গৃহবন্দী ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট বলসোনারো গ্রেপ্তার, ‘পালানোর চেষ্টা’ রুখতেই ব্যবস্থা
ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোকে শনিবার ফেডারেল পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে। তার বাড়ির সামনে সেদিন সমর্থকদের রাত জেগে পাহারা দেয়ার হওয়ার কথা ছিল। ঠিক তার আগেই পুলিশ তাঁকে আটক করে নিয়ে যায়।
এর মধ্য দিয়ে বলসোনারোর কয়েক মাসের গৃহবন্দী জীবনের অবসান ঘটল। অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রের দায়ে সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল। সেই রায়ের বিরুদ্ধে তিনি আপিল করছিলেন এবং এতদিন গৃহবন্দী ছিলেন।
বিচারপতির নির্দেশে আটক
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আলেকজান্ডার ডি মোরেস এক আদেশে এই আটকের নির্দেশ দেন। রয়টার্স সেই আদেশের কপি দেখেছে। বিচারক বলেছেন, বলসোনারোর বাড়ির সামনে সমর্থকরা ক্যাম্প করে বা তাঁবু গেড়ে পাহারার জন্য অবস্থান নিলে পুলিশের নজরদারিতে সমস্যা হতে পারে। এছাড়া, আগের রাতে সাবেক প্রেসিডেন্টের পায়ের 'অ্যাঙ্কল মনিটর' বা ট্র্যাকিং যন্ত্রের সাথে কারসাজি করার প্রমাণও পাওয়া গেছে বলে বিচারক উল্লেখ করেন।
বলসোনারোর আইনজীবীরা আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তাঁরা বলছেন, মূলত ওই রাতজাগা কর্মসূচির কারণেই বিচারক মোরেস এমন কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁরা এর বিরুদ্ধে 'যথাযথ আপিল' করবেন বলে জানিয়েছেন।
ফেডারেল পুলিশের এক প্রতিনিধি জানিয়েছেন, শনিবার ভোরে ব্রাসিলিয়ায় আটকের পর বলসোনারোর শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে।
পালানোর ঝুঁকি দেখছেন বিচারক
বিচারপতি আলেকজান্ডার ডি মোরেস তাঁর সিদ্ধান্তে লিখেছেন, 'দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির সমর্থকদের এই বেআইনি জমায়েত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। এতে গৃহবন্দি থাকার শর্তগুলো ঝুঁকির মুখে পড়বে এবং শেষমেশ তিনি পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেতে পারেন।'
বিচারক আরও উল্লেখ করেছেন যে, বলসোনারো এর আগে ব্রাসিলিয়ায় অবস্থিত আর্জেন্টিনার দূতাবাসে রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়ার কথা ভেবেছিলেন। আদালতের হাত থেকে বাঁচতে তাঁর এক ছেলে এবং ঘনিষ্ঠ কয়েকজন মিত্র ইতিমধ্যেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বলেও মোরেস উল্লেখ করেন।
এক বিবৃতিতে বলসোনারোর আইনজীবীরা বলেছেন, এই আটকের ঘটনায় তাঁরা 'গভীরভাবে হতভম্ব'। তাঁরা দাবি করেন, এটি ছিল কেবল একটি 'প্রার্থনা সভা', যা ব্রাজিলের সংবিধানে ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার হিসেবে স্বীকৃত।
তাঁরা আরও বলেন, 'পালিয়ে যাওয়ার গুরুতর প্রমাণের দাবি করা হলেও, বাস্তবতা হলো সাবেক প্রেসিডেন্টকে তাঁর নিজের বাড়ি থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর পায়ে ইলেকট্রনিক মনিটর ছিল এবং তিনি পুলিশি নজরদারিতেই ছিলেন।'
আগামী সোমবার বিচারপতি মোরেসের এই সিদ্ধান্তটি সুপ্রিম কোর্টের একটি প্যানেলের কাছে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।
২৭ বছরের কারাদণ্ড
২০২২ সালের নির্বাচনে বামপন্থী লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার কাছে হেরে যাওয়ার পর অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রের দায়ে গত সেপ্টেম্বরে এই ডানপন্থী নেতাকে ২৭ বছর তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
২০২৩ সালে লুলা যাতে ক্ষমতা গ্রহণ করতে না পারেন, সেই ষড়যন্ত্রের মূল হোতা এবং প্রধান সুবিধাভোগী হিসেবে বলসোনারোকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে আপিল প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় আদালত ওই মামলায় এখনো চূড়ান্ত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেননি।
তবে নিজের বিরুদ্ধে চলমান ফৌজদারি মামলা বন্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ চাওয়ার অভিযোগে তিনি অন্য একটি মামলায় অভিযুক্ত হন। সেই মামলায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা লঙ্ঘনের দায়ে বলসোনারো ১০০ দিনেরও বেশি সময় ধরে গৃহবন্দি ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ক্ষমতায় থাকাকালে বলসোনারোর বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল। ট্রাম্প এই মামলাকে 'উইচ হান্ট' বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়রানি বলে অভিহিত করেছেন। এমনকি তিনি এই মামলার বিচারক মোরেসের ওপর নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছিলেন। এছাড়া ব্রাজিলের বেশ কিছু পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন, যা তিনি এই মাস থেকে কিছুটা কমাতে শুরু করেছেন।
গৃহবন্দি থাকাকালে বলসোনারোর সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা ছিল। তবে রাজনৈতিক মিত্ররা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পারতেন।
শনিবার সন্ধ্যায় বাবার বাড়ির সামনে জড়ো হওয়ার জন্য সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন তাঁর ছেলে সিনেটর ফ্লাভিও বলসোনারো। অনলাইনে পোস্ট করা এক ভিডিওতে তিনি বলেন, 'আমি আপনাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি, আমাদের সঙ্গে লড়াই করতে আসুন। আপনাদের শক্তি, জনগণের শক্তি দিয়েই আমরা লড়াই করব এবং ব্রাজিলকে উদ্ধার করব।'
যদি আপিলে কাজ না হয়, তবে বলসোনারোর আইনজীবীরা তাঁর স্বাস্থ্যগত সমস্যার কথা বলে প্রায় তিন দশকের সাজা গৃহবন্দি থেকেই ভোগ করার অনুমতি চাইবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
২০১৮ সালের নির্বাচনী প্রচারণার সময় পেটে ছুরিকাঘাতের শিকার হয়েছিলেন সাবেক এই প্রেসিডেন্ট। সেই হামলার জেরে তাঁকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে এবং অস্ত্রোপচারও করাতে হয়েছে।
এর আগে, ২০২২ সালের পুনঃনির্বাচনী প্রচারণায় ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে ব্রাজিলের নির্বাচনী আদালত তাঁকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অযোগ্য ঘোষণা করেছিল।
