গাজার উত্তরাঞ্চলে ‘পুরোদমে দুর্ভিক্ষ’ চলছে: উচ্চপদস্থ মার্কিন কর্মকর্তা

চলমান যুদ্ধে গাজার উত্তরাঞ্চলে 'পুরোদমে দুর্ভিক্ষ' চলছে বলে দাবি করেছেন মার্কিন উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা। ত্রাণ সরবরাহে ইসরায়েলের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মাঝে গতকাল (শুক্রবার) এমন মন্তব্য করেছেন তিনি।
ইউএন ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের মার্কিন ডিরেক্টর সিন্ডি ম্যাককেইন এমন মন্তব্য করার পর চলছে তুমুল আলোচনা। এনবিসি-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি গাজায় চলমান পরিস্থিতিকে 'ভয়াবহ' বলে অভিহিত করেছেন।
সিন্ডি ম্যাককেইন বলেন, "গাজার উত্তরাঞ্চলে দুর্ভিক্ষ চলছে; পুরোদমে দুর্ভিক্ষ। এটি ক্রমেই দক্ষিণাঞ্চলে বিস্তার লাভ করছে।"
ম্যাককেইন মনে করেন, প্রায় ২৩ লাখ মানুষের বাসস্থান গাজায় ক্রমবর্ধমান মানবিক বিপর্যয় মোকাবিলায় যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন। একইসাথে স্থল ও সমুদ্রপথে প্রচুর পরিমাণে ত্রাণ পাঠানো অপরিহার্য।
ম্যাককেইনের এমন মন্তব্যের বিষয়টি নিয়ে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি ইসরায়েল। তবে তেল আবিব জানায়, তারা স্থলপথে খাদ্য ও অন্যান্য মানবিক সহায়তার অনুমতি দিতে শুরু করেছে।
গাজায় খাদ্য সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মনিটর হিসাবে কাজ করা প্যানেল গত মার্চ মাসে বলেছিল যে, গাজার উত্তরাঞ্চল দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে এবং সম্ভবত মে মাসে এটি শুরু হতে পারে।
এদিকে গাজায় আন্তর্জাতিক উন্নয়নের জন্য মার্কিন সংস্থার মানবিক কর্মকর্তা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেছেন, গত মার্চ মাস থেকে গাজার উত্তরাঞ্চল দুর্ভিক্ষ রোধে প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত সহায়তার পায়নি।

ইউএসএইড-এর এই কর্মকর্তা জানায়, মে মাসের প্রথম দিকে বা মাঝামাঝি নাগাদ ইউএস-নেতৃত্বাধীন নতুন সামুদ্রিক রুটের জন্য প্রস্তুতি চলছে। এতে করে কয়েক হাজার ক্ষুধার্ত শিশুর চিকিৎসাসহ আরও বেশি ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব হবে। মূলত মার্কিন সামরিক বাহিনী শিপমেন্টের জন্য যে ভাসমান পিয়ার নির্মাণ করছে সেটি শেষ হলেই তা সম্ভব হবে।
ম্যাককেইন বলেন, "ইউএস-সমর্থিত পরিকল্পিত সমুদ্র পথে ত্রাণ পৌঁছানোর কাজটি ধীরে ধীরে হবে। কারণ এই কাজে সংশ্লিষ্টরা ত্রাণ কর্মীদের বিতরণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরীক্ষা করবে।
বৈশ্বিক চাপে সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা ত্রাণ সরবরাহে কিছু সীমান্ত ক্রসিং পুনরায় খুলতে শুরু করেছে। কিন্তু সামুদ্রিক পথে ত্রাণ আসতে শুরু করলেও তা পর্যাপ্ত হবে না। ইউএসএইডসহ ত্রাণ সরবরাহকারী সংস্থাগুলি জোর প্রদান করে বলছে যে, দুর্ভিক্ষ রোধে সীমান্ত ক্রসিংয়ের মাধ্যমে আরও সাহায্য সরবরাহ অপরিহার্য।
চলমান যুদ্ধ, খরা ও খাদ্যাভাবে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে গাজার পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরা। গাজার উত্তরাঞ্চলে হাসপাতালের কর্মকর্তারা মার্চের শুরুতে জানিয়েছেন যে, অনাহারে অনেকেই মৃত্যুবরণ করছে এবং মৃতদের বেশিরভাগই শিশু।
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান