সুদানে ভূমিধস: পৌঁছানো যাচ্ছে না সাহায্য, খালি হাতেই মাটি খুঁড়ে স্বজনদের খুঁজছেন গ্রামবাসীরা
সুদানের পশ্চিমাঞ্চলের দারফুর অঞ্চলের একটি প্রত্যন্ত এলাকায় রোববারের ভয়াবহ ভূমিধসের পর গ্রামবাসীরা খালি হাতেই মাটিচাপা পড়া ব্যক্তিদের উদ্ধারের চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছে সহায়তা সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন।
সংস্থাটির সুদানবিষয়ক কর্মসূচি ও পরিচালনা বিভাগের উপ-পরিচালক ফ্রান্সেসকো লানিনো বলেন, 'কোনো সরঞ্জাম বা যন্ত্রপাতি না থাকায় স্বজনদের মরদেহ উদ্ধারের জন্য মানুষ খালি হাতেই মাটি খুঁড়ছে।'
এ ঘটনায় ঠিক কতজন মারা গেছেন, তা এখনও সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি। দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মাত্র দুটি মরদেহ উদ্ধারের কথা বললেও, এলাকাটির দায়িত্বে থাকা একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী নিহতের সংখ্যা ১ হাজার পর্যন্ত হতে পারে বলে জানিয়েছে।
বরাত দিয়ে সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, এ পর্যন্ত অন্তত ৩৭৩টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
মি. লানিনো বলেন, 'আনুমানিক ২০০ শিশুসহ ১ হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়ে থাকতে পারে।'
সেভ দ্য চিলড্রেনের কর্মীরা বলেন, ভারী বর্ষণের ফলে সৃষ্ট এই ভূমিধসে ঘটনাস্থলে 'ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও ক্ষয়ক্ষতি' হয়েছে। লানিনো জানান, ঘটনাস্থলে থাকা দলগুলোর ভাষ্যমতে, এই ভূমিধস 'এ অঞ্চলের ইতিহাসে অন্যতম মর্মান্তিক ও ব্যাপক পরিসরের বিপর্যয়।'
তিনি আরও জানান, পাঁচটি গ্রাম নিয়ে গঠিত ক্ষতিগ্রস্ত তারসিন এলাকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামটিতে মাত্র একজন জীবিত থাকার খবর পাওয়া গেছে।
এলাকাটি দুর্গম হওয়ায় ভূমিধসের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
তবে স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে বিবিসি ভেরিফাই এই বিপর্যয়ে চাপা পড়া নয়টি ভবন ও স্থাপনা শনাক্ত করতে পেরেছে।
সেভ দ্য চিলড্রেনের সাহায্যকর্মীদেরকে তাদের অফিস থেকে প্রায় ১৪ মাইল পাথুরে ও কর্দমাক্ত পথ পাড়ি দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছাতে ছয় ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছে।
দুর্গতদের কাছে প্রথম দফার মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে সাহায্যকর্মীদের গাধার পিঠে চড়ে তারসিন এলাকায় যেতে হয়েছে।
আরেক সহায়তা সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন জানিয়েছে, সুদানে চলমান গৃহযুদ্ধ উদ্ধার তৎপরতাকে আরও কঠিন করে তুলেছে।
এই ভূমিধসের ঘটনা ছাড়াও, আধাসামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) ও সেনাবাহিনীর মধ্যে লড়াইয়ের কারণে সুদান বর্তমানে মানবিক সংকটে রয়েছে।
গৃহযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন পরিসংখ্যান রয়েছে। গত বছর একজন মার্কিন কর্মকর্তা অনুমান করেন, ২০২৩ সালে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় দেড় লাখ পর্যন্ত মানুষ নিহত হয়েছেন।
এছাড়া এক কোটি ২০ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে।
