বাড়ির আঙিনায় অবহেলায় ফেলে রাখা হয়েছিল জেমস বন্ডের গাড়ি; মেরামতের পর দাম উঠল ১০ লাখ পাউন্ড
জেমস বন্ডের সিনেমার সেই বিখ্যাত গাড়ি—অ্যাস্টন মার্টিন ডিবি৫। একসময় অবহেলায় পড়ে থেকে গাড়িটিতে জং ধরে গিয়েছিল। এলাকার বাচ্চারা ভাঙাচোরা গাড়িটিকে বানিয়েছিল খেলার সামগ্রী। সেই গাড়িই এখন সম্পূর্ণভাবে পুনর্নির্মাণের পর নতুনের মতো ঝকঝকে, দাম উঠেছে ১০ লাখ পাউন্ড।
গাড়িটির মালিক যুক্তরাজ্যের ফ্লিন্টশায়ারের বাসিন্দা জন উইলিয়ামস (৭১)। ১৯৭৩ সালে তিনি এই পুরোনো গাড়িটি কিনেছিলেন মাত্র ৯৮৫ পাউন্ড দিয়ে। বর্তমান বাজারে ১৫ হাজার পাউন্ডের মতো।
'গোল্ডফিঙ্গার' ও 'থান্ডারবল' সিনেমায় এই মডেলের গাড়ি ব্যবহার করেছিলেন জেমস বন্ড। ২০ বছর বয়সে উইলিয়ামস গাড়িটি শেষবারের মতো চালিয়েছিলেন। এরপর দীর্ঘদিন বাড়ির আঙিনায় অবহেলায় পড়ে ছিল সেটি। রোদ-বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে একপর্যায়ে মরিচা ধরে যায়।
তবে শেষ বয়সে এসে শখ জাগে গাড়িটি ঠিক করার। তিলে তিলে জমানো ৪ লাখ পাউন্ড খরচ করেন এর পেছনে। অ্যাস্টন মার্টিন কারখানায় দীর্ঘ তিন বছর ধরে চলে মেরামতের কাজ। গাড়ির ভেতরে পাওয়া গিয়েছিল ইঁদুরের বাসাও! প্রায় আড়াই হাজার ঘণ্টা ঘষামাজার পর জেমস বন্ডের সেই গাড়ি ফিরে পেয়েছে তার পুরোনো জৌলুশ।
জন উইলিয়ামসের গাড়ির শখ সেই ছোটবেলা থেকেই। মাত্র আট বছর বয়সে উপহার হিসেবে একটি খেলনা গাড়ি পেয়েছিলেন তিনি। সেই থেকেই অ্যাস্টন মার্টিনের প্রেমে পড়া। এরপর একটু একটু করে টাকা জমিয়ে ১৯ বছর বয়সেই নিজের স্বপ্ন পূরণ করেন তিনি। একটি অটোমোবাইল ম্যাগাজিনে বিজ্ঞাপন দেখে কিনে ফেলেন স্বপ্নের সেই গাড়ি।
১৯৭০–এর দশকের শেষের দিকে জন চাকরির সুবাদে মধ্যপ্রাচ্যে চলে যান। তখন গাড়িটি গ্যারেজে তুলে রাখা হয়। দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকায় একসময় তা বাড়ির সামনের খোলা জায়গায় ফেলে রাখা হয়। রোদ-বৃষ্টি আর ধুলোবালিতে গাড়িটির অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে।
পাড়ার দুরন্ত বাচ্চারাও গাড়িটির ওপর কম অত্যাচার করেনি। জনের স্ত্রী সুসান বলেন, 'প্রতিবেশীর বাচ্চারা গাড়ির বনেটের ওপর উঠে লাফালাফি করত। আমরা মানা করতাম, বকাবকি করতাম।'
জেমস বন্ডের সিনেমায় দেখা যায়, গাড়ির ছাদ খুলে চালকের আসনটি উড়ে বেরিয়ে যায় (ইজেক্টর সিট)। সিনেমার সেই দৃশ্য সত্যি ভেবে এক বাচ্চা গাড়ির ছাদে উঠে লাফালাফি শুরু করে। তার ধারণা ছিল, লাফালে হয়তো সিনেমার মতো ছাদ খুলে আসনটি বেরিয়ে আসবে!
১৯৬৩ থেকে ১৯৬৫ সালের মধ্যে মাত্র ১ হাজার ২২টি অ্যাস্টন মার্টিন ডিবি৫ তৈরি হয়েছিল। অভিনেতা শন কনারি জেমস বন্ড চরিত্রে অভিনয় করার সময় এই গাড়ি ব্যবহার করায় এর জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী হয়ে ওঠে।
তবে জন উইলিয়ামসের গাড়িটি আরও বিশেষ। এটি 'সিলভার বার্চ গ্রে' রঙের একটি ডিবি৫ ভ্যানটেজ মডেল। গোটা বিশ্বে এই মডেলের মাত্র ৩৯টি গাড়ি তৈরি হয়েছিল। জনের গাড়িটি সেগুলোরই একটি।
দীর্ঘদিন খোলা আকাশের নিচে পড়ে থেকে গাড়িটিতে মরচে ধরে গিয়েছিল, চালানোর মতো অবস্থাও ছিল না। তবু এর কদর কমেনি। অ্যাস্টন মার্টিন কোম্পানি ভাঙাচোরা অবস্থাতেই গাড়িটির দাম হেঁকেছিল ৫ লাখ পাউন্ড। জন ও সুসান দম্পতি চাইলেই তখন গাড়িটি বিক্রি করে দিতে পারতেন। কেনার লোকেরও অভাব ছিল না। কিন্তু তারা তা করেননি। পুরোনো সেই গাড়ি নতুনের মতো সাজিয়ে তোলার কঠিন চ্যালেঞ্জটাই তারা গ্রহণ করেছিলেন।
স্বপ্ন পূরণ হয়েছে ঠিকই, তবে জন ঠিক করেছেন শখের এই গাড়ি নিয়ে খুব একটা রাস্তায় বের হবেন না। কারণ, ১০ লাখ পাউন্ডের গাড়ি তো আর যেখানে-সেখানে পার্ক করে রাখা যায় না। তা ছাড়া আবহাওয়ার বিষয়টিও তাকে ভাবতে হয়।
জন বলেন, 'বৃষ্টি বা জমা পানির ওপর দিয়ে আমি গাড়িটি চালাতে চাই না। একবার অবহেলায় একে নষ্ট করেছি, দ্বিতীয়বার আর সেই ভুল করতে চাই না।'
