কে হবেন নতুন জেমস বন্ড? অ্যামাজন স্বত্ব কিনে নেয়ার পর চলছে জোর গুজব

'নতুন বন্ড হিসেবে কাকে বেছে নেবেন?'
চলতি সপ্তাহে এক্স-এ ৬৮ লাখ ফলোয়ারকে এ প্রশ্ন করেছিলেন অ্যামাজনের প্রধান জেফ বেজোস।
পরবর্তী জিরো জিরো সেভেন বাছাইয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখন বেজোসের হাতেই। বিবিসি নিউজের একটি প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট পোস্ট করে তিনি পরামর্শ চেয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, তার কোম্পানি এখন বিখ্যাত স্পাই ফ্র্যাঞ্চাইজির ক্রিয়েটিভ নিয়ন্ত্রণ পেয়েছে।
ড্যানিয়েল ক্রেইগের উত্তরসূরি কে হবেন, সেটাই এখন অ্যামাজন এমজিএম স্টুডিওসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। চলুন দেখা যাক, তারা কোন পথে এগোতে পারে এবং কারা আছেন বন্ড হওয়ার দৌড়ে।
বেজোসের প্রশ্নের উত্তরগুলো দেখলেই স্পষ্ট হয়ে যায়, অনলাইনে জনসাধারণের প্রথম পছন্দ হেনরি ক্যাভিল।
সাবেক সুপারম্যান অভিনেতা বহুদিন ধরেই বলে আসছেন, তিনি বন্ড চরিত্র করতে চান। ২০০৬ সালে 'ক্যাসিনো রয়্যাল'-এর জন্য যখন ড্যানিয়েল ক্রেগকে বেছে নেওয়া হয়েছিল, তখন ক্যাভিলই ছিলেন দ্বিতীয় সেরা।
সেই ছবির পরিচালক মার্টিন ক্যাম্পবেল ২০২৩ সালে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ক্যাভিলের অডিশন ছিল 'দুর্দান্ত'। তার কথায়, 'ড্যানিয়েল যদি না থাকত, তাহলে হেনরি দারুণ বন্ড হতে পারত।'
শুধু একটাই সমস্যা ছিল তখন। ক্যাভিলকে 'তখন একটু বেশিই তরুণ দেখাত'—বলেন ক্যাম্পবেল।
এদিকে দীর্ঘদিনের বন্ড প্রযোজক বারবারা ব্রকোলি ও মাইকেল জি উইলসন বরাবরই 'অল্পবয়সি বন্ড' নেওয়ার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন।
২০২২ সালে উইলসন বলেছিলেন, 'মনে রাখা দরকার, বন্ড কিন্তু ভেটেরান। সে যুদ্ধে লড়েছে। হয়তো এসএএস-এ ছিল কিংবা অন্য কোনো স্পেশাল ইউনিটে।'
অ্যামাজন হয়তো এবার অন্যভাবে ভাববে। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস হলো, এখন ৪১ বছর বয়সে ক্যাভিল হয়তো উল্টো বন্ড হওয়ার জন্য একটু বেশি বয়সি হয়ে গেছেন—বিশেষ করে তাকে যদি পরপর কয়েকটি সিনেমার জন্য ভাবা হয়।
বেজোসের পোস্টে আরও কয়েকটি জনপ্রিয় নাম উঠে এসেছে—টম হার্ডি, অ্যারন টেলর-জনসন ও ইদ্রিস এলবা।

কিছুদিন আগেও গুঞ্জন ছিল, এই চরিত্রের জন্য ৩৪ বছর বয়সি অ্যারন টেলর-জনসনকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে সেই খবরের কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। তবে ২০২৪ সালে 'ক্র্যাভেন' বক্স অফিসে ভরাডুবির শিকার হওয়ায় বন্ড হওয়ার দৌড়ে অ্যারন পিছিয়ে যেতে পারেন।
বুকমেকারদের হিসাবে শুক্রবার পর্যন্ত বন্ড চরিত্রের জন্য শীর্ষ পছন্দ ছিলেন 'হ্যাপি ভ্যালি' অভিনেতা জেমস নরটন। গত সপ্তাহের বাফটা অ্যাওয়ার্ডের লাল গালিচায় নরটন (৩৯) এই গুঞ্জন সম্পর্কে বলেছিলেন, 'এটা বেশ অদ্ভুত এবং বিভ্রান্তিকর... তবে মজারও বটে।'
তরুণ বন্ডের দিকে ঝুঁকবে অ্যামাজন?
'ক্যাচিং বুলেটস: মেমোয়ার্স অভ আ বন্ড ফ্যান'-এর লেখক মার্ক ও'কনেল বিবিসিকে বলেন, তিনি মনে করেন, অ্যামাজন এবার আগের তুলনায় আরও তরুণ একজন অভিনেতাকে বেছে নেবে এবং কোনো ব্রিটিশ অভিনেতাকেই নেবে।
তার কথায়, 'টম হার্ডি দারুণ হবেন, কিন্তু... আমি বলছি না যে তিনি বৃদ্ধ, তবে হ্যাঁ, একটু বেশি বয়সি।'
'অনেক নাম উঠে আসছে, যাদের দেখে আমি ভাবি—ওরা তো বন্ডের জন্য একটু বেশি বয়স্ক হয়ে গেছেন। আমি মনে করি, অ্যামাজন এবার বয়স কমাবে। আমার ধারণা, ৩০-এর গোড়ার দিকে কাউকে নেবে।'
ও'কনেল বলেন, পল মেসকাল বেশ ভালো পছন্দ হতে পারেন। 'বার্বি'তে অভিনয় করা কিংসলে বেন-আদির মধ্যে একটা 'শন কনারির স্টাইল আছে'।
'ব্রিটিশ ডিএনএ'
ও'কনেল আরও বলেন, 'হ্যারিস ডিকিনসন, যিনি এখন "বেবিগার্ল" ছবিতে নিকোল কিডম্যানের সঙ্গে অভিনয় করছেন, তিনি আপাদমস্তক ব্রিটিশ।'
'আমি সত্যিই চাই, তারা যেন ব্রিটিশ ডিএনএ ধরে রাখে। সেটি না করলে বড় ভুল হবে। তবে সময়ই বলে দেবে কী হবে।'

প্রসঙ্গত, ইতিহাসে দুবার বন্ড চরিত্রে ব্রিটিশ নন, এমন অভিনেতাকে নেওয়া হয়েছিল—অস্ট্রেলিয়ার জর্জ ল্যাজেনবি ও আয়ারল্যান্ডের পিয়ার্স ব্রসনান।
তাই আয়ারল্যান্ডের কিলিয়ান মারফি, এডেন টার্নার বা অস্ট্রেলিয়ার জ্যাকব এলর্ডির মতো তারকাদের সম্ভাবনাও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
তবে প্রথমবারের মতো কোনো মার্কিনকে কি বন্ড হিসেবে ভাবছে অ্যামাজন? যদি তা হয়, তবে অস্টিন বাটলারের নাম বেশ শোনা যাচ্ছে!
আরও যেসব ব্রিটিশ অভিনেতার এসেছে, তাদের মধ্যে আছে 'চ্যালেঞ্জার্স' তারকা জোশ ও'কনর (৩৪), 'ব্যাবিলন'-এর স্টুয়ার্ট মার্টিন (৩৯) ও 'হোয়াইট লোটাস'-এর থিয়ো জেমস (৪০)।
এছাড়া ক্যালাম টার্নার, রিচার্ড ম্যাডেন, উইল পোল্টার ও নিকোলাস হোল্ট-এর মতো অভিনেতাদের নামও উঠে এসেছে সম্ভাব্য বন্ড হিসেবে।
পুরুষ বন্ডই আসবে?
১৯৬২ সালে স্কটিশ অভিনেতা শন কনারি যখন প্রথমবারের মতো জেমস বন্ড চরিত্রে হাজির হন, তখন থেকেই এ চরিত্রের চুলের রং, চোখের রং ও উচ্চারণ পরিবর্তন হয়েছে।
তবে এ পর্যন্ত তার লিঙ্গ ও গায়ের রং কখনও বদলায়নি। 'নো টাইম টু ডাই'-এ সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য লাশানা লিঞ্চ জিরো জিরো সেভেন উপাধি পেলেও জেমস বন্ড চরিত্রটি পুরুষই ছিল।
২০২০ সালে বারবারা ব্রকোলি স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, 'বন্ড যে কোনো বর্ণের হতে পারে, কিন্তু সে অবশ্যই পুরুষ।'
তিনি আরও বলেন, 'আমি কোনো পুরুষ চরিত্রকে নারীতে রূপান্তরিত করতে আগ্রহী নই। নারীরা তার চেয়েও বেশি আকর্ষণীয় চরিত্র পাওয়ার যোগ্য।'
তার মতে, 'বন্ডকে অবশ্যই ব্রিটিশ হতে হবে, তবে ব্রিটিশ মানে যেকোনো জাতিগোষ্ঠীর হতে পারে।'

তার এই কথা মাথায় রেখে 'ব্রিজারটন' অভিনেতা রেগে-জাঁ পেজ ও কিংসলে বেন-আদির-এর নাম আলোচনায় রয়েছে প্রথম অশ্বেতাঙ্গ বন্ড হিসেবে। এছাড়া লুসিয়েন লাভিসকাউন্ট, পাপা এসিয়েড়ু, ড্যামসন ইদ্রিস, রিজ আহমেদ ও অ্যারন পিয়েরে-র মতো নামও আসছে ঘুরে-ফিরে।
তবে বেজোস যদি ব্রকোলির নিয়ম ভেঙে নারী বন্ডের কথা ভাবেন, তাহলে জনপ্রিয় পছন্দ হতে পারেন সিনথিয়া এরিভো।
একটা সময় ইদ্রিস এলবা-র নামও খুব আলোচিত ছিল। তবে ২০২৩ সালে তিনি জানান, বন্ড চরিত্রে তার নাম আসার পর যে বর্ণবিদ্বেষী প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছিল, তা পুরো ব্যাপারটাকেই 'বিরক্তিকর ও হতাশাজনক' করে তুলেছিল।
অ্যামাজন শুধু বন্ড নয়, অন্যান্য চরিত্র নিয়েও নতুনভাবে ভাবতে চলেছে।
'বন্ড গার্লস: বডি, ফ্যাশন অ্যান্ড জেন্ডার' বইয়ের লেখিকা মনিকা জার্মানা বলছেন, 'নারী চরিত্রগুলোকে আরও গভীর, আকর্ষণীয় ও স্বাধীনভাবে গড়ে তুললে ভালো হবে। কারণ বন্ড সিরিজের এখন বড়সংখ্যক নারীভক্তও আছে, যারা শুধু "বন্ড গার্ল" নয়, আরও শক্তিশালী চরিত্র দেখতে চায়।'
জার্মানা আরও বলেন, বন্ড সিরিজের ভিলেনরা সবসময় সমকালীন বিশ্বের ভয়-আশঙ্কাকে প্রতিফলিত করে। 'তাই এবারের ভিলেন কে হবে? …এআই? নাকি জলবায়ু পরিবর্তন? অথবা আধুনিক চরমপন্থি রাজনীতি?'
'হালকা মেজাজের' বন্ড কি ফিরবে?
বিবিসি রেডিও ১-এর চলচ্চিত্র সমালোচক আলি প্লাম্ব বলেন, জেমস বন্ডের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করা এখন 'জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নেশায়' পরিণত হয়েছে।
'আমি নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারছি না, কিন্তু হ্যারিস ডিকিনসন বা লিইয়ো উডঅলের নাম সামনে আসছে। তবে এখনও সবকিছু অনিশ্চিত।'
এম্পায়ার ম্যাগাজিনের ক্রিস হিউইট বলেন, তিনি 'ড্যানিয়েল ক্রেইগের কাজের সত্যিই প্রশংসা' করেন। তবে নতুন ম্যানেজমেন্ট যদি বন্ডের 'মজাদার দিকটা আবার ফিরিয়ে আনে', তাহলে ভালো হবে।
বন্ড-ভক্ত ও লেখক আজয় চৌধুরী বলেন, 'বন্ড চরিত্রটি আসলে ফ্যান্টাসি এবং মজার। আমি মনে করি, সেই বিনোদনের অনুভূতি আবার ফিরিয়ে আনা উচিত।'
তিনি বলেন, প্রযোজকরা সবসময় সিরিয়াস ও হালকা চালের বন্ডের মধ্যে ভারসাম্য রাখেন। যেমন—টিমোথি ডাল্টনের সিরিয়াস বন্ডের পর এসেছিলেন হালকা মেজাজের বন্ড ব্রসনান। তারপর ড্যানিয়েল ক্রেইগ আবার সিরিয়াস হয়ে ফিরলেন। এবার সেই মজার দিকটাই ফেরানোর সময়।
অজয় মনে করেন, নতুন বন্ড হিসেবে একজন অভিজ্ঞ, কিন্তু খুব বেশি তারকাখ্যাতি নেই এমন কাউকে বেছে নেওয়া হবে।
তার মতে, নতুন বন্ড হবেন প্রতিষ্ঠিত ব্রিটিশ অভিনেতা, যিনি হলিউড ও ব্রিটিশ টিভি-থিয়েটার দুই জায়গায় কাজ করেছেন। কিন্তু এতবড় তারকা নন যে সবাই আগে থেকেই তাকে বন্ড হিসেবে কল্পনা করে বসে আছে।"
'তারা এমন কাউকে নেবে, যার খ্যাতি একদম মাপমতো—না অতিরিক্ত জনপ্রিয়, না একদম নতুন। এবং বয়স হবে এমন, যাতে পরবর্তী তিন-চারটি সিনেমায় অভিনয় করতে পারেন।'