মা ও ভাই-বোনের সঙ্গে হত্যার শিকার নূরার ফল জিপিএ ৫

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটী ইউনিয়নের জৈনা বাজার (আবদার) এলাকায় মা ও ভাই-বোনদের সঙ্গে হত্যার শিকার সাবরিনা সুলতানা নূরা এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছে। তার রোল নম্বর ১২৩২২৩। সে স্থানীয় জৈনা বাজার এইচ কে একাডেমি অ্যান্ড স্কুল থেকে এ বছর মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল।
এইচ কে একাডেমি অ্যান্ড স্কুলের প্রধান শিক্ষক শাহীন সুলতানা জানান, রোববার দুপুর ১টার দিকে নিহত নূরা সাবরিনার চাচা জাহিদ হাসান আরিফ এসএসসির ফল নিতে বিদ্যালয়ে আসেন। তিনি এ সময় শিক্ষক ও অভিভাবকদের সামনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
প্রধান শিক্ষক জানান, ওই বিদ্যালয় থেকে রেজিস্ট্রেশন করার অনুমতি পাওয়া যায়নি। এটি প্রক্রিয়াধীন। তাই পার্শ্ববর্তী তেলিহাটী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন করে পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া হয়। হত্যাকাণ্ডের শিকার নূরা সাবরিনা একইসঙ্গে মেধাবী ও বিনয়ী শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচিত ছিল।
সাবরিনা সুলতানা নূরার চাচা জাহিদ হাসান আরিফ কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলটিই আমরা পেলাম। কিন্তু যার ফলাফল, সে ও তার মা, ভাই-বোন কেউ নেই। এ হত্যাকাণ্ড এবং ফলাফল আমাদের পরিবারের বেঁচে থাকা প্রত্যেক সদস্য বিষাদের স্মৃতি হিসেবে আমৃত্যু বহন করবে।
প্রসঙ্গত, ২৩ এপ্রিল বৃহস্পতিবার বিকেলে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার আবদার বাজার এলাকার প্রবাসী রেদোয়ান হোসেন কাজলের বাড়ি থেকে তার স্ত্রী ইন্দোনেশিয়ান নাগরিক স্মৃতি আক্তার ফাতেমা (৪৫), বড় মেয়ে সাবরিনা সুলতানা নূরা (১৬), ছোট মেয়ে হাওয়ারিন (১২) ও প্রতিবন্ধী ছেলে ফাদিলের (৮) গলা কাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ২২ এপ্রিল দিবাগত রাতে দুর্বৃত্তরা চারজনকে গলা কেটে হত্যা করে। রেদোয়ান হোসেন কাজল মালয়েশিয়ায় চাকরি করেন।
ওই ঘটনায় প্রবাসে অবস্থানকারী কাজলের বাবা আবুল হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের অভিযুক্ত করে শ্রীপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) একজন ও র্যাব-১-এর সদস্যরা পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তারকৃতরা আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করলে তাদের জেল হাজতে পাঠানো হয়।
চিকিৎসক হয়ে দেশের সেবা করার স্বপ্ন ছিল নূরার
সাবরিনা সুলতানা নূরার স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হয়ে দেশ সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করবে। বাবা-মা ও শিক্ষকদের সহায়তায় সে লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছিল সে। পড়ালেখার প্রতিটি ধাপেই সফলতার স্বাক্ষর রেখেছিল নূরা। সবশেষ সফলতার আলো ছড়িয়েছে চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে।
ফলাফল প্রকাশের পর নূরার বন্ধু ও সহপাঠীরা আনন্দ উল্লাস করলেও তার স্বজনদের মধ্যে নেই এর ছিটেফোঁটা। এ ফলাফল এখন তাদের বাড়িয়েছে শুধুই আক্ষেপ।
পরিবারটির বেঁচে থাকা একমাত্র সদস্য নিহত নূরার বাবা প্রবাসী রেদোয়ান হোসেন কাজল জানান, নূরা ছোটকাল থেকেই ছিল মেধাবী। সে প্রাথমিক সমাপনী ও জেএসসি পরীক্ষায়ও জিপিএ-৫ পেয়েছিল। এসএসসি পরীক্ষার পরই নূরা বলেছিল, ভালো ফলাফল করবে। সে তার কথা রাখলেও আমাদের সমাজ বা আমরা তার নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছি।
যারা তার মেয়ের স্বপ্নের সমাধি রচনা করে পরিবারটি শেষ করেছেন, তাদের বিচার দেখার অপেক্ষায় এখন দিন কাটছে কাজলের।
তিনি আরও জানান, নূরা নিজের স্বপ্নের পথে হেঁটে যে পরিশ্রম করত, এই ফলাফল তার প্রমাণ।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক শাহীন সুলতানা জানান, শিক্ষার্থী ছাড়া ফলাফলের কি-বা মূল্যই থাকে! এই বিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল নূরা। তার এমন ফলাফল আমাদের কাছে প্রত্যাশিত ছিল। তার স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হবে। কিন্তু একটি ঘটনার মধ্য দিয়ে সবই তো এখন অতীত। ফলাফলের দিন সকলের মতো প্রিয় শিক্ষার্থীর এই ফলাফলও বাড়িয়েছে আক্ষেপ ও বিষাদ।