্থাৎ পানির ব্যবস্থাপনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। আগামী দিনগুলোতে হঠাৎ পানি বন্ধ হওয়াই মূল হুমকি নয়। বরং এমন একটি পানি সরবরাহ ব্যবস্থার নির্ভরযোগ্যতা কমে যাওয়া, যা প্রতি দিন লাখ লাখ মানুষ ব্যবহার করে।
চুক্তিটি যেভাবে কাজ করে
১৯৬০ সালে বহু বছরের আলোচনা শেষে, বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় সিন্ধু পানি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এটি বিশ্বের অন্যতম স্থিতিশীল আন্তঃসীমান্ত পানি চুক্তি হিসেবে পরিচিত।
এই চুক্তি সিন্ধু নদী অববাহিকার ছয়টি নদী দুটি দেশের মধ্যে ভাগ করে দেয়। ভারত তিনটি পূর্বাঞ্চলীয় নদী (রবি, বিয়াস এবং সুতলজ) পেয়েছিল। পাকিস্তান তিনটি পশ্চিমাঞ্চলীয় নদী (সিন্ধু, ঝিলম, এবং চেনাব) পেয়েছিল, যা ভাগ করা অববাহিকার প্রায় ৮০ শতাংশ পানি সরবরাহ করে।
চুক্তির অংশ হিসেবে, ভারত পশ্চিমাঞ্চলীয় নদীগুলো জলবিদ্যুৎ উৎপাদন এবং সীমিত সেচের জন্য ব্যবহার করতে পারবে। তবে এগুলোর প্রবাহ সংরক্ষণ বা পরিবর্তন করে নিম্নগামী এলাকায় পানি সরবরাহে সমস্যা তৈরি করতে পারবে না। এই বিধিনিষেধগুলো স্পষ্ট এবং কার্যকর, যা ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন ও নোটিফিকেশন পদ্ধতির মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়। পাকিস্তানের জন্য এই কাঠামো শুধু পানি নয়, বরং সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা গড়ার জন্য প্রয়োজনীয় নিশ্চয়তা প্রদান করে।
চুক্তিটি সহযোগিতা এবং বিরোধ নিরসনের জন্য একটি স্থায়ী ব্যবস্থা প্রদান করে। একটি স্থায়ী সিন্ধু কমিশন রয়েছে, যেখানে প্রতিটি দেশ থেকে একজন কমিশনার থাকে। তাদের কাজ হলো তথ্য বিনিময়, নতুন প্রকল্প পর্যালোচনা এবং নিয়মিত বৈঠক করা।
বিরোধ নিরসনের জন্য একটি স্তরভিত্তিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়: প্রযুক্তিগত প্রশ্ন প্রথমে কমিশনে পাঠানো হয়। যদি সমাধান না হয় তবে একটি নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠানো হয়। আইনগত বিরোধগুলো আন্তর্জাতিক আর্বিট্রেশন আদালতে পাঠানো যেতে পারে, যেখানে বিশ্বব্যাংক উভয় ফোরামে ভূমিকা পালন করে।
এই প্রক্রিয়া আগে ভারতীয় বাগলিহার এবং কিশাণগঙ্গা বাঁধ নিয়ে বিরোধ সমাধানে ব্যবহার করা হয়েছে। একপাক্ষিক পদক্ষেপ প্রতিরোধ করতে এটি তৈরি করা হয়েছে। চুক্তির কোনো মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ নেই এবং এটি স্থগিত করার কোনো বিধানও নেই। চুক্তির আর্টিকেল ১২-তে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, এটি শুধু পারস্পরিক সম্মতির মাধ্যমে সংশোধন করা যাবে, যা কখনোই হয়নি।
জলবিজ্ঞানের বাস্তবতা
এই ধরনের পরিস্থিতিতে একটি সাধারণ প্রশ্ন হলো, ভারত কি পাকিস্তানে পানি প্রবাহ বন্ধ করতে পারবে? সংক্ষিপ্ত উত্তর হলো, না। বিশেষ করে উচ্চ পান প্রবাহের মৌসুমে পানি প্রবাহে কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে পারবে না।
সিন্ধু, ঝিলম, এবং চেনাব নদী খুব বড়। মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, যখন তুষার গলে, এই নদীগুলোতে কোটি কোটি কিউবিক মিটার পানি প্রবাহিত হয়। ভারতে এই নদীগুলোর ওপরে কিছু অবকাঠামো রয়েছে, যেমন বাগলিহার এবং কিশাণগঙ্গা বাঁধ। তবে এগুলো এই ধরনের পানি ধারণ করার জন্য ডিজাইন করা হয়নি।
এগুলো হলো নদীর প্রবাহভিত্তিক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, যার পানির মজুত খুবই সীমিত। এমনকি যদি ভারত তার সব বাঁধ থেকে পানি ছাড়ার সময় সমন্বয় করে, তবুও কেবল প্রবাহের সময়সূচি কিছুটা বদলাতে পারবে।
পশ্চিমাঞ্চলীয় নদীগুলোর উচ্চ প্রবাহের সময়, সেগুলোর প্রবাহ পরিবর্তন করা খুবই কঠিন। এতে ভারতের নিজস্ব উঁচু অঞ্চলে বন্যা হতে পারে। ভারত ইতোমধ্যে চুক্তির আওতায় পূর্বাঞ্চলীয় নদীগুলোর বেশিরভাগ প্রবাহ ব্যবহার করছে। তাই নতুন কোনো পদক্ষেপ তার প্রবাহের প্রভাব সীমিত করবে।
তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো শুষ্ক মৌসুমে। তখন নদীগুলোর প্রবাহ কম থাকে, পানির সংরক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং সময়মতো পানি সরবরাহ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। চুক্তির বিধিনিষেধের অনুপস্থিতি এখানে বেশি অনুভূত হতে পারে।
মধ্যম থেকে দীর্ঘমেয়াদে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। যদি ভারত চুক্তি উপেক্ষা করে কিছু পদক্ষেপ নেয়, তবে তা পাকিস্তানে প্রবাহের সময় ও পরিমাণের ওপর বেশি নিয়ন্ত্রণ এনে দিতে পারে। তবে এ ধরনের বড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে বছরের পর বছর সময় লাগবে। ভারতীয় কাশ্মীরে বড় ধরনের পানি সংরক্ষণ প্রকল্পের স্থান কম এবং তা নির্মাণে অনেক প্রযুক্তিগত বাধা থাকবে। এর আর্থিক খরচও অনেক হবে এবং রাজনৈতিক ঝুঁকিও থাকবে।
পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে বলছে, ভারতের পক্ষ থেকে পশ্চিমাঞ্চলীয় নদীগুলোর ওপর বড় সংরক্ষণ প্রকল্প তৈরি করা যুদ্ধের মতো এক পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য হবে। আজকের যুগে স্যাটেলাইটের সাহায্যে এসব কাঠামো অদৃশ্য রাখা সম্ভব নয়। এগুলো রাজনৈতিকভাবে এবং সম্ভবত সামরিকভাবে বিরোধিতার মুখে পড়বে।
এছাড়া জলবিজ্ঞান-সম্পর্কিত সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। যেমন চেনাব বা ঝিলাম নদীতে প্রবাহ থামালে ভারতেই বন্যা হতে পারে। আর সিন্ধু অববাহিকা থেকে পানি পুরোপুরি অন্য জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অনেক বড় কাঠামো এবং শক্তি খরচের প্রয়োজন হবে, যেটিকে শান্তিপূর্ণ অবস্থাতেও যৌক্তিক বলা কঠিন।
চুক্তির বাইরে, ভারতের জন্য সম্মান হারানোর এবং কৌশলগত ঝুঁকি রয়েছে। ভারত নিজেও ব্রহ্মপুত্র ও অন্যান্য নদীর নিচের দিকের দেশ, যেগুলো চীন থেকে শুরু হয়। এই (অধিকাংশ সময় অবহেলিত) বাস্তবতা ভারতের নদীর পানি ব্যবহারে নিচের দিকের দেশগুলোর অধিকার সম্মান করতে সাহায্য করেছে।
চুক্তি স্থগিত করে এবং একপাক্ষিক পদক্ষেপ নিয়ে ভারত একটি উদাহরণ তৈরি করেছে, যা একদিন তার বিরুদ্ধে ব্যবহার হতে পারে। এটি বিনা খরচের পদক্ষেপ নয় এবং ভারতের আন্তর্জাতিক আলোচনায় নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টাকে জটিল করে তুলতে পারে।
পাকিস্তানের জন্য সম্ভাব্য পরিণতি
ভারতের পক্ষ থেকে বাধা আসার শারীরিক এবং রাজনৈতিক সীমাবদ্ধতা বাস্তব হলেও, চুক্তির সুরক্ষা কমে যাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। এটি এমন নয় যে আগামীকাল থেকে পানি আসা বন্ধ হবে। কিন্তু এই সিস্টেমটি কখনোই অনিশ্চয়তার জন্য তৈরি হয়নি। সিন্ধু, ঝিলাম এবং চেনাব নদীগুলোর প্রবাহ পাকিস্তানের কৃষি, শহর এবং জ্বালানি ব্যবস্থার মূল। এই মুহূর্তে, পাকিস্তানের জন্য এই পানির কোনো বিকল্প নেই।
পাকিস্তানে ভারতের এই বাধা (যদি ঘটে) ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। পাকিস্তানের সেচ ব্যবস্থা বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম। এবং এটি প্রায় সম্পূর্ণভাবে পশ্চিমাঞ্চলীয় নদীগুলোর নিশ্চিত প্রবাহের ওপর নির্ভর করে।
কৃষকরা তাদের চাষের সময় এসব প্রবাহের ওপর ভিত্তি করে পরিকল্পনা করেন। খালগুলোর সময়সূচি এমনভাবে তৈরি করা হয় যা বহু দশক ধরে চলে এসেছে। যদি এই ছন্দটিতে সামান্যও পরিবর্তন আসে, তবে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করবে।
সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হচ্ছে নিশ্চয়তা হারানো। যদি পাকিস্তানে প্রবাহিত মোট পানি পরিবর্তিত না হয়, তবুও পানি আসার সময়ের ছোট পরিবর্তন বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে। গম রোপণের সময় যদি পানি আসতে দেরি হয় বা শীতকালে প্রবাহ কমে যায়, তবে রোপণের সময় কমে আসতে পারে, ফলন কমতে পারে এবং খরচ বাড়তে পারে।
সিন্ধু অববাহিকা ইতোমধ্যে কমছে, কারণ তাজা পানির প্রবাহ কমে গেছে। ওপরের দিকে পানি প্রবাহে আরও অনিশ্চয়তা থাকলে, এই অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে, যা উপকূলীয় মানুষের জীবনযাত্রা এবং মৎস্যজীবীদের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
নদীর প্রবাহের সময় বা পরিমাণে কোনো পরিবর্তন হলে, পাকিস্তান সরকারকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে পানি বণ্টনের ব্যাপারে। এর ফলে পাঞ্জাব ও সিন্ধের মধ্যে পানিবণ্টন নিয়ে উত্তেজনা বাড়তে পারে, যেখানে ইতোমধ্যে রাজনৈতিক চাপ রয়েছে।
এছাড়া, পাকিস্তানের তৃতীয়াংশ বিদ্যুৎ আসে জলবিদ্যুৎ থেকে, যা তারবেলা, মংলা এবং অন্যান্য জলাধারের পানি দিয়ে তৈরি হয়। যদি ওপরের দিকে পানি প্রবাহ কমে বা ভুল সময়ে আসে, তবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রভাব পড়তে পারে। এটি কোনো কল্পনা নয়। পাকিস্তান ইতোমধ্যে পানির সংকটে রয়েছে, একটি সিস্টেম যা অনেকদিন ধরে কম পানির ব্যবস্থাপনায় চলছে। এখন সেটি নতুন ধরনের অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হচ্ছে।
ঐতিহাসিক পটভূমি
ভারতের ঘোষণা আকস্মিক ছিল না। সিন্ধু পানি চুক্তি দীর্ঘদিন ধরে স্থিতিশীলতার জন্য প্রশংসিত হলেও, গত এক দশকে চাপ বেড়েছে।
২০১৩ সালে একটি আন্তর্জাতিক আদালত পাকিস্তানের পক্ষে রায় দেয়। এতে বলা হয়, ভারতকে কিশাণগঙ্গা প্রকল্পের (যা ঝিলম নদীর ওপরে) নিচে পরিবেশগত প্রবাহ মুক্ত করতে হবে এবং জলাধারের পানি কমানোর সীমা কঠোরভাবে বজায় রাখতে হবে। এই সাফল্য চুক্তির জটিল প্রকৌশল-সংক্রান্ত বিরোধ সমাধানের ক্ষমতা প্রমাণ করেছে।
কিন্তু ২০১৬ সালের উরি হামলার পর পরিস্থিতি পরিবর্তন হতে শুরু করে। ভারত নিয়মিত সহযোগিতা স্থগিত করে, বিলম্বিত বাঁধ প্রকল্পগুলো দ্রুত শুরু করে এবং পানি নিয়ে নিরাপত্তার বৃহত্তর বিষয়গুলোকে যুক্ত করে। তবুও, ভারত তখন বলেছিল যে তারা চুক্তির মধ্যে থেকেই কাজ করবে।
২০২৩ সালে ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে আর্টিকেল ১২(৩) প্রয়োগ করে, যা চুক্তি শুধু পারস্পরিক সম্মতিতে পরিবর্তন করতে দেয়, এবং তারা পুনরায় আলোচনা চেয়েছিল। তারা জলবায়ু পরিবর্তন, জাতীয় উন্নয়ন এবং পাকিস্তানের বাধার কথা উল্লেখ করে। কিন্তু পাকিস্তান আলোচনার জন্য সম্মতি দেয়নি।
এরপরের মাসগুলোতে, দুই দেশই তাদের নিজ নিজ আইনগত কৌশল অব্যাহত রেখেছে। ভারত এক নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞকে বাঁধ ডিজাইনের বিষয়গুলো পর্যালোচনা করার জন্য নিয়োগ করেছিল; পাকিস্তান আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা চালিয়ে গেছে। ২০২৫ সালের শুরুতে দুটি প্রক্রিয়া একসাথে চালু ছিল, যা চুক্তির আগে কখনোই ভাবা হয়নি।
ভারতের সাম্প্রতিক ঘোষণা একটি দীর্ঘ এবং উত্তেজনাপূর্ণ পথচলার শেষ। ১৯৬০ সালের পর প্রথমবারের মতো, একটি দেশ কার্যত চুক্তির প্রক্রিয়াগত এবং সহযোগিতামূলক কাঠামো থেকে বেরিয়ে এসেছে। এটি আলোচনার কৌশল, না কি স্থায়ী বিরতি, তা সময়ই বলবে। যা আসছে, তা শুধু দ্বিপাক্ষিক কূটনীতি নয়, পাকিস্তানের পানি ব্যবস্থার স্থিতিশীলতাকেও পরীক্ষা করবে।
সিন্ধু পানি চুক্তি নিখুঁত নয়। তবে এটি এমন কিছু করেছে, যা এই দুই শত্রুভাবাপন্ন দেশের মধ্যে খুব কম চুক্তিই করতে পেরেছে। এটি নদীগুলোর প্রবাহ ঠিক রাখে এবং দুই দেশের মধ্যে কথা বলার জন্য একটি কারণ দেয়। যদিও অন্য সব কিছু ভেঙে গেছে। এখন সেই কাঠামো চাপের মধ্যে রয়েছে। চুক্তি পূর্ণভাবে পুনঃস্থাপন হবে, পুনঃনির্ধারণ হবে, না কি বাস্তবে ম্লান হয়ে যাবে, তা সময়ই বলবে।
যতক্ষণ না স্পষ্ট নিয়ম রয়েছে, ততক্ষণ ছোট প্রকল্পও সন্দেহের কারণ হতে পারে। প্রতিটি বর্ষা, প্রতিটি জলাধার, প্রতিটি খরা একটি নতুন উত্তেজনার কারণ হতে পারে। এই মুহূর্তে, যখন পানি পরিবর্তন ইতিমধ্যে খরা এবং বন্যাকে তীব্র করে তুলছে, এবং দুই দেশই পানির চাপের মধ্যে রয়েছে, তখন অঞ্চলটি আর কোনো অনিশ্চয়তার নতুন স্তরের প্রয়োজন নেই।
পশ্চিমাঞ্চলীয় নদীগুলো শুধু ভাগ করা নদী নয়। এগুলো পাকিস্তানের প্রধান পানির উৎস। দীর্ঘমেয়াদে হয়ত সংস্কার বা বিকল্প ব্যবস্থা আসবে। কিন্তু এখন এই নদীগুলোর বিকল্প কিছুই নেই। এই নদীগুলো পাকিস্তানের জীবন, জীবিকা এবং প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রেখেছে। পাকিস্তান এটা রাজনৈতিক লড়াইয়ের ফলস্বরূপ হারাতে পারবে না। সুতরাং, প্রবাহ চালু থাকতে হবে। ভালোবাসা বা সদিচ্ছা থেকে নয়, কারণ এটি থামালে যে পরিণতি আসবে, তা কোনো দেশই সহ্য করতে পারবে না।
সিন্ধু এবং তার উপনদীগুলো, যা হাজার হাজার বছর ধরে সভ্যতাকে বাঁচিয়ে রেখেছে, এখন দুইটি আধুনিক পারমাণবিক শক্তিধর দেশের সহযোগিতার সক্ষমতাকে পরীক্ষা করছে। আগামী মাসগুলো এবং বছরগুলো দেখাবে, দুই দেশের মধ্যে বিচক্ষণতা আসবে, না কি উপমহাদেশ তার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ পানি নিয়ে এক নতুন অনিশ্চিত একতরফা যুগে প্রবেশ করবে।