এক মাস আগে জোবায়েদ হত্যার পরিকল্পনা হয়; বাঁচার আকুতি জানালেও সাহায্য করেননি বর্ষা: পুলিশ
পুলিশ জানিয়েছে, প্রায় এক মাস আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র (জবি) মো. জোবায়েদ হোসেনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন মাহির ও বর্ষা। গুরুতর আহত অবস্থায় জোবায়েদ বাঁচার আশায় বর্ষার বাসার দরজায় কড়া নাড়লেও তিনি সাহায্য করতে অস্বীকার করেন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় মাহির রহমান (১৯), বার্জিস শাবনাম বর্ষা (১৮) ও ফারদীন আহম্মেদ আয়লানকে (২০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।
পুলিশ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, মাহির ও বর্ষার মধ্যে প্রায় দেড় বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। টিউশন পড়াতে গিয়ে জোবায়েদের সঙ্গে বর্ষার ঘনিষ্ঠতা বাড়ে, যা মাহিরের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব হয়নি। এটি মূলত একটি ত্রিভুজ প্রেমের গল্প।
পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, মাহির গত সেপ্টেম্বর মাসে বিষয়টি জানতে পারেন। মাহিরকে বর্ষা বলেন যে জোবায়েদকে না সরালে তিনি মাহিরের হতে পারবেন না। এরপর গত ২৩ সেপ্টেম্বর জোবায়েদকে হত্যা পরিকল্পনা করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানতে পেরেছে পুলিশ।
তিনি আরও জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যার দিন বিকেল ৪টার দিকে জোবায়েদ টিউশন পড়াতে আসবেন—এই তথ্য মাহিরকে দেন বর্ষা। এরপর মাহির তার বন্ধু আয়লানকে নিয়ে বর্ষার বাসার নিচের গলিতে অবস্থান নেন।
তিনি আরও বলেন, জোবায়েদ বাসার নিচে পৌঁছালে তাদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে মাহির জোবায়েদকে বর্ষাকে ছেড়ে দিতে বলেন, কিন্তু জোবায়েদ রাজি হননি। তখন মাহির ছুরি দিয়ে জোবায়েদের গলায় আঘাত করেন, যার ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়।
ব্রিফিংয়ে লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মল্লিক আহসান উদ্দিন সামি বলেন, ছুরি দিয়ে আঘাতের পর জোবায়েদ বাঁচার জন্য সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠেন এবং একাধিক দরজায় কড়া নাড়েন, কিন্তু কেউ দরজা খোলেননি। তৃতীয় তলায় উঠে বর্ষার কাছে সাহায্য চাইলে তিনিও সাহায্য করতে অস্বীকার করেন।
মাহিরের মা নিজেই ছেলেকে থানায় দিয়েছেন কি না— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে এস এন নজরুল ইসলাম বলেন, আসামি গ্রেপ্তারের কৌশল হিসেবে পুলিশ মাহিরের পরিবারকে চাপ দিয়েছিল। তিনি বলেন, 'তারা স্বেচ্ছায় হস্তান্তর করেছেন এমন নয়, এটি ছিল পুলিশের কৌশল।'
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের মুহাম্মদ তালেবুর রহমান, লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মল্লিক আহসান উদ্দিন সামি এবং অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. আমিনুল কবীর তরফদার।
প্রসঙ্গত, গত ১৯ অক্টোবর বিকেলে রাজধানীর আরমানিটোলায় টিউশনিতে গিয়ে খুন হন পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী ও জবি ছাত্রদল আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জোবায়েদ হোসেন। আরমানিটোলার একটি বাড়ির সিঁড়িতে রক্তাক্ত অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত জোবায়েদের বড় ভাই এনায়েত হোসেন সৈকত রাজধানীর বংশাল থানায় তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
