কোনো সন্দেহ নেই গাজায় ইসরায়েল যুদ্ধাপরাধ করেছে: ম্যাথিউ মিলার

জো বাইডেনের আমলে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ম্যাথিউ মিলার মনে করেন, গাজায় ইসরায়েল যুদ্ধাপরাধ করেছে।
'আরব নিউজ'কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'আমি বিশ্বাস করি না যে এটি গণহত্যা, তবে কোনো সন্দেহ নেই গাজায় ইসরায়েল যুদ্ধাপরাধ করেছে। তাদের সেনাদের কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহি করতে হচ্ছে না।'
'ট্রাম্প ১০০' পডকাস্টে দেওয়া বক্তব্যে মিলার বলেন, 'যুদ্ধাপরাধের বিষয়টি ভাবার দুটো পদ্ধতি আছে। এক— যদি কোনো রাষ্ট্র ইচ্ছাকৃতভাবে যুদ্ধাপরাধের নীতি গ্রহণ করে, অথবা এমন বেপরোয়া আচরণ করে যা যুদ্ধাপরাধে সহায়তা করে। তাহলে প্রশ্ন ওঠে— ওই রাষ্ট্রই কি যুদ্ধাপরাধ করছে?'
'আমার মনে হয়, সেটি এখনো খোলাসা হয়নি। তবে যা প্রায় নিশ্চিতভাবেই বলা যায় না, তা হলো—ইসরায়েলি সেনারা, অর্থাৎ ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সদস্যরা, যুদ্ধাপরাধ করেছে—এমন কিছু ঘটনা যে ঘটেছে, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।'
আরব নিউজ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিলার জানিয়েছেন, যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই মার্কিন প্রশাসনের উচ্চপদস্থদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে মতবিরোধ চলছিল।
মিলার আরও বলেন, 'নীতিগত সিদ্ধান্ত কীভাবে নেওয়া হবে, তা নিয়ে শুরু থেকেই মতবিরোধ ছিল। এর মধ্যে কিছু ছিল বড় রকমের, আবার কিছু ছোটখাটো।'
তিনি বলেন, 'প্রশাসনের মধ্যে কখন, কীভাবে ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করা হবে—এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা হয়েছে।আপনারা ২০২৪ সালের বসন্তে দেখেছেন, আমরা ইসরায়েলকে ২,০০০ পাউন্ড ওজনের বোমা পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছিলাম, কারণ আমাদের মনে হয়েছিল, গাজায় এই অস্ত্র ব্যবহার উপযুক্ত হবে না।'
তিনি ইঙ্গিত দেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের মধ্যে বিশেষভাবে কিছু বিষয়ে মতবিরোধ ছিল। তবে তিনি বলেন, 'আমি সম্ভবত অপেক্ষা করব, সেক্রেটারি নিজেই যেন এ বিষয়ে কথা বলেন... তবে সাধারণভাবে বলছি, এটা সব উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তার ক্ষেত্রেই সত্য—তারা প্রতিটি নীতিগত লড়াইয়ে জয়ী হন না। একজন কর্মকর্তা যা করেন, তা হলো—প্রেসিডেন্টের সামনে নিজের যুক্তি যথাসম্ভব পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেন।'
মিলার আরও বলেন, ইসরায়েলকে বাইডেনের নিরঙ্কুশ সামরিক সমর্থনও প্রশাসনের মধ্যে বিতর্কের বিষয় ছিল। তবে তিনি এটাও মনে করেন, এই সমর্থনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বিরোধিতা হামাসকে আরও উৎসাহিত করতে পারে।
তিনি বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ রাখা হবে কি না, তা নিয়ে নানা পর্যায়ে বিতর্ক হয়েছিল। কখনো কখনো অস্ত্র ব্যবহারের বিষয় নিয়ে আলোচনা চলাকালে কিছু সরবরাহ পিছিয়েও দেওয়া হয়েছিল। আমরা খুব কঠিন এক অবস্থায় পড়েছিলাম, বিশেষ করে যখন বিষয়টি চূড়ান্ত রূপ নেয়… আমরা এমন এক জায়গায় পৌঁছাই যেখানে—আমি খুঁজে দেখছি কীভাবে উপযুক্তভাবে বলি—হামাস নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত ও ভাবনার সব কিছুই আমাদের এবং আমাদের মিত্রদের কাছে সব সময় গোপন ছিল না।'
তিনি আরও বলেন, 'সেই সময় আমাদের কাছে এটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে, অস্ত্র সরবরাহ আটকে দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্য আলোচনা, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কলেজ ক্যাম্পাসে চলা বিক্ষোভ, আর ইউরোপের কিছু দেশের ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্যোগ—সবই যথাযথ আলোচনা, যথার্থ সিদ্ধান্ত ও গ্রহণযোগ্য প্রতিবাদ—তবে এই সবকিছুর সমন্বিত ফলাফল ছিল, হামাসের নেতৃত্ব ধরে নেয় যে তাদের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার দরকার নেই। তারা ভাবছিল, একটু সময় পার করলেই তারা এমন কিছু পেয়ে যাবে, যা তারা দীর্ঘদিন ধরে চাইছিল।'
মিলার বলেন, 'আমি এখনো মাঝে মাঝে ভাবি, আর আমার বিশ্বাস সরকারের আরও অনেকে এটা ভাবেন, সেই সময়টা—মে মাসের শেষ থেকে জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত—যখন হাজার হাজার নিরীহ ফিলিস্তিনি নিহত হলেন, যাদের এই যুদ্ধে কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না, যাঁরা এই যুদ্ধ চাননি, সেই সময় কি আমরা আরও কিছু করতে পারতাম? ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করাতে আরও চাপ সৃষ্টি করা কি সম্ভব ছিল? আমার মনে হয়, কিছু সময় হয়তো সত্যিই সম্ভব ছিল।'
২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছিল, গাজা যুদ্ধ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জনপ্রিয়তায় বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলছিল।
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফকে 'অত্যন্ত সক্ষম ব্যক্তি' বলে মন্তব্য করেছেন মিলার। তিনি বলেন, 'বাইডেন প্রশাসনের যেসব ব্যক্তি প্রথম গাজা যুদ্ধবিরতির আলোচনায় তাঁর সঙ্গে কাজ করেছেন, তাঁদের অনেকেই মনে করেন, উইটকফ দক্ষ একজন দূত।'
মিলার আরও বলেন, 'আমি মনে করি এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, যখন কেউ যুক্তরাষ্ট্রের দূতের সঙ্গে আলোচনায় বসে, তখন যেন নিশ্চিত থাকে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের পক্ষে কথা বলছেন। উইটকফের ক্ষেত্রে বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্ট, আর আলোচনায় এটা বড় শক্তি হিসেবে কাজ করে।'