এইচ-১বি ভিসার অপব্যবহার করছে আউটসোর্সিং কোম্পানিগুলো, তবে বাতিল করা সমাধান নয়: মাস্ক
কিছু 'আউটসোর্সিং কোম্পানি' নিজেদের স্বার্থে এইচ-১বি ভিসা ব্যবস্থার অপব্যবহার করছে বলে মন্তব্য করেছেন টেসলা প্রধান ইলন মাস্ক। তবে তিনি মনে করেন, এর সমাধান পুরো ব্যবস্থাটি বাতিল করা নয় বরং এই অপব্যবহার বন্ধ করা। খবর বিবিসি'র।
যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোকে দক্ষ বিদেশি কর্মী নিয়োগের সুযোগ করে দেওয়া এই ভিসার প্রায় ৭০ শতাংশই ব্যবহার করেন ভারতীয় নাগরিকরা যারা মূলত প্রযুক্তি এবং চিকিৎসা খাতে কর্মরত।
গত সেপ্টেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এইচ-১বি ভিসা কর্মসূচির আবেদনকারীদের ওপর এক লাখ ডলার ফি আরোপ করেন যা ভারতীয় কর্মী এবং নিয়োগদাতাদের মধ্যে তীব্র উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
রোববার (৩০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় প্রকাশিত ভারতীয় উদ্যোক্তা নিখিল কামাতের পডকাস্টে কথা বলার সময় মাস্ক এসব মন্তব্য করেন। আলাপচারিতায় তিনি শুল্ক থেকে শুরু করে অভিবাসন এমন নানা বিষয়ে আলোকপাত করেন।
কথপোকথনের সময় মাস্ক জোর দিয়ে বলেন, 'আমেরিকা দীর্ঘ দিন ধরেই প্রতিভাবান ভারতীয় অভিবাসী কর্মীদের মাধ্যমে উপকৃত হয়েছে। তবে তিনি এইচ-১বি ভিসা কর্মসূচির 'অপব্যবহার' নিয়ে উদ্বেগের বিষয়টিও স্বীকার করেন।'
এইচ-১বি ভিসা লটারির মাধ্যমে দেওয়া হয়। আউটসোর্সিং এবং স্টাফিং কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে প্রায়ই অভিযোগ ওঠে যে, তারা এই ব্যবস্থার সঙ্গে কারসাজি করছে যেমন একই কর্মীর জন্য একাধিক আবেদন জমা দেওয়া অথবা বিশেষায়িত পেশার পরিবর্তে কম খরচে চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগে এই ভিসা ব্যবহার করা।
মাস্ক বলেন, 'আমাদের এই ব্যবস্থার সঙ্গে কারসাজি বন্ধ করতে হবে। তবে আমি অবশ্যই সেই দলে নই যারা এইচ-১বি কর্মসূচি বন্ধ করে দেওয়ার পক্ষে। ডানপন্থীদের কেউ কেউ এটি চান। আমার মনে হয় তারা বুঝতে পারছেন না যে এটা আসলে খুবই খারাপ হবে।'
চলতি মাসে একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্কের প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, ভারতীয় আউটসোর্সিং কোম্পানিগুলোর জন্য এইচ-১বি ভিসা অনুমোদনের হার গত এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে।
ন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর আমেরিকান পলিসি'র তথ্য অনুযায়ী, এই অর্থবছরে শীর্ষ সাতটি ভারতীয় কোম্পানির মাত্র ৪,৫৭৩টি প্রাথমিক নিয়োগের আবেদন অনুমোদিত হয়েছে। যা ২০১৫ সালের তুলনায় ৭০ শতাংশ কম এবং ২০২৪ সালের তুলনায় ৩৭ শতাংশ কম।
এনএফএপি-এর প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে, ট্রাম্পের নীতি 'নিয়োগদাতাদের জন্য প্রত্যাখ্যানের হার বৃদ্ধি এবং অন্যান্য সমস্যার কারণ হতে পারে'।
এইচ-১বি ভিসার পাশাপাশি মাস্ক তার দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে শুল্ক বা ট্যারিফ ব্যবহারের সিদ্ধান্তের বিষয়েও কথা বলেন। মাস্ক জানান, তিনি ট্রাম্পকে শুল্ক বাড়ানো থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করে 'ব্যর্থ' হয়েছেন। তার মতে, শুল্ক 'বাজারে বিকৃতি তৈরি করে' কিন্তু 'প্রেসিডেন্ট স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে তিনি শুল্ক ভালোবাসেন।'
চলতি বছরের শুরুর দিকে, যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে যার মধ্যে রাশিয়ান তেল কেনার জন্য ২৫ শতাংশ জরিমানাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। যদিও অন্য অনেক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, তবুও ভারতীয় পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ শুল্ক গুনতে হয়। দুই দেশের মধ্যে একটি বাণিজ্য চুক্তির জন্য আলোচনা চলছে যার লক্ষ্য চলতি বছরের শেষ নাগাদ একটি সমঝোতায় পৌঁছানো।
