এবার ইরানের সঙ্গে গ্যাস চুক্তি থেকেও বাদ পড়ছে ভারত

দক্ষিণ-পূর্ব ইরানের চবাহার বন্দরের রেলওয়ে সংযোগ পরিকল্পনা থেকে বাদ পড়ার পর, এবার দেশটির একটি বড় গ্যাসক্ষেত্র প্রকল্প হারাতে চলেছে ভারত। ইরানের এই বৃহৎ গ্যাসক্ষেত্রটি খনন ও উন্নয়ন নিয়ে গত ১০ বছর থেকেই উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা করেছিল নয়াদিল্লি।
গত বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, পারস্য উপসাগর অঞ্চলের ''ফারজাদ- বি' গ্যাসক্ষেত্রটি ইরান নিজেদের অর্থায়নেই উন্নয়ন করবে। তবে ভারত পরবর্তী ধাপের উন্নয়নে অংশ নিতে পারে।''
এর আগে গত সপ্তাহে ইরানের জাতীয় তেল কোম্পানির (এনআইওসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাংবাদিকদের জানান, আলোচিত গ্যাসক্ষেত্রটির উন্নয়ন ও পরিচালনায় ভারতীয় কোম্পানি ওএনজিসি'র জায়গায় নতুন একটি কোম্পানিকে কাজ দেওয়া হবে। খবর দ্য ডনের।
ফারজাদ- বি গ্যাসক্ষেত্রে প্রমাণিত মজুদের পরিমাণ ২১ লাখ ৭০ হাজার কোটি ঘনফুট। এরমধ্যে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ ১২ লাখ ৮০ হাজার কোটি ঘনফুট। এছাড়াও, ২১ কোটি ২০ লাখ টন আছে প্রাকৃতিকভাবে তরলীকৃত গ্যাসের উপস্থিতি। ২০০৮ সালে ভারতের তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি কোম্পানি ওএনজিসি, ওয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেড এবং ইন্ডিয়ান ওয়েল কর্পোরেশনের এক যৌথ অনুসন্ধানে গ্যাসক্ষেত্রটি আবিষ্কৃত হয়। এরপর খনিটির উন্নয়ন ও পরিচালনার চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল ওএনজিসির সঙ্গে।
চুক্তির আওতায় খনি উন্নয়নের ক্ষমতা দেওয়া হয় ভারতীয় কোম্পানিটিকে। কিন্তু, ২০১২ সালে মার্কিন অবরোধের তীব্রতা বাড়ায় হঠাৎ করেই কাজ বন্ধ করে দেয় ওএনজিসি।
২০১৫ সালে ইরানের পরমাণু প্রকল্প নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তির পর অবরোধ কিছুটা শিথিল করা হয়। সেই সুযোগে আবারও প্রকল্প কাজে ফিরে আসার আগ্রহ ব্যক্ত করে ভারতীয় পক্ষ। তারপর আবার ২০১৮ সালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত একতরফা নিষেধাজ্ঞার কারণে গ্যাসক্ষেত্র প্রকল্পটি নিয়ে আর এগোতে চায়নি ভারত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু সূত্র দ্য ডনকে জানিয়েছে, ''২০১৮ সাল নাগাদ দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় ভারত-ইরান উভয়েই প্রকল্পটি শুরু করার খুঁটিনাটি দিক নিয়ে অনেকদূর এগিয়েছিল। কিন্তু, এরমধ্যেই মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে তা আবার অনিশ্চিত হয়ে পরে।''
তবে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বেশ কিছু বিরোধও দেখা দিয়েছিল। বিশেষ করে, কি পরিমাণ পাইপলাইন বিছানো হবে এবং বিনিয়োগের পরিমাণ কি হবে, তা নিয়ে দ্বিমত দেখা দেয়।
এ অবস্থায় ২০১৯ সালে মে'তে ইরানের তেলমন্ত্রী বিজান নামদার জাঙ্গানেহ জানান, ফারজাদ- বি গ্যাসক্ষেত্রের উন্নয়ন কাজের লক্ষ্যে তার মন্ত্রণালয় বিকল্প অর্থ সংস্থানের একটি পরিকল্পনা করেছে।
ইরানের জাতীয় তেল কোম্পানি (এনআইওসি) এসময় ভারতীয় পক্ষকে তাদের বিনিয়োগ পরিকল্পনা জমা দেওয়ার অনুরোধ জানায়। ওই প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে প্রায় সাড়ে ৫শ কোটি ডলার বিনিয়োগের অঙ্গীকার করে ভারতীয় কোম্পানিটি। কিন্তু, বিনিয়োগের এই অংক গ্যাসক্ষেত্রের বিপুল সম্ভাবনার তুলনায় খুবই কম বিবেচনা করে, তা বাতিল করে দেয় ইরান। পাশাপাশি নতুন করে প্রস্তাব দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
তারপর গত বছরের আগস্ট নাগাদ ভারতের সংশোধিত বিনিয়োগ পরিকল্পনা জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতার কথা উল্লেখ করে, ইরান ভিন্ন একটি কোম্পানিকে গ্যাসক্ষেত্রটির পরিচালনা ভার তুলে দেওয়ার কথা জানায়।
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য, বিনিয়োগ পরিকল্পনা নিয়ে টালবাহানার অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছে, ইরানি পক্ষ নীতি পরিবর্তন করায় তার ফলে দ্বিপাক্ষিক প্রকল্পটি বাধাগ্রস্ত হয়েছে।