পেন্টাগনে সংবাদসংগ্রহের নতুন বিধিনিষেধ প্রত্যাখ্যান প্রধান মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলোর

পেন্টাগনে সংবাদসংগ্রহের নতুন নির্দেশনা প্রত্যাখ্যান করেছে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো। তারা স্পষ্ট জানিয়েছে, এ নতুন নীতি সংবাদমাধ্যমের সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন করছে এবং তারা এতে সই করবে না।
গত মাসে প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথের উপস্থাপিত নতুন এই নীতি অনুযায়ী সাংবাদিকদের একটি হলফনামায় সই করতে বলা হয়েছে, যেখানে উল্লেখ করা আছে যে তারা কোনো 'অননুমোদিত তথ্য সংগ্রহে' যুক্ত হবেন না এবং নির্দিষ্ট এলাকায় প্রবেশের সময় তাদেরকে অবশ্যই পেন্টাগনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে থাকতে হবে। যারা মঙ্গলবার বিকেল ৫টার মধ্যে সই করবে না, তাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পেন্টাগনের প্রেস ক্রেডেনশিয়াল ফেরত দিতে বলা হয়েছে।
ওয়াশিংটন পোস্ট, নিউইয়র্ক টাইমস, সিএনএন, দ্য আটলান্টিক, দ্য গার্ডিয়ান, রয়টার্স, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস, এনপিআর, হাফপোস্ট এবং ব্রেকিং ডিফেন্সসহ বড় বড় সংবাদমাধ্যম সোমবার একযোগে ঘোষণা দেয় যে তারা এই চুক্তিতে সই করবে না।
ওয়াশিংটন পোস্টের নির্বাহী সম্পাদক ম্যাট মারে এক বিবৃতিতে বলেন, 'এই নীতি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানসিদ্ধ সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করছে। সংবাদ সংগ্রহ ও প্রকাশে এমন বিধিনিষেধ প্রথম সংশোধনীর পরিপন্থী।'
নিউইয়র্ক টাইমসের ওয়াশিংটন ব্যুরোপ্রধান রিচার্ড স্টিভেনসন বলেন, 'প্রায় এক ট্রিলিয়ন ডলার করদাতার অর্থে পরিচালিত মার্কিন সামরিক বাহিনী সম্পর্কে জনগণের জানার অধিকার রয়েছে। নতুন এই নীতি সাংবাদিকদের কাজের ক্ষেত্র সীমিত করছে।'
দ্য আটলান্টিক জানায়, এই বিধিনিষেধ সংবাদমাধ্যমের কার্যক্রমের ওপর মৌলিক হস্তক্ষেপ। পত্রিকাটির সম্পাদক জেফ্রি গোল্ডবার্গের সঙ্গে সাম্প্রতিক এক সরকারি যোগাযোগ বিভ্রাটের পর থেকেই পেন্টাগন ও হোয়াইট হাউসের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
রয়টার্সও সোমবার ঘোষণা দেয়, তারা এই নতুন নীতিতে সই করবে না। সংস্থাটি এক বিবৃতিতে জানায়, 'এই নীতি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে প্রদত্ত সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও তথ্যপ্রবাহের অধিকারকে আঘাত করছে।'
এনপিআর-এর প্রধান সম্পাদক থমাস ইভান্স বলেন, 'সরকারের এই নীতি সাংবাদিকদের স্বাধীনতা ও বিশ্বাসযোগ্যতার সঙ্গে আপস করতে বাধ্য করছে। আমরা এতে সই করব না।'
হাফপোস্টের সম্পাদক হুইটনি স্নাইডার বলেন, 'এই বিধিনিষেধ পুরোপুরি অসাংবিধানিক এবং সংবাদ সংগ্রহের প্রক্রিয়া দমন করার স্পষ্ট প্রচেষ্টা।'
এমনকি কিছু রক্ষণশীল গণমাধ্যমও নীতিতে সই করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। নিউজম্যাক্স জানিয়েছে, 'আমরা এই চিঠিতে সই করব না। অন্যান্য গণমাধ্যমের সঙ্গে মিলে আমরা এই বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি।'
পেন্টাগনের প্রতিক্রিয়া
পেন্টাগনের মুখপাত্র শন পারনেল বলেছেন, নতুন নীতি সাংবাদিকদের কোনো বাধ্যবাধকতা চাপাচ্ছে না, শুধু বোঝার স্বীকৃতি দিতে বলেছে। তবে তিনি অভিযোগ করেছেন, কিছু গণমাধ্যম 'অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া' দেখিয়ে অনলাইনে নিজেদের ভুক্তভোগী হিসেবে উপস্থাপন করছে।
পারনেল আরও বলেন, 'আমরা আমাদের নীতি বজায় রাখছি কারণ এটি আমাদের সেনা এবং দেশের নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।'
পেন্টাগন প্রেস অ্যাসোসিয়েশন (পিপিএ), যা প্রতিরক্ষা বিভাগের সংবাদকর্মীদের প্রতিনিধিত্ব করে, বলেছে যে এই নতুন নীতি সাংবাদিকদের অননুমোদিত তথ্য চাওয়া এবং পাওয়া উভয় ক্ষেত্রেই বাধা দেয়। পিপিএ মনে করছে, এটি স্বাধীন সাংবাদিকতাকে বাধাগ্রস্ত করার মতো এবং সাংবাদিকদের কেবল তাদের কাজ করার জন্যও আইনগত ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে।
পিপিএ আরও উল্লেখ করেছে, নীতি 'ডিওডির ভেতরে এক ধরনের ভয়ভীতি সৃষ্টি করছে, অনুমতি ছাড়া সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগকে অবৈধ হিসেবে দেখাচ্ছে—যা বাস্তবে সত্য নয়।'
অন্যদিকে, দক্ষিণপন্থী চ্যানেল ওয়ান আমেরিকা নিউজ এই নীতি মেনে নিয়েছে। চ্যানেলটির হোয়াইট হাউস সংবাদদাতা প্রায়ই প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরাসরি প্রশ্নের সুযোগ পান। চ্যানেলের হোস্ট ও সাবেক কংগ্রেসম্যান ম্যাট গেইটজ বলেন, 'আমাদের চ্যানেল এই যৌক্তিক শর্তগুলো মানতে প্রস্তুত।'
বিশ্লেষকদের মতে, নতুন নীতি মূলত সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে তথ্য সংগ্রহ ও প্রকাশের ক্ষমতা সীমিত করার চেষ্টা। এটি পেন্টাগনের কার্যক্রমকে সংবাদমাধ্যমের নজরদারির বাইরে রাখতে প্রয়াস চালাচ্ছে।