ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি: ট্রাম্প বলছেন ‘অসামান্য অগ্রগতি’, তবে ৩ ইস্যুতে এখনও অনড় কিয়েভ
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের অবসান নিয়ে আলোচনায় 'কয়েকটি ছোটখাটো মতপার্থক্য' থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার দলের 'দারুণ অগ্রগতির' কথা তুলে ধরে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এর আগে জেনেভায় সপ্তাহান্তে অনুষ্ঠিত আলোচনা শেষে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও অত্যন্ত ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছিলেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন, 'বাকি থাকা বিষয়গুলো সমাধান অযোগ্য নয়।'
এদিকে আবুধাবিতে রুশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মার্কিন সামরিক দূতের বৈঠকের পর ঘোষণা করা হয় যে, 'ছোটখাটো কিছু বিষয়' ছাড়া ইউক্রেন শান্তি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন ও ইউরোপের মধ্যে একটি অভিন্ন অবস্থান তৈরির লক্ষ্যে বর্তমানে যে কঠিন ও সংবেদনশীল আলোচনা চলছে, সেটিকে ট্রাম্প প্রশাসন অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক হিসেবে তুলে ধরছে।
তবে আলোচনার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত এবং এ বিষয়ে অবগত একটি ইউক্রেনীয় সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে ভিন্ন কথা। সূত্রটির মতে, ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেনের কাছে যা চাইছে এবং কিয়েভ যা মেনে নিতে প্রস্তুত—এই দুইয়ের মধ্যে এখনো বিস্তর ফারাক রয়েছে।
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ থেকে কথা বলা ওই সূত্র ট্রাম্প কর্মকর্তাদের সঙ্গে একমত পোষণ করে জানান যে, গত সপ্তাহে ফাঁস হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের ২৮ দফার শান্তি প্রস্তাবের অধিকাংশ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। তবে তিনি বলেন, মতপার্থক্যের বিষয়গুলো মোটেও 'ছোটখাটো' নয়। অন্তত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে বড় ধরনের মতভেদ রয়ে গেছে, যা সংঘাত অবসানের প্রচেষ্টাকে ভেস্তে দিতে পারে।
তিনটি প্রধান বাধা-
প্রথমত, পূর্ব ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলের যে গুরুত্বপূর্ণ ভূখণ্ড রাশিয়া দখল করেছে কিন্তু পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি—সেই এলাকা নিয়ে সমাধান এখনো আটকে আছে। এসব এলাকায় ইউক্রেনের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ 'ফোর্ট্রেস বেল্ট'-এর বহু সুরক্ষিত শহর ও জনপদ রয়েছে। আগের মার্কিন প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, ইউক্রেনকে এই জমি হস্তান্তর করতে হবে এবং এটি রুশ-শাসিত একটি নিরস্ত্রীকৃত অঞ্চলে পরিণত হবে। তবে ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা জানান, বিষয়টিতে 'কিছু অগ্রগতি' হলেও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বা খসড়া ভাষা এখনো নির্ধারিত হয়নি। তাঁর কথায়, 'ইউক্রেন গ্রহণ করেছে—এ কথা বলা মোটেই ঠিক হবে না।'
দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্রের ২৮ দফার পরিকল্পনায় ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর আকার ৬ লাখে নামিয়ে আনার বিতর্কিত প্রস্তাবটি নিয়েও এখনো আলোচনা চলছে। ইউক্রেনীয় সূত্রটি জানায়, সৈন্য সংখ্যা কিছুটা বাড়ানোর বিষয়ে কথা হয়েছে, তবে সামরিক বাহিনীর ওপর এ ধরনের সীমাবদ্ধতা মেনে নেওয়ার আগে কিয়েভ আরও পরিবর্তন চায়।
তৃতীয়ত, ন্যাটোর সদস্য হওয়ার আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করার বিষয়টি। সূত্রটি সিএনএনকে স্পষ্ট জানিয়েছে, এই দাবি ইউক্রেনের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এ ধরনের ছাড় দেওয়া একটি 'খারাপ দৃষ্টান্ত' স্থাপন করবে। সূত্রটির মতে, এর মাধ্যমে কার্যত রাশিয়াকে পশ্চিমা সামরিক জোটের ওপর 'ভেটো' ক্ষমতা দেওয়া হবে, অথচ রাশিয়া 'এই জোটের সদস্যই নয়।'
দখলকৃত ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়া, ইউক্রেনকে নিরস্ত্রীকরণ এবং ন্যাটো থেকে স্থায়ীভাবে দূরে রাখা—এই তিনটি বিষয়ই ক্রেমলিনের ইউক্রেন যুদ্ধের মূল কারণ। সংঘাত বন্ধের জন্য এগুলো নিজেদের পক্ষে সমাধান করাও মস্কোর প্রধান শর্ত।
অন্যদিকে, এই তিনটি বিষয় ইউক্রেনের জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং দীর্ঘদিনের 'রেড লাইন'। এসব রক্ষার জন্য হাজার হাজার ইউক্রেনীয় সেনা প্রাণ দিয়েছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে এসব শর্ত থেকে সরে আসা ইউক্রেনীয় নেতাদের জন্য বিশাল ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
ট্রাম্প প্রশাসন যতই ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করুক না কেন, বাস্তবতা হলো—এগুলো কেবল 'কিছু মতপার্থক্য' বা 'ছোটখাটো বিষয়' নয়, যা সহজেই সমাধান করা সম্ভব।
