Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Friday
June 13, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
FRIDAY, JUNE 13, 2025
বই: লিখিত জিনিসকে মানুষ ভয় পায়, বইকে ডরায়, কেন?

ইজেল

সাগুফতা শারমীন তানিয়া
10 February, 2024, 01:35 pm
Last modified: 10 February, 2024, 01:41 pm

Related News

  • অমিয়শঙ্কর, ঘরে ফিরে যা
  • ‘স্ক্রিন এন্ড কালচার’ থেকে ‘কারেন্ট বুক হাউজ’: চট্টগ্রামে টিকে থাকা সবচেয়ে পুরোনো বইয়ের দোকান
  • ঋত্বিক ঘটকের কন্যা: এক অসমাপ্ত আলাপ
  • শোক হতে শ্লোক
  • আমার স্নিকার্স

বই: লিখিত জিনিসকে মানুষ ভয় পায়, বইকে ডরায়, কেন?

মানুষ লিখিত জিনিসকে ভয় পায়, বইকে ডরায়। বইয়ে প্রোথিত মানুষের চিন্তাভাবনা, জ্ঞান-বিজ্ঞান, মনোভাব, সমাজ-রাষ্ট্র এবং পরিপার্শ্বের সঙ্গে বিক্রিয়া, স্বীকৃতি, ইতিহাসের সাক্ষ্য, এমনকি উস্কানিকেও মানুষ (বিশেষত ধর্মীয় এবং রাষ্ট্রীয় শাসক) এড়াতে চায়। কেন ডরায় কিংবা এড়ায়? কারণ, মানুষ শব্দের সক্ষমতা সম্পর্কে পরিপূর্ণভাবে ওয়াকিবহাল। শব্দমালায় গাঁথা বই, সেই শব্দ আপনাকে প্রশ্ন করতে শেখাবে, ভাবতে এবং অস্ত্র কেড়ে নিতে উদ্দীপ্ত করবে, যুদ্ধে যেতে প্ররোচিত করবে এমনকি মৃত্যুবরণ করতেও রাজি করিয়ে ফেলবে। তাই যুগে যুগে বইয়ের ওপর বারবার নেমে এসেছে আঘাত। 
সাগুফতা শারমীন তানিয়া
10 February, 2024, 01:35 pm
Last modified: 10 February, 2024, 01:41 pm

এ লেখার শুরুতে আমি ৬টি ভিন্ন ঘটনার উল্লেখ করব। 

১) বিটিভির পুরোনো নাটকে দেখেছিলাম—শুকনো রুটির ওপর বিপ্লবী ইশতেহার লিখে উনিশ শতকীয় সিপাহিরা বিলি করছে, আর দেশপ্রেমে উদ্বেল গলায় বলছে—'খলক এ খুদা, মুলকে বাদশাহ, হুকুমতে সিপাহি!' খোদার সৃষ্টি দুনিয়া, মোগল বাদশাহর রাজত্ব আর সিপাহির অনুশাসন। বেনিয়া ইংরেজের বিরুদ্ধে ব্যারাকে ব্যারাকে জ্বলে উঠছে সিপাহিদের আত্মাভিমান, পরাধীন মানুষের স্বদেশচেতনা। 

২) ম্যাক্সিম গোর্কির মা উপন্যাস, পৃথিবীর বহু ভাষায় অনূদিত হয়েছে। উপন্যাসের মূল নায়িকা পাভেল ভ্লাসভের মা পেলাগেয়া নিলভনা। জন্মাবধি অনাহার-ব্যাধি-নির্যাতনের ভেতর এক উদ্দেশ্যহীন জীবন কাটিয়ে গেছেন। সন্তান যখন মজুরের জীবনসংক্রান্ত বই পড়ে সত্য বুঝতে শিখে গেল, তার জীবন রূপান্তরিত হলো—সেই রূপান্তর আক্রান্ত করল মাকেও। উপন্যাসের শেষ অংশে—

'মা বল্লেন—বন্ধুগণ, আমি চোর নই। আমার ছেলে পাভেল রাজনৈতিক অপরাধে কাল নির্বাসনে গেছে। সে একটা জবানবন্দি দিয়ে গেছে আদালতে। এই তার সেই ছাপানো বক্তৃতা, আমি তোমাদের দিচ্ছি, তোমরা পড়ে দেখ, ভেবে দেখ! সত্যি-মিথ্যে বুঝবে।' 

মা স্যুটকেস খুলে কাগজগুলি ছুড়ে দিতে লাগলেন জনতার মাঝে। কাগজগুলি, ছড়িয়ে পড়ল, যে পেল সে পকেটে ভরল। মা বল্লেন—'গরিব খেটে মরে, সারা দিন খেটে তারা কি পায়...মাথার উপর বসে আছে ধনী, মালিক, জমিদার আর মহাজন। তাদেরই হাতে আছে পুলিশ, সৈন্য আর আইন...' 

একজন পুলিশ এসে মায়ের হাত থেকে ব্যাগটা ছিনিয়ে নিল, কিন্তু সেটা তখন খালি হয়ে গেছে। 

৩) পঞ্চম শতাব্দীতে মধ্য এশীয় হুনদের হাতে এবং পরবর্তীতে ১২০০ খ্রিষ্টাব্দে তুর্কি গোষ্ঠীপতি বখতিয়ার খিলজির হাতে নালন্দা মহাবিহার ধ্বংস হয়। এই মহাবিহারে তিনটি বহুতল দালানজুড়ে একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার ছিল, দালানগুলোর নাম রত্নসাগর, রত্নোদধি এবং রত্নরঞ্জক। ৯০ লক্ষ পাণ্ডুলিপিসমৃদ্ধ সেই গ্রন্থাগার নাকি তিন মাস ধরে জ্বলেছিল। (এ ইতিহাস নিয়ে এখন নানান মতভেদ রয়েছে।)

৪) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান ছাত্র ইউনিয়নের (ডিএসটি) উদ্যোগে জার্মানি অস্ট্রিয়া এবং পরবর্তীতে অধ্যুষিত পোলান্ডে একরকম সাংস্কৃতিক গণহত্যার আয়োজন করা হয়। জার্মান নাৎসি ভাবাদর্শবিরোধী জ্ঞানবিজ্ঞানের বই পুড়িয়ে ফেলা হয়। এসব বইয়ের ভেতর ছিল বহু ইহুদি-বিরচিত বই, কমিউনিস্টদের বই, সমাজতন্ত্রীদের-অ্যানার্কিস্টদের-মুক্তচিন্তকদের-শান্তিকামীদের এবং সেক্সোলজিস্টদের বই এবং অবশ্যই কার্ল মার্ক্স এবং ফ্রেডরিক এঙ্গেলসের বই। রক্ষা পায়নি আইনস্টাইন, কাফকা, ফ্রয়েড, হাইনে, হারমান হেস, হাইনরিখ মান কিংবা হেলেন কেলারের বইও। নিষিদ্ধ হয় জ্যাক লন্ডন, রোজা লুক্সেমবার্গ, জর্জ অরওয়েল, মার্শেল প্রুস্ত, এরিখ মারিয়া রেমার্ক, এইচ জি ওয়েলস, হেমিংওয়ে এবং অস্কার ওয়াইল্ডের রচনাবলি। 

৫) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সময়ে সমস্ত নাৎসি প্রপাগান্ডামূলক বইয়ে আগুন দেওয়া হয়, আরেক অগ্ন্যুৎসব। 

৬) খ্রিষ্টপূর্ব ২২১-২০৬-এ কিন রাজবংশের শাসনকর্তারা কনফুসিয়াসের প্রায় সমস্ত পুঁথি পুড়িয়ে ফেলেন। এরা মনস্থির করেছিলেন কৃষিবিদ্যা, জ্যোতিষশাস্ত্র এবং চিকিৎসাশাস্ত্রের বই ছাড়া আর কোনো বইয়ের টিকে থাকবার দরকার নেই। 

এই ছয়টি ঘটনার মাঝে যোগসূত্র কী? কোথায় মিল? 

সেটি হচ্ছে, মানুষ লিখিত জিনিসকে ভয় পায়, বইকে ডরায়। বইয়ে প্রোথিত মানুষের চিন্তাভাবনা, জ্ঞান-বিজ্ঞান, মনোভাব, সমাজ-রাষ্ট্র এবং পরিপার্শ্বের সঙ্গে বিক্রিয়া, স্বীকৃতি, ইতিহাসের সাক্ষ্য, এমনকি উস্কানিকেও মানুষ (বিশেষত ধর্মীয় এবং রাষ্ট্রীয় শাসক) এড়াতে চায়। কেন ডরায় কিংবা এড়ায়? কারণ, মানুষ শব্দের সক্ষমতা সম্পর্কে পরিপূর্ণভাবে ওয়াকিবহাল। শব্দমালায় গাঁথা বই, সেই শব্দ আপনাকে প্রশ্ন করতে শেখাবে, ভাবতে এবং অস্ত্র কেড়ে নিতে উদ্দীপ্ত করবে, যুদ্ধে যেতে প্ররোচিত করবে এমনকি মৃত্যুবরণ করতেও রাজি করিয়ে ফেলবে। তাই যুগে যুগে বইয়ের ওপর বারবার নেমে এসেছে আঘাত। 

ইউরেশীয় স্তেপস থেকে যত যাযাবর সম্রাটের উত্থান ঘটেছে, তাদের নৃশংসতার পাশাপাশি এই বই-বিধ্বংসী চারিত্রটিও কমন। শুধু লুণ্ঠন ও হত্যা নয়, মানুষের ভাবনাবাহী পাঠাগার ধ্বংস এবং ভাবনাচিন্তায় অগ্রসর ও সমর্থ মানুষের কাজ উধাও করে দেওয়া, এই ছিল সেকালের যুদ্ধনীতি। চেঙ্গিস খাঁ এবং তাঁর মোঙ্গল বাহিনী যে যে জনপদ ছারখার করেছে, সেখানে মানুষের রক্তে পিচ্ছিল করেছে সড়ক, যুগপৎভাবে নগরীর সমস্ত লাইব্রেরি ও বই ধ্বংস করেছে। হালাকু খাঁ বাগদাদ দখল করে বায়তুল হিকমাহ ধ্বংস করেছিলেন, ধ্বংস হয়ে গেছিল তাতে রক্ষিত শত শত পাহলভি-সিরীয়-সংস্কৃত-গ্রিক পুঁথি আর তাদের আরব অনুবাদ। বিজিতকে নতজানু করবার ঐ তো এক উপায়—তাকে সাংস্কৃতিকভাবে উন্মূল করে দেয়া। অত যে জ্ঞানের ভান্ডার প্রাচীন পৃথিবীতে, জার্মানি গোষ্ঠী-কেল্ট-গথ-শ্লাভ (যারা লিখতে জানত না) এদের আহৃত জ্ঞানের নথিগুলো সব কোথায় গেল? রোমানরা ধ্বংস করেনি তো? খ্রিষ্টপূর্ব ১৪৬-এ রোমানরা কার্থেজের দুর্গনগরী হাতে পেল, ছয় দিন একনাগাড়ে চলল হত্যা, অর্ধসহস্র বছরের সমস্ত কার্থেজিনীয় লিপি (মাগো বিরচিত ২৮ ভল্যুমের কৃষিশিক্ষা বাদে) ধ্বংস করা হলো তৃতীয় পিউনিক যুদ্ধে। ব্রেখট ২০০০ বছর পরে জার্মানিকে সতর্ক করতে লিখেছিলেন, 'কার্থেজ তার প্রথম যুদ্ধের পরেও যথেষ্ট ক্ষমতাশীল ছিল, দ্বিতীয়টির পরেও দাঁড়িয়েছিল, তৃতীয়টির পর আর কার্থেজকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।' মনে আছে, সিনেমার ক্লিওপেট্রা (এলিজাবেথ টেলর) জানালা দিয়ে উঁকি মেরে দেখছেন শতবর্ষী আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরি পুড়িয়ে দিচ্ছে রোমানরা, যদিও বলা হয়—রোমান, খ্রিষ্টীয় কিংবা বাইজেন্টাইন কোনো শক্তিই এই লাইব্রেরি ধ্বংস করেনি। তবে সন্দেহের খাতায় নাম আছে তিনজনের—জুলিয়াস সিজার, সেইন্ট থিওফিলাস অব আলেকজান্দ্রিয়া, দামেস্কের খলিফা আমর। ছয় মাস ধরে নাকি জ্বলেছিল সেই মহামহিম গ্রন্থাগারের আগুন। 

যে শব্দ একজন মানুষের কাছে উদ্দীপক এবং উজ্জীবক, তা অপর মানুষের কাছে ভীতিকর এবং বিধ্বংসী। এতই ভীতিকর যে আগের জমানার শাসকেরা বই-পাঠাগার-গ্রন্থাগার পুড়িয়ে দিতেন। ভক্তরা কিছু বই লুকিয়ে রাখত, অথবা মুখস্ত করে সংরক্ষণ করত। মনে করে দেখুন তৃতীয় শতকে রোমান নগরীর তলায় নরম আগ্নেয় শিলা কুঁদে তৈরি আর্লি-ক্রিশ্চিয়ানদের সেই সব অসংখ্য ক্যাটাকম্ব বা কবরগুহার কথা। যিশুর বাণী সম্প্রচারকালে সে গুহায় কত না ছলে গসপেলের গল্পের বা হিব্রু ধর্মশাস্ত্রের ছবি আঁকতে হতো ভক্তদের। আসমানি কিতাবগুলোর সব কটিকেই আবির্ভাবকালে লুকিয়ে পড়তে হয়েছে—আবার লিখিতভাবে সম্প্রচারকালে সম্পাদনার দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে বলে কথিত আছে। বাইবেল উত্তর কোরিয়া এবং সৌদি আরবে নিষিদ্ধ, একটি নাস্তিক রাষ্ট্র, অপরটি মুসলিম রাষ্ট্র। ধর্মগ্রন্থ নিয়ে আলাপ এত দীর্ঘ যে এখানে এইটুকুই ছুঁয়ে যাচ্ছি। আসছি আধুনিক কালে, নেহায়েত মরমানুষের লেখা বইয়ের কথায়। 

 একালের শাসনযন্ত্র রাষ্ট্র, দেশে দেশে রাষ্ট্রের আদেশে নিষিদ্ধ বইয়ের তালিকা এবং ইতিহাসও রীতিমতো বর্ণাঢ্য। কেন নিষিদ্ধ হয় বই? ইতিহাসের নিরিখে এ প্রশ্নের উত্তর বড় বিচিত্র। অসামাজিক/অপ্রচলিত (?) প্রেম ও যৌনতার বিবরণী, উগ্র মতবাদ (ফ্যাসিবাদ, নাৎসিবাদ, বর্ণবাদ, ধর্মান্ধতা) পেশ করার কারণে, বিবাহবিচ্ছেদ, অকার্যকর দাম্পত্য সম্পর্ক, হলোকস্ট, যুদ্ধ, সমকাম, গ্যাং বা গণকালচার, ড্রাগ, অ্যানেরোক্সিয়া বা বুলিমিয়ার মতো অসুখ, ডিপ্রেশন, ক্রীতদাস প্রথা, আত্মহত্যা ইত্যাদি। ত্রিশের দশকের চীনের হুনান প্রদেশে লুইস ক্যারলের 'অ্যালিসেজ অ্যাডভেঞ্চার ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড' নিষিদ্ধ ছিল, কারণ এতে পশুর ভেতর মানবিক জটিল ভাবাবেগ দেখানো হয়েছে, মানুষ আর অন্য প্রাণী সমান হয় কী করে ইত্যাদি। নাৎসি জার্মানিতে 'অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট' নিষিদ্ধ ছিল। ভারতবর্ষ এবং তার বাসিন্দাদের প্রতি ঋণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে ভি এস নাইপলের ট্র্যাভেলগ 'অ্যান এরিয়া অব ডার্কনেস' ভারতে নিষিদ্ধ। যেখানে সমাজতন্ত্র চলছে, সেখানে গণতন্ত্রের কথা বললে কিংবা সমাজতন্ত্রের বিপত্তিকর দিকগুলোর কথা বললে, আবার গণতান্ত্রিক দেশে সমাজতন্ত্রের গুণগান গাইলে, একনায়কের দেশে গণতন্ত্রের সাফাই গাইলেই নিষেধের খড়্গ নেমে এসেছে বইয়ের ওপর। এখানে মনে পড়ছে পাস্তারনাকের 'ডক্টর জিভাগো', আলেক্সান্দর সলঝেনিতসিনের 'দ্য গুলাগ আর্কিপেলেগো' আর নাদিন গর্ডিমারের অ্যাপারথেইড-বিরোধী একাধিক উপন্যাসের (আ ওয়ার্ল্ড অব স্ট্রেঞ্জারস, দ্য লেইট বুর্জোয়া ওয়ার্ল্ড, বার্জারস ডটার, জুলাইজ পিপল) কথা। জর্জ অরওয়েলের 'অ্যানিমেল ফার্ম'-এ সোভিয়েত ইউনিয়নকে নিয়ে কটাক্ষ রয়েছে বলে এটি বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে কমিউনিস্ট দেশগুলোতে নিষিদ্ধ হয়, ২০০২ সালে নিষিদ্ধ হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইসলামি মতবাদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক), উত্তর কোরিয়াতে এ বই আজও নিষিদ্ধ। ক্যাথলিক চার্চ আর আইরিশ রিপাবলিকানিজমের ব্যাপারে স্পর্শকাতর আয়ারল্যান্ডে ব্রেন্ডান বিহানের 'বর্স্টাল বয়' নিষিদ্ধ। আয়ারল্যান্ডে অবাধ যৌনাচারের দায়ে হাক্সলির 'ব্রেইভ নিউ ওয়ার্ল্ড'ও নিষিদ্ধ। আয়াতুল্লা খোমেনি ফতোয়া দিয়েছিলেন 'স্যাটানিক ভার্সেস'-এর সঙ্গে জড়িত সব কটি মানুষের মৃত্যুদণ্ড হওয়া চাই। অশ্লীলতার দায়ে চসারের 'ক্যান্টারবারি টেইলস' কিংবা বোকাচ্চিওর 'দ্য ডেকামেরন' নিষিদ্ধ ছিল ইউএসএতে, ইংরেজি ভাষাভাষী বহু দেশে নিষিদ্ধ ছিল 'লেডি চ্যাটারলিজ লাভার'। মিথ্যাচার ও অশ্লীলতার বিতর্কে পড়েছিল স্টাইনবেকের উপন্যাস 'দ্য গ্রেপস অব র‌্যাথ', শেষ দৃশ্যে রোজ অব শ্যারন রহস্যময়ীর হাসি হাসে, কেননা তার স্তন্য তখনো মুমূর্ষু অনাত্মীয়কে জীবনের আশা আর আলো দিতে সক্ষম, 'রোমান চ্যারিটি'র সঙ্গে প্রভেদ সামান্য; সুবোধ ঘোষের 'পরশুরামের কুঠার', শহীদুল্লা কায়সারের 'সারেং বৌ', কিংবা বনফুলের 'স্থাবর'কে এমন বিতর্কে পড়তে হয়েছিল কি না, জানি না। 

উপমহাদেশের সাহিত্যের দিকে ফিরি। উর্দু সাহিত্যের সবচেয়ে বিতর্কিত লেখক সম্ভবত ইসমত চুঘতাই, লিহাফ বা 'লেপ' গল্পটির জন্য তাকে আদালতে যেতে হয়, লাহোর আদালতের পথে তাঁকে দেখতে মানুষের ঢল নামে। অভিযোক্তাদের চাপে কোনোভাবেই তিনি এ গল্প লেখার জন্য ক্ষমা চাইতে রাজি ছিলেন না। সাদাত হোসেন মান্টোকে 'ঠান্ডা গোস্ত' গল্পটি লিখবার দায়ে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়, এর আগ অবধি আরও তিনবার মান্টোর বিরুদ্ধে অশ্লীলতার অভিযোগ ওঠানো হয়; কিন্তু তিনি বেকসুর খালাস পান। সেবারের মামলায় আদালতে জবানবন্দি দিতে আসেন পাকিস্তান টাইমসের সম্পাদক ফয়েজ আহামদ ফয়েজ, তিনি বলেন—গল্পের পর্যালোচনায় আংশিক নয়, গোটা গল্পটিকে পরখ করে দেখতে হবে। গল্পের বিষয়বস্তুর নিরিখে শব্দের ব্যবহার যুক্তিসংগত, 'যদিও এসব শব্দ পার্লামেন্টারি নয়, তবে সাহিত্যে এসব ব্যবহার করা যায়।' মণীশ ঘটকের 'পটলডাঙার পাঁচালি'তে বস্তির যে বিকারগ্রস্ত পরিবেশ উপস্থিত, তা জুতসই শব্দ ছাড়া বিনির্মাণ সম্ভব নয়। জ্যোতিরিন্দ্র নন্দীর ফুসলানি পুরুষ জোনাকি-ঋতুকয়েদি পথের কুকুর-কুকুরী কিংবা মাতাল পুরুষ ব্যাঙ কিংবা মেয়েলি পায়ের গোছ দেখে গরম ফাউলকারির কথা মনে পড়ে যাওয়া, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নায়কের মুখের বাঞ্চোত গালি, যে যেখানে দাঁড়িয়ে ওখানেই সুপ্রযুক্ত; জীবন যেখানে রূঢ়, শব্দপ্রয়োগ সেখানে স্থূল। শিবরাম চক্রবর্তীর ১৯২৫ সালের উপন্যাস 'ছেলে বয়সে' কিশোর সমকামিতার গল্প—যার একটি দায়সারা ভূমিকা লিখে দিয়েছিলেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। কমলকুমার মজুমদারের 'মল্লিকা বাহার' ১৯৫০ সালে প্রকাশিত গল্প, নারীর সমকামিতার গল্প। কোনো কারণে সমকালে এ গল্পগুলো প্রবল বিতর্কের সৃষ্টি করেনি, রক্ষণশীল পাঠকের রোষ কিংবা মনোযোগ এড়িয়ে গেছে, অথচ নরেন্দ্রনাথ মিত্রের 'দম্পতি' কিংবা বিমল মিত্রের 'গার্ড ডি সুজা' পড়ে পাঠক বিচলিত হয়েছে। সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছিলেন বাংলা সাহিত্যে তখন অদ্ভুত রসের জোয়ার চলছে—কুঠো, অন্ধ, কানা, বোবা, বত্রিশ আঙুলে, নপুংসক, লম্বা, বেঁটে—এ যেন 'পুরীর রাস্তায় পেশাদার ভিখারির ভিড়, যে যত অভিনব, সে তত লাভবান।'

১২ শতকে গীতগোবিন্দের রতিসুখসার পার হয়ে, তের শতকে নিজের স্তনযুগল দেখে আত্মহারা রাধিকা (বিদ্যাপতি) পার হয়ে, মধ্যযুগের সয়ফুল মুলক বদিউজ্জামাল আর ভারতচন্দ্র পেরিয়ে, ১৯ শতকের খিস্তি খেউড়ের অন্ধকার পার হয়ে আমরা বিংশ শতাব্দীতে সমরেশ বসুর 'প্রজাপতি' উপন্যাসকে অশ্লীলতা ও খিস্তিদোষে আক্রান্ত হবার সুবাদে কাঠগড়ায় তুলেছি। বুদ্ধদেব বসু-নরেশ গুহ প্রমুখ সমরেশ বসুর পক্ষে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। বুদ্ধদেব বসু বলেছিলেন—অশ্লীলতা কেমিস্ট্রির বিষয় হতে পারে, সাহিত্যের নয়। সাহিত্যে শ্লীল-অশ্লীল মাপবার দাঁড়িপাল্লাটাই বা কোথায়? ১৭ বছর ধরে আইনি লড়াই চলেছিল সেই উপন্যাসকে ঘিরে। অবশেষে সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়—'প্রজাপতি' অশ্লীল নয়। প্রজাপতি পাখনা মেলবার পর সমরেশ বসু কেবল ৩ বছর বেঁচে ছিলেন। সমরেশ বসুর 'বিবর' উপন্যাসটিও অশ্লীলতার দায়ে কাঠগড়া অবধি টেনে নিয়ে গেছিল লেখককে। বুদ্ধদেব বসুকেও অশ্লীলতার দায়ে কম ভুগতে হয়নি, ১৮ বছর বয়সে কল্লোল পত্রিকায় তার লেখা গল্প 'রজনী হলো উতলা' প্রকাশ পাওয়া দিয়ে শুরু। বুদ্ধদেব বসুর 'রাত ভ'রে বৃষ্টি'র প্রথম দুই লাইন তো বাংলায় অবিস্মরণীয়। 'হয়ে গেছে—ওটা হয়ে গেছে—এখন আর কিছু বলার নেই। আমি, মালতী মুখোপাধ্যায়, একজনের স্ত্রী আর একজনের মা, আমি ওটা করেছি।' কলেজজীবনে এ লাইন পড়ে আমরা বন্ধুরা প্রাপ্তবয়স্কের বাত্যাবিক্ষুব্ধ পৃথিবীতে পা দিয়েছি মনে করে হাসাহাসি করেছি, আরেকটু বড় হবার পরে যৌন অসামঞ্জস্যময় দাম্পত্য নিয়ে এমন একটি ক্লস্ট্রোফবিক, আধুনিক, রোমান্টিক, উৎক্ষিপ্ত উপন্যাস লিখবার জন্য বড় কৃতজ্ঞ হয়েছিলাম তার কাছে, উত্তরসূরিদের জন্য যেন বাংলা ভাষার কিচেনের জানালাটা ঠেলে খুলে দিয়ে গেছিলেন। এ উপন্যাসটি লেখার জন্য তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। এখানে একটি কথা মনে পড়ছে, সত্যজিৎ রায় একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন তিনি সমরেশ বসুর 'বিবর' পড়েছেন, তার মতে ইরোটিক বই বা ছবিতে কোনো দিন এমন কোনো ক্ষতি হয় না, যা অ্যান্টিসোশ্যাল কাজ-ভায়োলেন্স-ব্যাংক ডাকাতির ডিটেলস দেখালে হতে পারে। 

যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অনেক শব্দ, অনেক মনোভাব তামাদি হয়ে পড়ে বলে, নিষিদ্ধ হয়ে পড়ে বলে হ্যার্জের টিনটিন কমিকসেও যোগ-বিয়োগ চলেছে, নার্সারি রাইমে বা ছড়ায় পরিবর্তন এসেছে, আমূল পরিবর্তন এসেছে রূপকথায়। সিনেমায় শ্লীল-অশ্লীল নিয়েও কত গল্প আছে। সেসব নিয়ে আরেক দিন আলাপ হবে নিশ্চয়ই। নাদিন গর্ডিমার 'একজন লেখকের স্বাধীনতা' (১৯৭৬) রচনায় লিখেছিলেন, 'লেখককে স্বাধীন হতেই হবে, তা সে ফ্যাশন থেকে হোক, প্রথা থেকে হোক কি সরকারি হস্তক্ষেপ থেকে। যেকোনো সরকার, যেকোনো সমাজ যাদের ভবিষ্যতের সুদিন নিয়ে স্বপ্ন রয়েছে, তাদের লেখককে একেবারে আগলমুক্ত করে দিতে হবে—ভাষার বা ফর্মের ব্যবহারে। নিজস্ব একান্ত সত্য আবিষ্কারে। সবকিছুতে। এমন সমগ্র স্বাধীনতা ছাড়া সত্যিকারের শিল্পী কখনো তৈরি হবে না, বাতাস ছাড়া যেমন শ্বাস সম্ভব নয়।' একসময় ধরা হতো বাতাস মারির জীবাণু বহন করে আনে, প্রাণের উত্থান বাতাস ছাড়া তো সম্ভব নয়—তা সে যতই ঘাস-আগাছার বীজে ঠাসা হোক এমনকি দুর্গন্ধ হোক। সপ্রাণ উর্বর সাহিত্যক্ষেত্রের জন্য খোলা হাওয়া বড় জরুরি। 

Related Topics

টপ নিউজ

বই / বই পড়া / ইজেল

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • আহমেদাবাদে মেডিক্যাল হোস্টেলের ওপর বিমান বিধ্বস্ত: নিহতের সংখ্যা দুই শতাধিক, ১ জনকে জীবিত উদ্ধার
  • দেশেই কোচ অ্যাসেম্বল করতে তিন কারখানার আধুনিকায়নে ২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প রেলের
  • চুক্তি 'হয়ে গেছে', চীন দেবে বিরল খনিজ, যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে পারবেন চীনা শিক্ষার্থীরা: ট্রাম্প
  • এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট দুর্ঘটনা: ফের আলোচনায় মার্কিন উড়োজাহাজ নির্মাতা বোয়িং
  • এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনার পর বোয়িংয়ের শেয়ারদরে ৮ শতাংশ পতন
  • আহমেদাবাদে উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত; দেখুন ভিডিও

Related News

  • অমিয়শঙ্কর, ঘরে ফিরে যা
  • ‘স্ক্রিন এন্ড কালচার’ থেকে ‘কারেন্ট বুক হাউজ’: চট্টগ্রামে টিকে থাকা সবচেয়ে পুরোনো বইয়ের দোকান
  • ঋত্বিক ঘটকের কন্যা: এক অসমাপ্ত আলাপ
  • শোক হতে শ্লোক
  • আমার স্নিকার্স

Most Read

1
আন্তর্জাতিক

আহমেদাবাদে মেডিক্যাল হোস্টেলের ওপর বিমান বিধ্বস্ত: নিহতের সংখ্যা দুই শতাধিক, ১ জনকে জীবিত উদ্ধার

2
বাংলাদেশ

দেশেই কোচ অ্যাসেম্বল করতে তিন কারখানার আধুনিকায়নে ২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প রেলের

3
আন্তর্জাতিক

চুক্তি 'হয়ে গেছে', চীন দেবে বিরল খনিজ, যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে পারবেন চীনা শিক্ষার্থীরা: ট্রাম্প

4
আন্তর্জাতিক

এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট দুর্ঘটনা: ফের আলোচনায় মার্কিন উড়োজাহাজ নির্মাতা বোয়িং

5
আন্তর্জাতিক

এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনার পর বোয়িংয়ের শেয়ারদরে ৮ শতাংশ পতন

6
আন্তর্জাতিক

আহমেদাবাদে উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত; দেখুন ভিডিও

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net