দার্জিলিংয়ে ভারী বৃষ্টিপাতে ভূমিধস, নিহত ১০: আগামীকাল সরেজমিন পর্যবেক্ষণে যাচ্ছেন মমতা

পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলের দার্জিলিং পাহাড়ি এলাকায় টানা ভারী বর্ষণে একের পর এক ভূমিধসে অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং বহু মানুষ নিখোঁজ হয়েছেন।
গতকাল শনিবার (৪ অক্টোবর) ভোর থেকে শুরু হওয়া দুর্যোগে ঘরবাড়ি ভেসে গেছে, সড়ক ভেঙে পড়েছে এবং জেলার একাধিক প্রত্যন্ত গ্রাম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দার্জিলিং জেলা প্রশাসন ও জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ) জানিয়েছে, সারসালি, জসবীরগাঁও, মিরিকবাস্তি, ধরগাঁও (মেচি), নাগরাকাটা এবং মিরিক লেক এলাকা থেকে মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
দার্জিলিংয়ের উপ-বিভাগীয় কর্মকর্তা (এসডিও) রিচার্ড লেপচা ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছেন, স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও এনডিআরএফ যৌথভাবে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম চালাচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিহতদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন, তবে এর নির্দিষ্ট পরিমাণ উল্লেখ করেননি। মমতা জানিয়েছেন, আগামীকাল ৬ অক্টোবর তিনি উত্তরবঙ্গে গিয়ে পরিস্থিতি সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করবেন। এই দুর্যোগে সেখানে বিপুল সংখ্যক পর্যটকও আটকা পড়েছেন।
এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ শোক প্রকাশ করে লিখেছেন, "দার্জিলিংয়ে সেতু ভেঙে এবং ভূমিধসে প্রাণহানির ঘটনায় আমি গভীরভাবে ব্যথিত। নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা রইল। আহতরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক।" তিনি আরও বলেন, দার্জিলিং ও আশপাশের পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং সব ধরনের সহায়তা নিশ্চিত করা হবে।
নাগরাকাটার ধরগাঁওয়ে কাদার স্তূপের নিচ থেকে অন্তত ৪০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে কয়েকটি বাড়ি পুরোপুরি ধসে পড়েছে। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুপ্তা বলেছেন, পরিস্থিতি "অত্যন্ত উদ্বেগজনক"। তার দাবি, মৃতের সংখ্যা কমপক্ষে ১৭, যার মধ্যে মিরিকে ১১ জন ও দার্জিলিংয়ে ৬ জনের প্রাণহানি হয়েছে। যদিও সরকারি ভাবে এ সংখ্যা এখনো নিশ্চিত হয়নি।
ভূমিধসে মিরিক-সুখিয়াপোখরি সড়কসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রুটে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বহু পাহাড়ি গ্রাম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
এই দুর্যোগের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের একটি বেসরকারি চ্যানেল টিভি৯ বাংলা-কে দেওয়া ফোন সাক্ষাৎকারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর। ভুটানে টানা বৃষ্টির কারণে উত্তরবঙ্গে পানি ঢুকে পড়েছে। এই দুর্যোগ আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সকাল ৬টা থেকেই আমি রাজ্য সচিবালয়ের নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে পর্যবেক্ষণ করছি।"
তিনি আরও জানান, গত ১২ ঘণ্টায় ৩০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছে, যার ফলে অন্তত সাত জায়গায় ভূমিধস ও মারাত্মক বন্যা দেখা দিয়েছে। তিনি এ পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করেছেন গত মাসে দুর্গাপূজার সময় কলকাতায় হওয়া অতিবৃষ্টির সঙ্গে।
মমতা পর্যটকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, "অনেক পর্যটক আটকা পড়েছেন। আমি অনুরোধ করব, আতঙ্কিত হয়ে কেউ যেন ছুটে না যান। হোটেলগুলো যেন বাড়তি ভাড়া না নেয়। পর্যটকদের নিরাপত্তার দায়িত্ব সরকার নেবে।" নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি একটি করে চাকরি দেওয়া হবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি।
উদ্ধারকাজ ও পূর্বাভাস
এক সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, টানা বৃষ্টি উদ্ধার তৎপরতায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পিচ্ছিল পাহাড়ি পথে ভারী যন্ত্রপাতি চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
মিরিকের বিষ্ণুলাল গাঁও, ওয়ার্ড ৩ লেকসাইড এবং জসবীর গাঁওয়ের পরিবারগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় এনজিও ও প্রশাসনের সহযোগিতায় ত্রাণশিবির চালু করা হয়েছে।
ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) দার্জিলিং ও কালিম্পংসহ সাব-হিমালয়ান পশ্চিমবঙ্গে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত অতিভারী বর্ষণের জন্য 'রেড অ্যালার্ট' জারি করেছে। ভূমিধস ও রাস্তা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এনডিআরএফ জানিয়েছে, দার্জিলিং জেলা ও উত্তর সিকিমে সড়ক যোগাযোগ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। সিলিগুড়ি-মিরিক-দার্জিলিং সড়কের একটি লোহার সেতু ভেঙে পড়ায় পুরো এলাকা কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। মিরিকের একটি গ্রাম প্লাবিত হয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।