Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Monday
May 12, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
MONDAY, MAY 12, 2025
নিউমার্কেটের বিস্মৃত যশ-পরিচয়হীন এক শিল্পীর গল্প!

ফিচার

রাফিয়া মাহমুদ প্রাত
10 August, 2022, 11:35 am
Last modified: 10 August, 2022, 12:27 pm

Related News

  • রেমব্রান্ট থেকে পিকাসো: যেভাবে শনাক্ত করবেন ভুয়া চিত্রকর্ম
  • ছবিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অভিমুখে ‘মার্চ ফর গাজা’
  • ফিদা হুসেনের চিত্রকর্ম নিলামে বিক্রি হলো ১৩.৭ মিলিয়ন ডলারে
  • ছবিতে বিশ্বব্যাপী ঈদ উদযাপন
  • ছবিতে বিশ্বজুড়ে ঈদুল ফিতর উদযাপন

নিউমার্কেটের বিস্মৃত যশ-পরিচয়হীন এক শিল্পীর গল্প!

কয়েকবছর আগেও নিউমার্কেটে গেলে দেখা মিলতো তার। লাইব্রেরীর দোকানগুলোর সামনে কখনো দাঁড়িয়ে কখনোবা বসে ইজেলে রঙ ছড়াতেন তিনি। মানুষের আসা-যাওয়া, কেনাকাটা, ব্যস্ততা- সে এক জমজমাট দৃশ্য ফুটে উঠতো রঙ তুলির ছোঁয়ায়!
রাফিয়া মাহমুদ প্রাত
10 August, 2022, 11:35 am
Last modified: 10 August, 2022, 12:27 pm

শিল্পী আমিরুল ইসলাম/ ছবি- আমিরুল ইসলামের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে সংগৃহীত

'ধরুন, আপনি বসে আছেন, আমি এখানে কী দেখবো জানেন? দেখবো আপনার মন কেমন, মুড কেমন। আপনার মুড যদি তুলে ধরতে পারি ছবিতে, তবেই বুঝবো আমার ছবিটা হয়েছে।'

কথাগুলো বলছিলেন ফ্রিল্যান্সার শিল্পী আমিরুল ইসলাম।

কয়েকবছর আগেও নিউমার্কেটে গেলে দেখা মিলতো তার। লাইব্রেরীর দোকানগুলোর সামনে কখনো দাঁড়িয়ে কখনোবা বসে ইজেলে রঙ ছড়াতেন তিনি। কারও ছবি না, মার্কেটের ভেতরের দৃশ্য তুলে ধরতেন ক্যানভাসে। মানুষের আসা-যাওয়া, কেনাকাটা, ব্যস্ততা- সে এক জমজমাট দৃশ্য ফুটে উঠতো রঙ তুলির ছোঁয়ায়!

নাম না জানা এক শিল্পী

নিউমার্কেটে যে তিনি বসতেন, তা আরো প্রায় পাঁচ ছয় বছর আগের কথা। এখন তাকে আর দেখা যায়না।

নিউমার্কেটের পুরোনো দোকানে গিয়ে তার কথা জিজ্ঞেস করলে সবাই তাকে চিনতে পারে ঠিকই, কিন্তু কোনো পরিচয় দিতে পারে না তার। এমনকি সামান্য নামটুকুও কারও জানা নেই। বরং অনেকেরই ধারণা, তিনি হয়তো বেঁচে নেই আর।

ছবি- আমিরুল ইসলামের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে সংগৃহীত

যা-হোক, প্রায় দশ বারোটির মতো দোকান ঘুরে কেবল একটি দোকানেই পাওয়া গেল কিছুটা ইঙ্গিত। আর্ট কলেজের হোস্টেলে নাকি মাঝে মাঝে থাকতেন তিনি। কিন্তু সেখানে গিয়েও দেখা মিললো না তার। তবে জানা গেল, পাশেই আইয়ুব আলী কলোনীতে তিনি থাকেন। কলোনীর লোকজন জানালেন মসজিদের পাশেই তিনি থাকেন। স্থানীয়দের ভাষ্যে- বাসা খুঁজে পেলেও, তার দেখা পাওয়া ভার।

সকাল সকাল বের হয়ে গিয়ে একবারে রাতে ফেরেন তিনি। অন্তত তাকে যারা চেনে, তাদের মুখে এমনটাই শোনা যায়।

কিন্তু সৌভাগ্যবশত সেদিন তার দেখা মেলে। দরজার সামনে বসে খালি গায়ে লুঙ্গি পরে ফোন টিপছেন তিনি। জানতে চাইলে নাম বললেন, আমিরুল ইসলাম।

বয়স যে অনেক হয়েছে মুখভর্তি সাদা দাড়ি আর চুলেই তা স্পষ্ট। কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে গান শুনছিলেন এই প্রবীণ। বিশ্রামের দিন নাকি তিনি গান শোনেন। আজ তার বিশ্রামের দিন। তবে তার তেমন বাঁধাধরা ছুটি বা বিশ্রামের দিন নেই। ইচ্ছে হলে ছবি আঁকতে বের হোন, ইচ্ছে না করলে বাসাতেই বিশ্রাম নেন। সেদিন খুব রোদ থাকায় আর যাননি কাজে।

কাজ বলতে বুড়িগঙ্গার ওপাড়ে গিয়ে সোয়ারিঘাটের পাশে বসে ল্যান্ডস্কেপের ছবি আঁকা। তিনি একাই যান না সেখানে, সঙ্গে তার বন্ধুরাও যায়। সবাই আর্ট কলেজ থেকেই পড়াশোনা করেছেন। চাকরি থেকে অবসরের পর এখন একসঙ্গে পুরোনো বন্ধুরা মিলে নদীর পাড়ে বসে ছবি আঁকেন।

হাতেখড়ি জয়নুল আবেদীনের কাছেই

ছবি- আমিরুল ইসলামের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে সংগৃহীত

আগে তৈলচিত্র আঁকতেন বেশি। এখন ঝুঁকেছেন জলরংয়ের দিকে। ল্যান্ডস্ক্যাপে ছবি আঁকা বা প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি আঁকেন এখন। তবে, ছবির বিষয়বস্তু নির্বাচন করেন অনেকটা জয়নুল আবেদীনের মতো করে।

রিয়েলিজম, নান্দনিকতা পল্লীর বিষয় বস্তু, আবহমান বাংলার গ্রামীণ জীবনের এক নিবিড় পটভূমির চিত্রগুলোই আমিরুল খুঁজে বেড়ান। আর তাই নদীর ঐ পাড়ে গিয়ে বসে থাকেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ওখানকার জেলেদের জীবন, প্রাকৃতিক ও মানুষের তৈরি প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে সংগ্রামরত নর-নারীর বলিষ্ঠ শারীরিক গঠন, তাদের চলাফেরা তুলে ধরতে চান।

সুন্দরবনে গিয়ে নাকি একবার এমন একজন মৌয়াল নারীর সন্ধান পেয়েছিলেন। দুদিন তার পিছুও নিয়েছিলেন, তুলি আর রঙ দিয়ে ফুটিয়ে তুলতে। হয়তো শিক্ষকের আদর্শগুলো ছাত্ররা অনুকরণ করতে চায় বলেই আমিরুলের ক্ষেত্রেও তেমনটা ঘটেছে।

জয়নুল আবেদীন ছিলেন তার সরাসরি শিক্ষক। আমিরুল 'আবেদীন স্যার' বলেই ডাকেন তাকে। আমিরুলের প্রথম হাতেখড়িও জয়নুল আবেদীনের কাছেই।  

বাঁশের কঞ্চি দিয়েও স্কেচ করতেন

কলেজে পড়াকালীন বাসা থেকে তেমন একটা অর্থনৈতিক সাহায্য পেতেন না আমিরুল। যে কারণে রঙ তুলি, চারকোল কেনা ছিল তার জন্য কিছুটা দুঃসাধ্য ব্যাপার। তাই জয়নুল আবেদীন তাকে শেখালেন কীভাবে বাঁশের কঞ্চি দিয়েও স্কেচ করা যায়। বাঁশের কঞ্চির মাথা ব্লেড দিয়ে সুক্ষ্ম করে কেটে, দোয়াতের কালি দিয়ে আঁকতেন নিউজপ্রিন্টের কাগজের ওপর।

ছবি- আমিরুল ইসলামের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে সংগৃহীত

আমিরুল বলেন, 'আমার হাতটা খুলেছিল এসব দিয়ে আঁকার জন্যই। কিন্তু এখনকার চারুকলার শিক্ষার্থীদের এভাবে শেখানো হয়না।'

জয়নুল আবেদীনের সঙ্গে আমিরুল ইসলামের সখ্যতা কিন্তু শুধু আর্ট কলেজে পড়তে এসেই নয়। তারা ছিলেন এলাকার পরিচিত। দুজনেরই বাড়ি ময়মনসিংহে।

সাত মাসের কারাজীবন

যদিও সার্টিফিকেটে আমিরুল ইসলামের জন্মসাল ১৯৫৬, তবে আসল জন্মসাল নিজেও জানেন না তিনি। বাবা ছিলেন সরকারি চাকুরিজীবি। দুই বোন, দুই ভাইসহ চার ভাইবোন তারা। আমিরুল হলেন ছোটো ছেলে। লেখাপড়া করেছেন ময়মনসিংহ জিলা স্কুলে।

দশম শ্রেণিতে যখন ছিলেন তখন শুরু হয় '৭১ এর স্বাধীনতার যুদ্ধ। শরীরে রক্ত তখন গরম, কোনো ভয় না পেয়ে অন্য সবার মতো ঝাঁপিয়ে পড়লেন তিনিও। অস্ত্র হাতে নিয়ে শুধু যুদ্ধই করেননি, দু ভাই মিলে নিজ বাড়িতে অস্ত্র লুকিয়েও রাখতেন। একদিন ধরাও খেয়ে যান পাকিস্তানিদের হাতে। সেদিন ছিল ২৫ এপ্রিল ১৯৭১। এরপর দীর্ঘ সাতমাস তারা দুই ভাই হাজতেই বন্দি ছিলেন। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের দিন জেলখানা থেকে মুক্তি পান।

এরপর দু'ভাই ঢাকাতেই ছিলেন কিছুদিন। হাতে ছিল না কোনো টাকাপয়সা। তখন তো যোগাযোগের সুযোগও ছিল না। ফলে বাবা-মাকেও জানানো হয়নি কিছু। শেষে থাকার জন্য উঠলেন এক বাড়িতে। বাড়িওয়ালা ছিল ময়মনসিংহেরই মানুষ। ফলে সখ্যতাও গড়ে ওঠে অনেক। এরপর একদিন চলে যান বাড়িতে।  

বুয়েট স্কুলে শিক্ষকতা

বুয়েট স্কুলের প্রথম ৭ শিক্ষকের মধ্যে শিল্পী আমিরুল ইসলাম/ ছবি- সংগৃহীত

সেখানে আবার শুরু করলেন লেখাপড়া। এরপর ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা ইন্সটিউটে পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হয়ে যান পেইন্টিং বিভাগে। অর্থনৈতিক অবস্থা খুব বেশি সচ্ছল না থাকায়, দ্বিতীয় বর্ষ থেকেই বাড়ি থেকে টাকা নেওয়া বন্ধ করে দেন। ক্লাস শেষে নাস্তা করে, সন্ধায় পর্যন্ত ছবি আঁকতেন। সেই ছবি বিক্রি করে খরচ চালাতেন নিজের। আওয়ামী লীগের হয়ে ছাত্র রাজনীতিও করেছেন। গণজাগরণ মঞ্চের সময়ও জড়িত ছিলেন সম্মুখভাগের আন্দোলনে।

১৯৭৯ সালে  পাশ করে বের হোন। পরের বছরই ৮০ সালে ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি স্কুল অ্যান্ড কলেজ (বুয়েট স্কুল নামে বেশি পরিচিত) প্রতিষ্ঠা হলে, সেখানেই যোগদান করেন। তিনিসহ বুয়েট স্কুলে আরও ৬ জন শিক্ষক ছিল তখন। সেখানেও ড্রয়িংয়ের ক্লাস নিতেন তিনি।

ছেলেমেয়েদের কিছু কৌশল শিখিয়ে দিতেন, যেগুলো তারা আজও মেনে চলে। গর্ব করে বলেন, 'আমি কিন্তু কিছুই করতে পারিনি তেমন। কিন্তু আমার ছেলেমেয়েরা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান অনেক শিক্ষক একসময় আমার ছাত্র ছিল। এছাড়া, বিদেশ বিভূঁইতেও আমার ছাত্ররা আজ বড় বড় জায়গায় রয়েছে। এমন দুজনের সঙ্গে দেখা হয়েছিল, একজন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, অন্যজন আছে ব্রিটিশ নাসাতে।

ছবি আঁকার জন্য গেছেন ভারতেও

৩৭ বছর ধরে কাজ করেছেন এই স্কুলে। এরপর ২০১৭ সালে অবসরে চলে যান। তারপর থেকেই আজ পাঁচ বছর ধরে নদীর ওপাড়ে গিয়ে ছবি আঁকেন তিনি। এই ছবি আঁকার জন্যই কেবল তিনি ঢাকায় থাকেন। এছাড়া ঢাকায় থাকার তার আর কোনো কারণ নেই।

'ঢাকায় অনেক কিছু আছে, কিন্তু ওখানে ল্যান্ডস্ক্যাপ দৃশ্যের যে সাব্জেক্ট পাওয়া যায়, তা এঁকে শেষ করা যাবেনা। বাবু বাজার থেকে কামরাঙ্গীরচর পর্যন্ত আমাদের স্লট। আমরা দলবেঁধে ওখানে গিয়ে ছবি আঁকি,' তিনি বলেন।

তার বন্ধুরাও অনেকেই এখন দেশের বাইরে আর্ট কলেজের শিক্ষক। এখানে তার সহশিল্পীদের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করেন তিনি এখন।

'আগে প্রতিদিন ছবি বিক্রি হতো, ছবি আঁকতাম আর গুলশান, শাহবাগের গ্যালারীগুলোতে দিতাম।'

বাবা মা কেউ বেঁচে নেই তার। ভাইবোনরা সব সচ্ছল জীবন কাটাচ্ছেন। তবে আমিরুল বিয়ে করেননি আর। তিনি বলেন, একজন নারীর থেকেও তিনি বেশি ভালোবেসেছেন তার ছবিকে। তবে তারচেয়েও বড় কারণ, বাবার অবসরের পর পরিবারের হাল ধরতে গিয়ে আর হয়ে ওঠেনি তার বিয়ে করা।

শিল্পাচার্য্য জয়নুল আবেদীন, এস এম সুলতান, কামরুল হাসানের মতো শিক্ষকদের কাছ থেকে শেখার সুযোগ হয়েছিল তার। যে কারণে নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করেন তিনি। গর্ব করে বলেন, 'আমাদের একটা বেইজ আছে। স্পটে গিয়ে পরিবেশের সাথে মিশে যেতাম আগে। অনেকক্ষণ ধরে সাবজেক্ট বোঝার চেষ্টা করতাম।'

ছবি- আমিরুল ইসলামের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে সংগৃহীত

এই সাবজেক্ট বা পরিবেশ বোঝার জন্য তিনি ঘুরে ঘুরে বেড়ান। এই নিয়ে ভারত গেছেন ১৬ বার। সেখানে কাশ্মীরের শ্রীনগরের পাহাড়ের ছবি, আজমীর শরীফের দিঘীর ছবি, সুন্দরবনের প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি, সুরেশ্বরে গিয়ে বেদে জীবনের ছবি এঁকেছেন। ইচ্ছে হয় ইউরোপের দেশগুলোতে যাওয়ার। কিন্তু সে ক্ষমতা না থাকায় পাশের দেশ ভারতেই যান বেশিরভাগ সময়।

তবে করোনার পর আর যাওয়া হয়নি কোথাও। তবে এ নিয়ে তেমন আফসোস হলে, এস এম সুলতানের ঐ কথাটি মনে হয় তার। 'স্যার একবার তাদের ক্লাসে বলেছিলেন- কেন বিদেশ বিদেশ খোঁজো, যেখানে আমাদের দেশেই আঁকার মতো এত নৈসর্গিক দৃশ্য আছে?'

ছোটোবেলা থেকেই তার আঁকিবুঁকির দিকে ঝোঁক। তাই স্কুলের বড় ভাইরা তাকে দিয়ে ব্যবহারিক খাতাও করিয়ে নিতো। বিনিময়ে সিনেমা দেখতে নিয়ে যেত, চকলেট খাওয়াতো। একদিন তার হাতে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের ব্যবহারিক খাতাও এসে পড়লো। আর তখনি আত্মবিশ্বাসটা এলো।

ছবি আঁকা তার জন্য বেঁচে থাকার উপাদান

প্রতিদিন আঁকতে বসেন। কখনো কখনো ইচ্ছে না হলে একটু ঘুরেফিরে আসেন। প্রকৃতি দেখেন, খুঁজে বেড়ান, মনে কোনো দৃশ্য ধরলেই তা এঁকে ফেলেন। কখনো কখনো ছবি এক ঘণ্টাতেও এঁকে ফেলেন। আর কখনো সাত আটদিনও লেগে যায়। ছবির ভিতর প্রাণটুকু ঢেলে দিতে পারলেই হলো।

তবে এই প্রাণটুকু ঢেলে দিতে হলে যে চর্চাটা দরকার বলে মনে করেন আমিরুল, তা দেখতে পান না এখনকার চারুকলার শিক্ষার্থীদের মাঝে। আফসোস করে বলেন, 'ওরা তো ইন্টারনেট থেকে ছবি বের করে, আঁকতে থাকে। কিন্তু এভাবে তো ছবিতে প্রাণ থাকেনা। ছবি পরিপূর্ণতা পায় না।' তিনি যেমন শুরুর দিকে বাড়িতে গেলে গরু আঁকতেন। আমিরুল ইসলামের মতে, গরু দেখতে সহজ হলেও, এটা আঁকা কঠিন। তিনি সদরঘাটেও যেতেন শুধু ঘোড়া আঁকার জন্য।

জাতীয় পর্যায়ে তাকে নিয়ে তেমন হৈ হুল্লোড় নেই। মিডিওয়াতেও কখনো উঠে আসেনি তার নাম আলাদা করে। হয়তো কখনোই ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ছবি আঁকতে চাননি বলেই তাকে কেউ চেনেনা।

ছবি তার বিক্রি হয়েছে অনেক...। একসঙ্গে একবার দশটা ছবিও বিক্রি করেছিলেন এক শিল্পপতির কাছে। মূল্য পেয়েছিলেন ৩ লক্ষ টাকা। তবে ছবি তার জন্য শুধুই নেশা, পেশা হওয়ার সুযোগ দেননি। তাছাড়া একা মানুষের খরচ চালানোর জন্য মাসে ৩০-৩৫ হাজারের মতো হলেই তো হয়ে যায়। আর সেটুক গ্রামের জমি আর মুক্তিযোদ্ধা মাসিক ভাতা আর কিছু টুকটাক ব্যবসা থেকেই উঠে আসে। তাহলে আর কী দরকার? বললেন আমিরুল।  

করোনা নিয়ে তার একটি মজার স্মৃতি আছে। করোনার মধ্যে একদিন দরজা খোলা রেখে ফোন চার্জে দিয়ে ঘুমিয়ে গিয়েছিলেন। উঠে দেখেন, ফোন আর নেই। চুরি হয়ে গেছে। তখন করোনার কারণে সবকিছু বন্ধ থাকায় দুই তিন মাসের মতো ফোন কিনতে পারেননি আর তিনি। এদিকে টিভিতে তখন প্রচার হচ্ছে আজিমপুরের চায়না বিল্ডিং থেকে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সবাই ধরে নিয়েছে আমিরুল আর নেই বেঁচে। তাকে নিয়ে বাড়িতে মিলাদও হয়েছে। এরপর একদিন শেষে কামরাংগীরচর থেকে ফোন কিনে এনে বাড়িতে দিলেন ফোন। তখন তো সবাই অবাক। তিনিও অবাক হলেন নিজের মৃত্যুর কাহিনী শুনে।

করেছেন ভাস্কর্যের কাজও

বিভিন্ন চুক্তিতে কাজ করতেন, বিজ্ঞাপন সংস্থাতেও কাজ করেছেন কয়েকমাস। সেখানে পত্রিকার বিজ্ঞাপনে কাজ করতেন। এয়ারপোর্টে যেতে আগে যে দেয়ালে অনেকগুলো দেশের টাইলসে আঁকা ছবি দেখা যেত, সেখানেও রয়েছে আমিরুলের হাতের কাজ। টাইলগুলোতে আঁকা ছবিগুলো তারই আঁকা।

করেছেন ভাস্কর্যের কাজও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে অবস্থিত রাজু ভাস্কর্যটি আঁকার সময় বিভিন্ন প্রয়োজনে তিনি সাহায্য করেছেন শিল্পী শ্যামল চৌধুরীকে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজী নজরুল ইসলাম আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের যে ভাস্কর্যটি রয়েছে, সেটি তৈরির সময়ও শ্যামল চৌধুরীর সঙ্গে গিয়েছিলেন আমিরুল। শিল্পী মৃণাল হক ছিলেন তার রুমমেট।

এ পর্যন্ত কত ছবি এঁকেছেন তার তো কোনো ইয়ত্তা নেই। এঁকেছেন তো নিজের জন্য শুধু। মন চাইলেই এঁকেছেন, সাবজেক্ট পছন্দ হলেই এঁকেছেন। কখনো সাত আটদিন ধরে এঁকেছেন কেবল একটি ছবি। আবার অনেকগুলো কয়েক ঘণ্টাতেও শেষ হয়। '৬০ বছর আগে কলেজ থেকে নিয়ে এসেছিলাম একটি ইজেল। ঐ একই ইজেলে আবেদীন স্যারও কাজ করছেন,' বলেন তিনি।

কিন্তু কোন ছবিটি সবচেয়ে বেশি সুন্দর লেগেছে নিজের কাছে, এর উত্তরে তিনি বলেন, 'আর্টিস্টদের কাছে  সবথেকে সুন্দর ছবি বলতে কিছু নেই। বিখ্যাত জাভানিজ শিল্পী রনি রামল্যানকে যখন একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হয়, তিনি বলেছিলেন, "আমি তো এখনো সবচেয়ে সুন্দর ছবিটি আঁকিইনি।"
 
শিল্পীদের জীবন নিয়ে তার অনেক আগ্রহ

নামকরা শিল্পীদের জীবন থেকে অনেক কিছু নিজের জীবনেও প্রয়োগ করেন তিনি। মাস্টার অব স্কাই জে এম ডাব্লিউ টার্নারের শরৎকালের আকাশের জন্য টেবিলে রঙ ছিটিয়ে বসে থাকার কথা ভাবেন। আর ভাবেন, কতই না বিশাল শিল্পী তারা! কখনো কখনো মনে হয় কিছুই হচ্ছেনা আঁকা। কিন্তু দেখা যায়, হয়তো সেই ছবিটা দেখেই সবাই খুব হিংসে করছে তাকে। ভয় পান ভ্যানগগের মতো তারও কি শেষটা তেমন হবে?

একবার ছাত্র থাকাকালীন একটা প্রদর্শনীর জন্য বন্ধুরা মিলে সবাই ছবি আঁকছেন। কিন্তু কিছুতেই তার ছবি ভালো হচ্ছেনা। যা চাইছেন ছবিতে, তা আসছেনা ক্যানভাসে। কিন্তু চেষ্টা করে যেতেন। রমনা পার্কে বসে বসে আঁকতেন শুধু। এরপর প্রদর্শনীর দিন এলেন শিল্পী কামরুল হাসান। সবার ছবি দেখে শেষ পর্যন্ত আমিরুলের আঁকা ছবিটির দিকেই তার চোখ আটকে গেলো। ডাক দিয়ে পাঠালেন আমিরুলকে। আমিরুক তো সেদিন ভয়েই শেষ, হাত পা নড়ানড়ি অবস্থা। কামরুল হাসান তাকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন 'তুমিই করেছো এটা?' ভয়ে ভয়ে স্বীকার করলেন আমিরুল। এরপর পিঠে চাপড় দিয়ে শুধু কামরুল হাসান বলে গেলেন, 'করে যাও।' কামরুল স্যারের সেদিনের পিঠ চাপড়ানোতে অনেক শক্তি পেয়েছিলেন তিনি।

সবসময়ই তার জীবন ছিল বাউন্ডুলে। সংসার করেননি বলে, পিছুটানও নেই কোনো। তাই কখনো নিজ ঘরে, কখনো আর্ট কলেজের হোস্টেলের ছেলেদের সঙ্গে বিছানা ভাগাভাগি করে ঘুমিয়ে পড়েন। নিউমার্কেটের পোস্ট অফিসের গলির পাশে আর্ট কলেজ হোস্টেল পেরিয়ে সামনে আইয়ুব আলী কলোনীর এক ছোট্ট এককক্ষের ঘরে থাকেন তিনি।

ঘরের ভিতরটা দেখলে মনে হবে এ কোনো পরিত্যক্ত ভাঁড়ারঘর। যেখানে গাদাগাদি করে রাখা অনেক বস্তা, এলোমেলো সবকিছু। যেন সবকিছু শুধু এনে রেখে দেওয়া হয়েছে। এর পর আর হাত লাগানো হয়নি। দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসের মধ্যে আছেই শুধু একটি চাদর বিহীন বিছানা। তাতে মশারি অর্ধটাঙ্গানো,  মাটিতে কিছু এঁটো মেলামাইনের থালাবাসন, একপাশে একটা আয়না। এক বড় ঝুড়ভর্তি কাঁঠালের বিচি।

থাকার জায়গা এবং ঘরটি দেখলে যে কেউ নিঃসন্দেহে তাকে অসচ্ছল পরিবারে কেউই হয়তো ভাববে। একা মানুষ, একার সংসার। আর দশটা মানুষের কাছে আসলে এ কোনো সংসার নয়। কোনোভাবে বেঁচে থাকা শুধু। অবশ্য আমিরুলের মতো শিল্পীদের জীবন মানেই রঙ তুলি আর ক্যানভাস। আত্মীয় স্বজন থাকলেও, তাদের সঙ্গে আন্তরিকা কম। একাই রাঁধেন, একাই খান। রাঁধতে ইচ্ছে না হলে হোটেলে গিয়ে একবেলা খেয়ে আসেন। ঈদের দিনগুলোতেও থাকেনা কোনো ব্যাতিক্রম। একমনে ঘরে শুয়ে শুয়ে উত্তম সূচিত্রার গান শোনেন। আর ভাবেন শিল্পীদের কথা, রঙ তুলির কথা। এই তার স্বপ্ন, এই তার জীবন।

 

 

 

Related Topics

টপ নিউজ

ছবিওয়ালা / চিত্রশিল্প / ছবির গল্প / সবচেয়ে বড় পেইন্টিং / চিত্রকর্ম

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু বাঁধ নির্মাণ করছে চীন, পানি সংরক্ষণ শুরু
  • ভারতীয় সামরিক বাহিনীর মেরুদণ্ড এস-৪০০ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের পাকিস্তানি ভাষ্য
  • সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ আ.লীগের বিরুদ্ধে সরকার যেসব ব্যবস্থা নিতে পারবে
  • ব্যাংকের তহবিল প্রতারণায় এমডি-চেয়ারম্যানও দায়ী হবেন, অধ্যাদেশ জারি
  • ‘যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতি স্বাভাবিক’— তবে সব পাইলট ফিরে এসেছে: ভারতীয় বিমান বাহিনী
  • সপ্তাহব্যাপী আন্দোলনের পর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অব্যাহতি

Related News

  • রেমব্রান্ট থেকে পিকাসো: যেভাবে শনাক্ত করবেন ভুয়া চিত্রকর্ম
  • ছবিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অভিমুখে ‘মার্চ ফর গাজা’
  • ফিদা হুসেনের চিত্রকর্ম নিলামে বিক্রি হলো ১৩.৭ মিলিয়ন ডলারে
  • ছবিতে বিশ্বব্যাপী ঈদ উদযাপন
  • ছবিতে বিশ্বজুড়ে ঈদুল ফিতর উদযাপন

Most Read

1
আন্তর্জাতিক

বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু বাঁধ নির্মাণ করছে চীন, পানি সংরক্ষণ শুরু

2
আন্তর্জাতিক

ভারতীয় সামরিক বাহিনীর মেরুদণ্ড এস-৪০০ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের পাকিস্তানি ভাষ্য

3
বাংলাদেশ

সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ আ.লীগের বিরুদ্ধে সরকার যেসব ব্যবস্থা নিতে পারবে

4
অর্থনীতি

ব্যাংকের তহবিল প্রতারণায় এমডি-চেয়ারম্যানও দায়ী হবেন, অধ্যাদেশ জারি

5
আন্তর্জাতিক

‘যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতি স্বাভাবিক’— তবে সব পাইলট ফিরে এসেছে: ভারতীয় বিমান বাহিনী

6
বাংলাদেশ

সপ্তাহব্যাপী আন্দোলনের পর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অব্যাহতি

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net