এশিয়া সফরে যাচ্ছেন ট্রাম্প; এরপর কী হবে কারোরই জানা নেই

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই সপ্তাহের শেষে এশিয়া সফরের জন্য রওনা হবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি মনে করছেন, এই বিশ্বব্যাপী ভ্রমণ তাকে এমন সব বড় সমস্যা সমাধানে সাহায্য করবে, যেখানে ভুল করার কোনো সুযোগই নেই।
এই সফরের ওপর নির্ভর করছে বিশ্ব অর্থনীতির ভবিষ্যৎ। বিশেষ করে, চীনা নেতা শি জিনপিংয়ের সাথে তার বৈঠকে বাণিজ্য উত্তেজনা কমবে কি না, তার ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে। একটি ভুল পদক্ষেপ আমেরিকার শিল্প খাতে বড় ধরনের ধাক্কা দিতে পারে। কারণ, এই শিল্পগুলো ইতিমধ্যেই ট্রাম্পের আগ্রাসী শুল্ক, সরকারি ছাঁটাই এবং রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিপর্যস্ত।
জানুয়ারিতে ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে ট্রাম্পের হুটহাট সিদ্ধান্ত নেওয়ার কৌশল কখনও সফল হয়েছে, আবার কখনও ব্যর্থ। যেমন, হামাস ইসরায়েলি জিম্মিদের ফিরিয়ে দিয়েছে, কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধবিরতি এখনও ভঙ্গুর। চীনের সাথে বাণিজ্য যুদ্ধ এই বছর কখনও বেড়েছে, কখনও কমেছে। আর ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনও থামেনি, যদিও ট্রাম্প এই সংঘাত সমাধানের চেষ্টা করেছেন।
ট্রাম্পের এই সফর ঘিরে বেশ রহস্য তৈরি হয়েছে। হোয়াইট হাউস থেকে তার ভ্রমণসূচির বেশিরভাগ অংশ সম্পর্কে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়নি। প্রেসিডেন্ট সোমবার বলেছেন, তিনি প্রথমে মালয়েশিয়া যাবেন, যেখানে একটি আঞ্চলিক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এরপর তিনি জাপান যাবেন, যেখানে তিনি বিদেশি বিনিয়োগ নিশ্চিত করার চেষ্টা করছেন।
তিনি দক্ষিণ কোরিয়াও সফর করবেন। সেখানে তিনি আরও কিছু বাণিজ্য সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কাজ করবেন এবং শি জিনপিংয়ের সাথে বসার আশা করছেন। যদিও বেইজিং এখনও তাদের বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেনি। সম্প্রতি দুই নেতা একে অপরকে শুল্ক ও রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছেন।
রবিবার এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, "চীনের প্রেসিডেন্ট শি-এর সাথে আমার খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে।" তিনি শুল্ক কমানোর প্রস্তাব দিলেও বলেন, "তাদেরও আমাদের কিছু দিতে হবে।" এর মধ্যে রয়েছে মার্কিন সয়াবিন কেনা, ফেন্টানিল তৈরির উপাদানের প্রবাহ কমানো এবং বিরল খনিজ পদার্থের ওপর থেকে বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া।
দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্পের প্রথম এশিয়া সফর
ট্রাম্পের সফরের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। কিন্তু তার পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে এক ধরনের অস্বাভাবিক অস্পষ্টতা রয়ে গেছে। এমন একজন প্রেসিডেন্টের জন্যও এটা বেশ অবাক করার মতো, যিনি মানুষকে সবসময় ধাঁধার মধ্যে রাখতে ভালোবাসেন।
ওয়াশিংটন-ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক জার্মান মার্শাল ফান্ডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর বনি গ্লেজার বলেন, "পুরো সফরটি শুরু থেকেই খুব অনিশ্চিত মনে হচ্ছে।"
ক্ষমতায় ফেরার পর এটিই ট্রাম্পের প্রথম এশিয়া সফর। যদিও তিনি হোয়াইট হাউসে এই অঞ্চলের নেতাদের আতিথ্য দিয়েছেন, তবে অন্যান্য মহাদেশের মতো এখানে তিনি তেমন কোনো গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলেননি।
'অনেক বড় চুক্তি' হবে, বলছে হোয়াইট হাউস
প্রেসিডেন্টের একজন মুখপাত্র আনা কেলি বলেছেন, ট্রাম্প "এশিয়ায় এমন সব বৈঠক এবং অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন, যা আমাদের দেশের জন্য অনেক বড় চুক্তি বয়ে আনবে।" তিনি আরও যোগ করেন, "সাথে থাকুন!"
এশিয়ায় ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি মূলত শুল্ক ব্যবহার করে অন্যায্য বাণিজ্য প্রথাগুলোকে শায়েস্তা করার ওপর কেন্দ্র করে। এর ফলে অনেক দেশই উদ্বিগ্ন, কারণ তারা রপ্তানির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল। ট্রাম্পের সাথে শি-এর বৈঠক নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে। দুই নেতার মধ্যে বিরোধ আন্তর্জাতিক অর্থনীতিকে এক ভয়াবহ সংকটের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
সফরসূচি এখনও পরিবর্তনশীল
মালয়েশিয়ায় দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট (ASEAN)-এর বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে মাত্র একবার এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন।
এরপর ট্রাম্পের গন্তব্য জাপান। ওয়াশিংটন এবং টোকিও এই বছরের শুরুতে একটি বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছেছে। এর মধ্যে মার্কিন প্রকল্পগুলোতে ৫৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
এই সফরের চূড়ান্ত এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পারে দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটি এই বছরের এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (APEC) শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করছে। ট্রাম্প বলেছেন, তিনি সেখানে থাকাকালীন শি-এর সাথে বসবেন।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে উত্তেজনা বেড়েছে, বিশেষ করে বিরল খনিজ পদার্থের রপ্তানিতে চীনের বিধিনিষেধ ঘোষণার পর। ট্রাম্প এমন উচ্চ হারে শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন, যা তিনি নিজেও স্বীকার করেছেন যে টেকসই হবে না।
সাবেক বাইডেন উপদেষ্টা দোশি বলেন, ট্রাম্পের সাথে শি-এর বৈঠকের তিনটি সম্ভাব্য ফলাফল হতে পারে—"চুক্তি, কোনো চুক্তি নয় অথবা বিপর্যয়।"
আরেকটি অমীমাংসিত প্রশ্ন হলো দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে ট্রাম্পের বাণিজ্য আলোচনা। মার্কিন শুল্কের কারণে দেশটির স্বয়ংচালিত শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
সাবেক মার্কিন বাণিজ্য আলোচক ওয়েন্ডি কাটলার বলেন, "আলোচনায় কিছুটা গতি আছে। কিন্তু আমি এটাকে বাড়িয়ে বলতে চাই না, কারণ এই তহবিল নিয়ে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে যা সমাধান করা প্রয়োজন।" তিনি আরও বলেন, আলোচনার একেবারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত গড়ানোটা অস্বাভাবিক নয়, কিন্তু এবার "অনেকগুলো বিষয় একসাথে ঝুলে আছে।"