গাজায় হামাসের সঙ্গে দুগমুশ গোত্রের সংঘর্ষ, সাংবাদিকসহ নিহত অন্তত ২৮

ইসরায়েলি বাহিনীর আংশিক সেনা প্রত্যাহারের পর প্রভাবশালী দুগমুশ গোত্রের সঙ্গে হামাসের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে এক ফিলিস্তিনি সাংবাদিকসহ অন্তত ২৮ জন নিহত হয়েছেন।
শনিবার থেকে শুরু হওয়া এই নজিরবিহীন অভ্যন্তরীণ সংঘাতে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় নতুন করে গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এই সংঘাতের খবর সংগ্রহ করতে গিয়েই রোববার গাজা শহরের সাবরা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান ফিলিস্তিনি সাংবাদিক সালেহ আল-জাফরাউয়ি (২৮)। যুদ্ধের খবরাখবর নিয়ে ভিডিও তৈরি করে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছিলেন।
আল-জাজিরা জানিয়েছে, 'প্রেস' লেখা জ্যাকেট পরা অবস্থায় তার মরদেহ পাওয়া যায়। সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী এই সংঘাতে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ২৭০ জনের বেশি গণমাধ্যমকর্মী নিহত হলেন।

স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, ইসরায়েলি সেনারা সরে যাওয়ার পর বিভিন্ন এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে হামাস সম্প্রতি তাদের নিরাপত্তা বাহিনীর প্রায় সাত হাজার সদস্যকে পুনরায় তলব করেছে। একই সঙ্গে সামরিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পাঁচজনকে নতুন গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে তারা।
'গাজাকে আইন অমান্যকারী এবং ইসরায়েলের সহযোগীদের থেকে মুক্ত করার' লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
এর পরপরই গাজার বিভিন্ন জেলায় বেসামরিক পোশাকে এবং গাজা পুলিশের নীল উর্দিতে সশস্ত্র হামাস সদস্যদের টহল দিতে দেখা যায়। যদিও হামাসের মিডিয়া অফিস রাস্তায় যোদ্ধা মোতায়েনের বিষয়টি অস্বীকার করে।
এই তৎপরতার মধ্যেই গাজা শহরের সাবরা এলাকায় দুগমুশ গোত্রের বন্দুকধারীদের গুলিতে হামাসের এলিট ফোর্সের দুই সদস্য নিহত হলে পরিস্থিতি বিস্ফোরন্মুখ হয়ে ওঠে। নিহতদের একজন ছিলেন হামাসের সশস্ত্র শাখার সামরিক গোয়েন্দা প্রধান ইমাদ আকেলের ছেলে।
প্রকাশ্য রাস্তায় তাদের মৃতদেহ ফেলে রাখা হলে হামাসের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং বড় ধরনের সশস্ত্র পদক্ষেপের আশঙ্কা তৈরি হয়।
এর জবাবে হামাস সদস্যরা দুগমুশ গোত্রের একটি বিশাল এলাকা ঘিরে ফেলে, যেখানে তিন শতাধিক সশস্ত্র সদস্য অবস্থান করছিল। এরপরই উভয় পক্ষের মধ্যে তীব্র লড়াই শুরু হয়।

শনিবার থেকে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষে দুগমুশ গোত্রের ১৯ জন এবং হামাসের ৮ সদস্য নিহত হয়েছেন। হামাস পরিচালিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, 'একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায়' তাদের আটজন সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তেল আল-হাওয়া এলাকায় ভয়াবহ গোলাগুলির মধ্যে কয়েক ডজন পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়। যুদ্ধের সময় বহুবার বাস্তুচ্যুত হওয়া এসব মানুষ আতঙ্কের মধ্যে পড়েন। একজন বাসিন্দা বলেন, 'এবার মানুষ ইসরায়েলি হামলা থেকে পালাচ্ছিল না, তারা পালাচ্ছিল নিজেদেরই লোকদের কাছ থেকে।'
সংঘর্ষের সূত্রপাত নিয়ে উভয় পক্ষই পরস্পরকে দোষারোপ করেছে। দুগমুশ পরিবারের একটি সূত্র স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় তাদের বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় তারা সাবেক জর্ডান হাসপাতাল ভবনে আশ্রয় নিয়েছিল। হামাস সেখান থেকে তাদের উচ্ছেদ করে নিজেদের ঘাঁটি স্থাপন করতে চেয়েছিল।
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় নতুন করে এই অভ্যন্তরীণ রক্তপাতের ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে গভীর উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। গাজায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকা একজন অবসরপ্রাপ্ত নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, যুদ্ধের সময় হামাসের অস্ত্রাগার থেকে হাজার হাজার অস্ত্র লুট হয়েছে, যা গৃহযুদ্ধের জন্য একটি ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
এদিকে, গাজা বিষয়ে একটি শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মিসরের শারম আল-শেখে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বনেতারা যোগ দেবেন। তবে সেই আলোচনায় ইসরায়েল বা হামাসের কোনো প্রতিনিধি থাকছে না।