যুক্তরাজ্যে ট্রেনে ছুরিকাঘাতের ঘটনা ‘সন্ত্রাসবাদ নয়’ বলছে পুলিশ, ছাড়া পেলেন এক সন্দেহভাজন
ইংল্যান্ডে চলন্ত ট্রেনে ছুরিকাঘাতের ঘটনাটি 'একটি বিচ্ছিন্ন হামলা', এবং এর সঙ্গে 'সন্ত্রাসবাদের কোনো সম্পর্ক নেই' বলে জানিয়েছে পুলিশ।
শনিবারের এ ঘটনায় আহত ১০ জনের মধ্যে ৯ জনের অবস্থা শুরুতে আশঙ্কাজনক বলে জানানো হলেও, রোববার ব্রিটিশ ট্রান্সপোর্ট পুলিশ জানিয়েছে—এর মধ্যে পাঁচজনকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক।
পুলিশ জানায়, ঘটনার পর দুইজনকে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে একজনকে রোববার মুক্তি দেওয়া হয়েছে, অপর একজন এখনও হেফাজতে আছেন।
ক্যামব্রিজশায়ার পুলিশ জানায়, শনিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ৩৯ মিনিটে ডনকাস্টার থেকে লন্ডনের কিংস ক্রসগামী ৬টা ২৫ মিনিটের ট্রেনে একাধিক যাত্রীকে ছুরিকাঘাতের খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে যায়।
পুলিশ জানায়, সশস্ত্র পুলিশ সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে ট্রেনটি হান্টিংডনে থামায় এবং সেখানে দুইজনকে আটক করে।
ব্রিটেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হিলি বলেন, এই ঘটনায় সাধারণ মানুষের জন্য কোনো বৃহত্তর হুমকি দেখা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, 'প্রাথমিক মূল্যায়নে দেখা গেছে এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা, একটি বিচ্ছিন্ন হামলা।'
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ঘটনাটিকে 'ভয়াবহ ও গভীর উদ্বেগজনক' বলে মন্তব্য করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদও 'গভীর শোক' প্রকাশ করে নাগরিকদের অনলাইন গুজব বা অনুমান থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
ব্রিটিশ সরকার সামাজিক মাধ্যমে ভুল তথ্য রোধে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করছে। কারণ, ২০২৪ সালে ইংল্যান্ডের সাউথপোর্টে তিন কিশোরী হত্যার পর ছড়িয়ে পড়া গুজব দেশজুড়ে দাঙ্গা পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল।
এক প্রত্যক্ষদর্শী দ্য টাইমস পত্রিকাকে বলেন, তিনি দেখেছেন এক ব্যক্তি বড় ছুরি হাতে হামলা চালাচ্ছে। 'চারদিকে রক্ত ছড়িয়ে ছিল, মানুষ বাথরুমে লুকিয়ে পড়ছিল,' বলেন তিনি। আতঙ্কে পালানোর সময় অনেক যাত্রী একে অপরের পায়ে পিষ্ট হন। প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষায়, কেউ কেউ তখন 'উই লাভ ইউ' বলে চিৎকার করছিলেন।
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী স্কাই নিউজ-কে জানান, পুলিশের গুলিতে এক হামলাকারীকে টেসার গান দিয়ে কাবু করা হয়।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সাল থেকে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে ছুরিকাঘাতের অপরাধ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে।
বিশ্বের কঠোরতম অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন থাকা সত্ত্বেও দেশটিতে বেড়ে চলা ছুরিকাঘাতকে প্রধানমন্ত্রী স্টারমার 'জাতীয় সংকট' হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তার নেতৃত্বাধীন লেবার সরকার দেশব্যাপী অভিযান চালিয়ে গত এক বছরে প্রায় ৬০ হাজার ছুরি জব্দ বা আত্মসমর্পণ করাতে সক্ষম হয়েছে। সরকারের লক্ষ্য আগামী এক দশকে ছুরিকাঘাতের অপরাধ অর্ধেকে নামিয়ে আনা।
বর্তমানে জনসমক্ষে ছুরি বহনের শাস্তি সর্বোচ্চ চার বছরের কারাদণ্ড। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যে বলা হয়েছে, গত এক বছরে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনা ১৮ শতাংশ কমেছে।
এর আগে অক্টোবরের শুরুতে ম্যানচেস্টারের এক সিনাগগে ছুরিকাঘাতে দুজন নিহত হন—এর মধ্যে একজন ভুলবশত পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান। এ ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
