ক্লিম্টের 'পোট্রেট অব এলিজাবেথ লেডারার' চিত্রকর্মটি কেন ২৩৬ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হলো?
দশকের পর দশক ধরে লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা কিংবদন্তি অস্ট্রিয়ান শিল্পী গুস্তাভ ক্লিমটের 'পোট্রেট অব এলিজাবেথ লেডারার' ছবিটি নিউ ইয়র্কে নিলামে বিক্রি হয়েছে রেকর্ড ২৩৬.৪ মিলিয়ন ডলারে। এটি এখন আধুনিক শিল্পের ইতিহাসে নিলামে বিক্রি হওয়া এবং সথেবিজ নিলাম ঘরের সর্বকালের সবচেয়ে ব্যয়বহুল চিত্রকর্ম।
ক্লিমটেরই আরেক বিখ্যাত চিত্রকর্ম, ২০২৩ সালে লন্ডনে রেকর্ড গড়া 'লেডি উইথ আ ফ্যান' (১০৮ মিলিয়ন ডলার) এর মূল্যকে বহুগুণে ছাড়িয়ে গেছে এটি। শুধু তাই নয়, ক্লিমটের এই ক্যানভাসটি অ্যান্ডি ওয়ারহলের বিখ্যাত 'শট সেইজ ব্লু মেরিলিন' (১৯৫ মিলিয়ন ডলার)-এর রেকর্ড ভেঙে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দামি শিল্পকর্ম হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। এই তালিকার শীর্ষে আছে লিওনার্দো দা ভিঞ্চির 'সালভাতোর মুন্ডি' (৪৫২.৩ মিলিয়ন ডলার)।
কিন্তু কী এমন আছে এই চিত্রকর্মটিতে, যা এটিকে এত মূল্যবান করে তুললো?
৬ ফুট উচ্চতার এই পোর্ট্রেটটি ১৯১৪ থেকে ১৯১৬ সালের মধ্যে তিন বছর ধরে আঁকা হয়। এতে ভিয়েনার ধনী পরিবারের কন্যা এলিজাবেথকে পূর্ব এশিয়ার সম্রাটের চাদরে সাজানো অবস্থায় দেখানো হয়েছে।
এটি ক্লিম্টের দুইটি ব্যক্তিগত পূর্ণদৈর্ঘ্য পোর্ট্রেটের মধ্যে একটি। অস্ট্রিয়ার একটি দুর্গে আগুনে অন্য কাজগুলো ধ্বংস হওয়ার পর এটি আলাদা রাখা হয়েছিল।
আপাতদৃষ্টিতে 'বিল্ডনিস এলিজাবেথ লেডারার' (১৯১৪-১৬) ছবিটি ক্লিমটের তথাকথিত 'গোল্ডেন পিরিয়ড'-এর বিখ্যাত কাজ, যেমন 'পোট্রেট অব অ্যাডেল ব্লোচ-বাওয়ার-১' (১৯০৭) বা 'দ্য কিস' (১৯০৭-০৮)-এর মতো প্রকাশ্য জাঁকজমকপূর্ণ না-ও হতে পারে। তবে 'ভিয়েনা সেসেশন' আন্দোলনের চাকচিক্যের বদলে শিল্পী ক্লিমটের জীবনের শেষ বছরগুলোতে আঁকা এই ছবির নান্দনিক সৌন্দর্য সুপ্ত হলেও প্রচুর।
চিত্রকর্মটি ১৯৩৮ সালের আগে এলিজাবেথ লেডারারের বিলাসবহুল জীবনকে ফুটিয়ে তোলে। নাৎজি দখলের সময় এলিজাবেথ তার ইহুদি বংশের কারণে বিপদের মুখে পড়লে নিজেকে রক্ষার জন্য একটি গল্প তৈরি করেন—বলে দেন, ক্লিমটই তার প্রকৃত বাবা। যদিও ক্লিমট ইহুদি ছিলেন না। তবে এই দাবি নানা উপায়ে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলায় তিনি নাৎজিদের তাড়া থেকে বেঁচে যান। এলিজাবেথ ১৯৪৪ সালে মারা যান।
ছবিটি পরে নাৎজি জার্মানির অস্ট্রিয়া দখলের পর বাজেয়াপ্ত হয় এবং দীর্ঘকাল লোকচক্ষুর আড়ালে থাকে। ১৯৮০-এর দশকের শুরুর দিকে আবার বাজারে আসে এবং পরে লিওনার্ড এ লাউডার নামে এক বিলিয়নারের ব্যক্তিগত সংগ্রহে চলে যায়।
