উড়তে থাকা মাশরাফির সিলেটের জয়রথ থামালেন লিটনরা

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) সিলেট ফ্র্যাঞ্চাইজি কখনই ভালো করে না বলে এবার প্রশ্নের শেষ ছিলো না। মাশরাফি বিন মুর্তজার নেতৃত্বে এবার সিলেট কেমন করবে, মাশরাফি থেকে শুরু করে কোচিং স্টাফ, এমনকি ফ্র্যাঞ্চাইজিটির মালিকপক্ষকেও এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে। উত্তর মিলেছে মাঠে, জয়ে শুরু করা সিলেট স্ট্রাইকার্স শাসন কায়েম করে একের পর এক ম্যাচ জিতেছে। অবশেষে তাদের জয়রথে লাগাম টানলো কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। ষষ্ঠ ম্যাচে সিলেটকে প্রথম হারের স্বাদ দিলো বিপিএলের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
মঙ্গলবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিলেট স্ট্রাইকার্সকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। এই হারে পয়েন্ট টেবিলে সিলেটের অবস্থানে কোনো পরিবর্তন আসেনি। ৬ ম্যাচে ৫ জয়ে ১০ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে তারা। চতুর্থ ম্যাচে গিয়ে প্রথম জয় পাওয়া কুমিল্লার এটা টানা দ্বিতীয় জয়। ৫ ম্যাচে জয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে চার নম্বরে আছে ইমরুল কায়েসের দল।
আসরে প্রথম হারের স্বাদ নেওয়া সিলেট এই ম্যাচে ব্যাটে-বলে চেনা ছন্দে খেলতে পারেনি, এমনকি তেমন লড়াইও করতে পারেনি তারা। টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নেমে চরম অগোছালো শুরু করা সিলেট লড়াইয়ের পুঁজি পায় থিসারা পেরেরা ও ইমাদ ওয়াসিমের ব্যাটে। ৭ উইকেটে ১৩৩ রান তোলে তারা। জবাবে ম্যাচসেরা লিটন কুমার দাসের অসাধারণ ইনিংসহ আরও কয়েকটি ছোট ইনিংসে ৬ বল হাতে রেখে ৫ উইকেটের জয় তুলে নেয় কুমিল্লা।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার লিটন কুমার ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। আগের ম্যাচের মতোই রিজওয়ানকে দর্শক হিসেবে এক পাশে দাঁড় করিয়ে রেখে ব্যাটিং প্রদর্শনী শুরু করেন লিটন। তার ব্যাটে ৭.১ ওভারে বিনা উইকেটে ৫৭ রান পায় কুমিল্লা। ১৮ বলে ২টি চারে ১৫ রান করা রিজওয়ানের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি।
এরপর অধিনায়ক ইমরুল ও লিটনের ব্যাটে এগোয় কুমিল্লা। ২৬ রানের জুটি গড়ে দলীয় ৮৩ রানে থামতে হয় ইমরুলকে। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ১৯ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ১৮ রান করেন। জনসন চার্লসের সঙ্গেও জুটি বাধেন লিটন, এই জুটি থেকে আসে ২৮ রান। অসাধারণ সব শটে ৪২ বলে ৭টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৭০ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলে আউট হন লিটন।
লিটনের বিদায়ের পর দ্রুত দুটি উইকেট হারায় কুমিল্লা, ফিরে যান খুশদিল শাহ ও জাকের আলী। তবে একপাশ আগলে রাখা চার্লস দলকে বিপদে পড়তে দেননি। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে নিয়ে কুমিল্লাকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডানহাতি এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ১৮ বলে একটি চারে ১৮ রানে এবং মোসদ্দেক ৯ বলে ৫ রানে অপরাজিত থাকেন। সিলেট অধিনায়ক মাশরাফি ৪ ওভারে ১৯০ রানে ২ উইকেট নেন। বিপিএলে তার উইকেট সংখ্যা দাঁড়ালো ৯, যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। শরিফুল্লাহ একটি উইকেট পান।
এর আগে ব্যাটিং করা সিলেট দশম ওভার পর্যন্ত ধুঁকে ধুঁকে ব্যাটিং করে। আবু হায়দার রনি, হাসান আলী, মকিদুল ইসলাম মুগ্ধদের বোলিং তোপে ৫৩ রানের মধ্যেই ৭ উইকেট হারিয়ে বসে টানা পাঁচ ম্যাচ জেতা সিলেট। এখান থেকে হাল ধরে দারুণ ব্যাটিং করা পেরেরা ও ইমাদ ৬৩ বলে ৮০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে সিলেটকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেন।
লঙ্কান অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার পেরেরা ৩৩ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ৪০ রানে অপরাজিত থাকেন। পাকিস্তানি অলরাউন্ডার ইমাদ ৩১ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় হার না মানা ৪৩ রান করেন। এ ছাড়া নাজমুল হোসেন শান্ত ১৯ বলে ১৩ ও মুশফিকুর রহিম ১৫ বলে ১৬ রান করেন। সিলেটের আর কেউ দুই অঙ্কের রান করতে পারেননি। কুমিল্লার হাসান আলী ও মকিদুল ২টি করে উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান আবু হায়দার ও তানভীর ইসলাম।