ফ্লোটিলার অধিকারকর্মীদের নির্যাতনের অভিযোগ; ইসরায়েলি মন্ত্রীর দাবি, ‘সন্ত্রাসীদের মতোই আচরণ প্রাপ্য’

ফিলিস্তিনের গাজা অভিমুখে যাত্রা করা ত্রাণবাহী নৌবহরের প্রায় সব নৌযানে থাকা অধিকারকর্মীরা ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর মুক্তি পাওয়া আরও কয়েকজন তাদের ওপর চালানো দুর্ব্যবহারের অভিযোগ করেছেন।
মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরে তারা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি কারাগারে তাদের সঙ্গে 'নিষ্ঠুর' ও 'অমানবিক' আচরণ করা হয়েছে। দিনের পর দিন অভুক্ত রাখা, টয়লেটের পানি পান করতে বাধ্য করা এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মতো গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন তারা।
'গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা' নামের এই নৌবহরটি গাজার ওপর আরোপিত নৌ-অবরোধ ভেঙে ফিলিস্তিনিদের জন্য ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছিল। গত সপ্তাহে ইসরায়েলি বাহিনী নৌবহরটির পথ রোধ করে এবং এতে থাকা প্রায় ৪৫০ জন কর্মীকে গ্রেপ্তার করে। এদের মধ্যে সুইডিশ জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থুনবার্গ এবং নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি মান্ডলা ম্যান্ডেলাও ছিলেন।
'আমাদের হাঁটু গেড়ে থাকতে বাধ্য করা হয়'
শনিবার ইসরায়েল থেকে তুরস্কের ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে পৌঁছান ইতালীয় সাংবাদিক লরেঞ্জো ডি'অগস্টিনো। তিনি অভিযোগ করেন, ইসরায়েলিরা তার জিনিসপত্র ও টাকা-পয়সা 'চুরি করেছে'। তিনি বলেন, আটক কর্মীদের কুকুর দিয়ে ভয় দেখানো হয় এবং বন্দুকের লেজার তাক করে আতঙ্কিত করার চেষ্টা করা হয়।
আরেক অধিকারকর্মী পাওলো দে মন্টিস জানান, প্রহরীদের হাতে তাকে 'ক্রমাগত মানসিক চাপ ও অপমানের' শিকার হতে হয়েছে। তার হাত জিপ-টাই দিয়ে বেঁধে ঘণ্টার পর ঘণ্টা একটি প্রিজন ভ্যানে আটকে রাখা হয়েছিল।
তিনি বলেন, 'আপনাকে তাদের মুখের দিকে তাকাতে দেওয়া হতো না, সব সময় মাথা নিচু করে রাখতে হতো। আমি মাথা তুলতেই একজন এসে আমাকে ঝাঁকুনি দিয়ে মাথার পেছনে চড় মারে।'
তিনি আরও বলেন, 'তারা আমাদের চার ঘণ্টা ধরে হাঁটু গেড়ে বসে থাকতে বাধ্য করেছিল।'
'টয়লেটের পানি পান করেছি'
অন্যদিকে, মালয়েশিয়ার দুই বোন এবং গায়িকা-অভিনেত্রী হেলিযা হেলমি ও হাজওয়ানি হেলমি ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে 'পাশবিক' ও 'নিষ্ঠুর' আচরণের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। হাজওয়ানি বলেন, 'ভাবতে পারেন, আমরা টয়লেটের পানি পান করেছি? কয়েকজন খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিল, কিন্তু তারা (ইসরায়েলি বাহিনী) বলেছিল, 'তারা কি মরে গেছে? যদি না মরে, তাহলে এটা আমার সমস্যা নয়।' তারা খুবই নিষ্ঠুর।'
হেলিযা জানান, তাকে তিন দিন অভুক্ত রাখা হয়েছিল। শনিবার তিনি বলেন, 'এর আগে আমি ১ অক্টোবর খেয়েছিলাম। আজ আমার প্রথম খাবার। অর্থাৎ তিন দিন আমি কিছুই খাইনি—শুধু টয়লেটের পানি পান করেছি।'
এর আগেও মুক্তি পাওয়া কর্মীরা একই ধরনের অভিযোগ করেছিলেন। ইতালীয় কর্মী সিজার তোফানি জানিয়েছিলেন, তাদের সঙ্গে 'ভয়ংকর আচরণ' করা হয়েছে। আরেক সাংবাদিক সেভেরিও তোমাসি অভিযোগ করেন, তাদের ওষুধ আটকে রাখা হয়েছিল এবং 'বানরের মতো' আচরণ করা হয়েছিল।
তবে এসব অভিযোগগুলোকে 'ডাহা মিথ্যা' বলে উড়িয়ে দেন ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং কট্টর-ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির। যদিও তিনি বলেন, আটক কর্মীদের সঙ্গে কঠোর আচরণের জন্য তিনি 'গর্বিত'।
বেন-গভির এক বিবৃতিতে বলেন, 'আমি গর্বিত যে আমরা নৌবহরের কর্মীদের সন্ত্রাসবাদের সমর্থক হিসেবে বিবেচনা করেছি। যে সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে, সে একজন সন্ত্রাসী এবং সন্ত্রাসীদের মতো আচরণই তার প্রাপ্য।'
এর বিপরীতে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, থুনবার্গ এবং অন্য কর্মীদের ওপর দুর্ব্যবহারের অভিযোগগুলো 'মিথ্যা'। তাদের দাবি, আটককৃতদের সমস্ত আইনি অধিকার রক্ষা করা হয়েছে।
ইসরায়েলের এই কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। পাকিস্তান, তুরস্ক এবং কলম্বিয়াসহ বিভিন্ন দেশ এর নিন্দা জানিয়েছে। বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ হয়েছে এবং গ্রিস লিখিতভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছে।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রোববার আরও ২৯ জন কর্মীকে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে, তবে এখনও অনেকে আটক রয়েছেন। স্পেন ও গ্রিস জানিয়েছে, তাদের আটক নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে।