স্বচ্ছলতার স্বপ্ন দেখাচ্ছে তাইওয়ানের তরমুজ

সাত বছর সিঙ্গাপুরে থাকার পর তিন বছর আগে দেশে ফিরেন বগুড়ার শাহজাহানপুর উপজেলার পালাহার গ্রামের রুহুল আমিন (৩০)। এরপর টুকটাক ব্যবসা করেই চালাতেন ছয় সদস্যের সংসার। পোল্ট্রি মুরগির খামার করে যা আয় হতো, তাও ছিল যৎসামান্য।
একই এলাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সালেহ আহমেদের (২৫) মধ্যে ছিল ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শেষ সেমিস্টারে থাকা ওই শিক্ষার্থী এরই মধ্যে নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন।
একটু স্বচ্ছলতা আর ভবিষ্যতের শঙ্কা দূর করতে তারা দুজনে মিলে নতুন কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন। ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করেন বিদেশি জাতের তরমুজ চাষ। 'গোল্ডেন ক্রাউন' ও 'ব্ল্যাক বস' নামে তাইওয়ানের এই তরমুজগুলো হলুদ ও কালো রঙয়ের হয়। চাষি দুজন এরই মধ্যে ফল পেতে শুরু করেছেন। দামও ভালো। তবে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব না থাকলে আরও বেশি আয় হতো বলে জানিয়েছেন তারা।

দেশের দক্ষিণাঞ্চলে কয়েক বছর আগে থেকে এই ফলের চাষ শুরু হলেও বগুড়াতে রুহুল আমিন ও সালেহ আহম্মেদই প্রথম শুরু করেন। সাড়ে চার লাখ টাকা ব্যয়ে পাঁচ বিঘা জমিতে চাষ শুরু করেন তারা। এরই মধ্যে ফলন উঠতে শুরু করেছে। বাগানেই প্রতি কেজি তরমুজ বিক্রি করছেন ৪০ টাকা দরে।
আড়াই মাসেই ফলন উঠতে শুরু করেছে জানিয়ে রুহুল আমিন বলেন, বাঁশের মাচায় ঝুলে থাকা তরমুজ নজরে রাখতে হচ্ছে বেশি। কারণ এ ফসল চাষে কি কি সমস্যা তৈরি হতে পারে, তা এখনও জানা যায়নি।
"আমি আশা করছি সব কিছু ঠিক ঠাক থাকলে আমাদের আয় হবে অন্তত ৮ লাখ টাকা। লাভ আরও বেশি হতো, যদি করোনাভাইরাসের কারণে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা না আসতো"- যোগ করেন তিনি।
শিক্ষা জীবনে ভালো রেজাল্ট করা সালেহ আহম্মেদ মনে করেন, চাকরির পাশাপাশি এ উদ্যোগ যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় আর্থিক প্রয়োজন মেটাতে সাহায্য করবে।
'তাছাড়া ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করলেই চাকরি পাব- এমন কোনো নিশ্চিয়তা নেই বলেই হাতে বিকল্প এ ব্যবস্থা রাখা', বললেন সালেহ আহম্মেদ। সঠিকভাবে চাষাবাদ করলে কৃষিখাত থেকে যে কোনো চাকরির চেয়ে বেশি আয় হতে পারে বলে বিশ্বাস করেন সালেহ।

কীভাবে এ ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ হলেন, এমন প্রশ্নে সালেহ আহম্মেদ বলেন, গণমাধ্যমে এ সম্পর্কে জানার পাশাপাশি ইউটিউব থেকে তিনি তথ্য পেয়েছেন।
ফলটি সম্পর্কে জানতে চাইলে রুহুল আমিন বলেন, সাধারণত দেড় থেকে সাড়ে তিন কেজি পর্যন্ত হয় তাইওয়ানের গোল্ডেন ক্রাউন ও ব্লাক বস। একই প্রসঙ্গে সালেহ আহম্মেদ জানান, তাদের ক্ষেতে এখন পর্যন্ত দেড় থেকে আড়াই কেজি ওজনের তরমুজের ফলন বেশি হয়েছে।
শাহজাহানপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরে আলম জানান, পালাহার গ্রামে এবারই প্রথম বিদেশি জাতের তরমুজের চাষ হয়েছে। স্বাদ, ওজন এবং মানে ওই গ্রামে উৎপাদিত গোল্ডেন ক্রাউন ও ব্লাক বস বেশ উৎকৃষ্ট। প্রত্যেকটি তরমুজের পূর্ণফলন পেতে ৮০ থেকে ৮৫ দিন মাঠে রাখতে হবে বলেও জানান তিনি।
গাছের গোড়ায় পানি জমলে ফলে পচন ধরতে পারে এমন শঙ্কার কথা জানিয়ে তিনি একটু উঁচু জমিতে তরমুজটি চাষের পরামর্শ দিয়েছেন।