টানা আটবার নির্বাচিত হয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট এখন ক্যামেরুনের পল বিয়া
ক্যামেরুনের ৯২ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট পল বিয়া বিতর্কিত নির্বাচনে অষ্টম মেয়াদে জয়ী হয়েছেন। তীব্রভাবে বিতর্কিত এই নির্বাচনে তিনি ৫৩ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। খবর বিবিসি'র।
নির্বাচনে বিয়ার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী এবং একসময়ের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইসা চিরোমা বাকারি পেয়েছেন ৩৫ দশমিক ২ শতাংশ ভোট। দেশটির সাংবিধানিক কাউন্সিল এই ফলাফল ঘোষণা করেছে।
ফলাফল ঘোষণার আগে চিরোমা বাকারি দাবি করেছিলেন, তিনিই নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। তবে ক্ষমতাসীন ক্যামেরুন পিপলস ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (সিপিডিএম) তার দাবিকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
১২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হওয়া নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্যামেরুনে রক্তক্ষয়ী সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে চিরোমা বাকারির শত শত সমর্থক নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভে অংশ নেয় এবং তাদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষ হয়।
এদিকে নির্বাচনে জয়ের পর ভোটারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রেসিডেন্ট পল বিয়া বলেন, 'আবারও আমার ওপর আস্থা রাখার জন্য ধন্যবাদ।' তিনি আশা প্রকাশ করেন, 'আমরা একসঙ্গে শান্তিপূর্ণ, ঐক্যবদ্ধ ও সমৃদ্ধ ক্যামেরুন গড়ে তুলব।'
রোববার ক্যামেরুনের অর্থনৈতিক রাজধানী দোয়ালায় বিক্ষোভের সময় অন্তত চারজন নিহত হন। আঞ্চলিক গভর্নর স্যামুয়েল ডিয়ুদনে দিবুয়া জানান, কিছু পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা হয়েছিল এবং আত্মরক্ষায় নিরাপত্তা বাহিনী পাল্টা ব্যবস্থা নেয়।
সহিংসতা সোমবারও থামেনি। গারুয়া শহরে চিরোমা বাকারির বাড়ির কাছে গুলিতে কয়েকজন নিহত হন বলে ঘটনাস্থলে থাকা এক স্থানীয় সাংবাদিক বিবিসিকে জানান। প্রায় একই সময়ে বাকারি ফেসবুকে লেখেন, তার বাড়ির সামনে জড়ো হওয়া সাধারণ মানুষদের ওপর গুলি চালানো হচ্ছে। পরে তিনি অভিযোগ করেন, তার বিপরীত দিকের একটি বাড়িতে স্নাইপার মোতায়েন করা হয়েছে, যারা 'খুব কাছ থেকে গুলি চালাচ্ছে'।
এ বিষয়ে এখনো কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য আসেনি।
বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেছেন, ক্ষমতাসীন সিপিডিএম দল চিরোমা বাকারির কাছ থেকে 'বিজয় ছিনিয়ে নেওয়ার' চেষ্টা করছে।
রাজধানী ইয়াউন্দেতে পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত যে প্রায় সব দোকান ও বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। বেশিরভাগ সরকারি কর্মকর্তা ও অফিস কর্মীও ঘরে অবস্থান করছেন।
মোট ১০ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাদের মধ্যে ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেলো বুবা মাইগারিও। ভোটার উপস্থিতি ছিল ৫৮ শতাংশ। নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে অন্তত ১০টি আবেদন সাংবিধানিক পরিষদ খারিজ করে দিয়েছে।
বিয়ার বিতর্কিত বিজয় নিয়ে ইয়াউন্দের বাসিন্দা আমুংগোয়া নিকোদেমাস বিবিসিকে বলেন, 'আমরা আরেকটি দুঃস্বপ্নের শুরুতে দাঁড়িয়ে আছি।' তিনি আরও বলেন, 'অর্থনীতি ধসে পড়ছে, দুর্নীতি ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়েছে, অনেক কিছুই ঠিকমতো চলছে না।'
শাসক দল অনলাইন পোস্টে প্রেসিডেন্ট পোল বিয়াকে 'মহত্ত্ব ও আশার প্রতীক হিসেবে' অভিহিত করে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য অভিনন্দন জানিয়েছে।
১৯৮২ সালে ক্ষমতায় আসা বিয়া সাধারণ জনগণের মাঝে খুব কম দেখা দেন। তিনি প্রায়ই আফ্রিকার বাইরে সুইস হোটেলে সময় কাটান। তার দীর্ঘকালীন অনুপস্থিতি এবং বয়সের কারণে আগে এমন গুজবও ছড়িয়েছে যে তিনি মৃত।
তার নেতৃত্বের প্রশংসা হয়েছে স্কুল ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রসারণ এবং বাকাসি দ্বীপপুঞ্জে সংঘাত সমাধানের জন্য— যেখানে তেল সমৃদ্ধ অঞ্চলটি নাইজেরিয়ার পরিবর্তে ক্যামেরুনের হাতে হস্তান্তরিত হয়। তবে তার শাসনকালে ইংরেজিভাষী পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহ দীর্ঘদিন ধরে চলেছে। ৩৫ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে বেকারত্ব ৪০ শতাংশ, রাস্তাঘাট ও হাসপাতাল ভগ্নপ্রায়, আর মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত হয়েছে তার শাসনামলে।
বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, নির্বাচনের ফলাফল যদি জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন না করে, ক্যামেরুন রাজনৈতিক অস্থিরতায় পড়তে পারে।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের আফ্রিকা প্রোগ্রামের পরিচালক মুরিথি মুতিগা বলেন, 'অনেকে বিশ্বাস করছেন না বিয়া নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন, তাই তার ম্যান্ডেট দুর্বল।' তিনি আরও বলেন, "'পরিস্থিতি গুরুতর হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে দ্রুত একটি জাতীয় মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া শুরু করার আহ্বান জানাচ্ছি।'
