ভেন্যুতে ট্রাম্পের নাম যুক্ত করার কনসার্ট বাতিল; শিল্পীর কাছে ১০ লাখ ডলারের ক্ষতিপূরণ দাবি
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির কেনেডি সেন্টারের নামের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম যুক্ত করার প্রতিবাদে এক সংগীতশিল্পী নির্ধারিত কনসার্ট বাতিল করেছিলেন। এ ঘটনার জেরে ওই শিল্পীর কাছে ১০ লাখ ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন কেনেডি সেন্টারের প্রধান।
চাক রেড নামের ওই সংগীতশিল্পী ২০০৬ সাল থেকে প্রতিবছর বড়দিনের আগের সন্ধ্যায় (ক্রিসমাস ইভ) এখানে অনুষ্ঠান পরিবেশন করে আসছেন। তবে এবার তিনি তার অনুষ্ঠান বাতিল করেছেন। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, পরিচালনা পর্ষদ এই স্থাপনার নাম বদলে 'ট্রাম্প কেনেডি সেন্টার' করার পক্ষে ভোট দিয়েছে।
'ট্রাম্প কেনেডি সেন্টার' এর প্রেসিডেন্ট রিচার্ড গ্রেনেল এক চিঠিতে বলেন, অনুষ্ঠান বাতিল করার বিষয়টি একটি 'পলিটিক্যাল স্টান্ট' এবং এর ফলে তাদের বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এ বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধ করা হলেও চাক রেড তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সাড়া দেননি।
অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই ট্রাম্প বোর্ডের বেশ কয়েকজন সদস্যকে বরখাস্ত করেন এবং তাদের জায়গায় নিজের মিত্রদের নিয়োগ দেন। এরপর ওই মিত্ররা ভোট দিয়ে ট্রাম্পকে বোর্ডের চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেন।
গ্রেনেল চিঠিতে চাক রেডকে উদ্দেশ করে লিখেছেন, তার অনুপস্থিতি 'চিরায়ত অসহিষ্ণুতা'র বহিঃপ্রকাশ এবং একটি অলাভজনক শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
তিনি আরও যোগ করেন, 'আপনার টিকিটের হতাশাজনক বিক্রি এবং দাতাদের সহায়তার অভাব, এর সঙ্গে শেষ মুহূর্তে অনুষ্ঠান বাতিল—সব মিলিয়ে আমাদের বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। এই রাজনৈতিক চালের জন্য আমরা আপনার কাছে ১০ লাখ ডলার ক্ষতিপূরণ চাইব, এটিই তার আনুষ্ঠানিক নোটিশ।'
গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউস ঘোষণা দেয় যে, এই সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের নাম বদলে 'দ্য ডোনাল্ড জে ট্রাম্প অ্যান্ড জন এফ কেনেডি মেমোরিয়াল সেন্টার ফর দ্য পারফর্মিং আর্টস' রাখার পক্ষে বোর্ড সর্বসম্মতভাবে ভোট দিয়েছে।
এর এক দিন পরই দেখা যায়,ভবনের সম্মুখভাগে প্রেসিডেন্টের নাম খোদাই করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইট এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বেশ কিছু অ্যাকাউন্টের নামও পরিবর্তন করা হয়েছে।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ভবনটি সংস্কারে ট্রাম্পের নেওয়া পদক্ষেপের স্বীকৃতি হিসেবেই নাম পরিবর্তনের এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে ডেমোক্র্যাট, বেশ কয়েকজন শিল্পী এবং কেনেডি পরিবারের সদস্যরা এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে চাক রেড বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) বলেন, 'আমি যখন কেনেডি সেন্টারের ওয়েবসাইটে এবং এর কয়েক ঘণ্টা পর ভবনের গায়ে নামের পরিবর্তন দেখলাম, তখন আমি আমাদের কনসার্ট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিই।'
ওহাইও অঙ্গরাজ্যের ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস সদস্য জয়েস বিটি সম্প্রতি সেন্টার থেকে ট্রাম্পের নাম মুছে ফেলার দাবিতে একটি মামলা করেছেন। মামলায় তিনি যুক্তি দেখিয়েছেন, ১৯৬৪ সালের এক আইনের মাধ্যমে এই সেন্টারের নামকরণ করা হয়েছিল। তাই নাম পরিবর্তন করতে হলে 'কংগ্রেসের আইনের' প্রয়োজন হবে।
মামলায় বলা হয়েছে, নাম পরিবর্তনের বিষয়ে আয়োজিত বৈঠকে বিটি ফোনে যুক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি যখন তার বিরোধিতার কথা জানাতে চান, তখন তাকে 'মিউট' করে রাখা হয়। মার্কিন আইন অনুযায়ী, যে কজন আইনপ্রণেতা এই সেন্টারের বোর্ডের সদস্য হিসেবে মনোনীত, বিটি তাদেরই একজন।
১৯৫০–এর দশকে এই জাতীয় পারফর্মিং আর্টস সেন্টারের কাজ শুরু হয়। ১৯৬৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫তম প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি আততায়ীর গুলিতে নিহত হওয়ার পর কংগ্রেস এটিকে তার স্মৃতিবিজড়িত স্থাপনা হিসেবে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়।
