গাজামুখী নৌবহর আটকে দিল ইসরায়েল, গ্রেটা থুনবার্গসহ দুই শতাধিক অধিকারকর্মী আটক
গাজার উদ্দেশ্যে মানবিক সহায়তা বহনকারী বেশ কয়েকটি নৌযান এবং তাতে থাকা অধিকার কর্মীদের আটক করেছে ইসরায়েলের নৌবাহিনী। আটক দুই শতাধিক অধিকারকর্মীর মধ্যে সুইডিশ জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গও রয়েছেন।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার (জিএসএফ) মুখপাত্র সাইফ আবুকেশেক ইনস্টাগ্রামে এক পোস্টে জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বাহিনী সমুদ্রে তাদের ১৩টি নৌকাযান আটক করেছে।
আবুকেশেক জানান, আটক হওয়া নৌযানগুলোতে ৩৭টি দেশের ২০১ জনেরও বেশি মানুষ ছিলেন। এর মধ্যে ৩০ জন স্পেনের, ২২ জন ইতালির, ২১ জন তুরস্কের এবং ১২ জন মালয়েশিয়ার নাগরিক।
তিনি জানান, কর্মী ও নৌযান আটকের পরও তাদের 'মিশন চলছে' এবং বহরের বাকি নৌযানগুলো 'ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে গাজার অবরোধ ভাঙার' চেষ্টা করছে।
তার ভাষায়, "আমাদের প্রায় ৩০টি জাহাজ এখনো দখলদার বাহিনীর সামরিক নৌযানের বাধা এড়িয়ে গাজার উপকূলে পৌঁছানোর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, তারা অনুপ্রাণিত, এবং সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করছে যাতে ভোরের আগেই অবরোধ ভেঙে সবাই মিলে গাজায় পৌঁছানো যায়।"
এদিকে, ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা (জিএসএফ)–এর কয়েকটি নৌযান 'নিরাপদভাবে থামানো' হয়েছে এবং এতে থাকা যাত্রীদের ইসরায়েলের একটি বন্দরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

তারা আরও জানায়, নৌযানগুলোকে দিক পরিবর্তনের নির্দেশ দিয়েছিল নৌবাহিনী, কারণ এগুলো 'সক্রিয় যুদ্ধক্ষেত্রের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল'।
অন্যদিকে জিএসএফ নৌযান আটকে দেওয়াকে 'অবৈধ' আখ্যা দিয়ে বলেছে, এটি কোনো 'প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ' নয় বরং 'হতাশার নগ্ন প্রকাশ'।
দলটি অভিযোগ করেছে, বহরের একটি নৌকায় সমুদ্রে ইচ্ছাকৃতভাবে ধাক্কা দেওয়া হয়েছে এবং আরও কয়েকটি নৌকায় জলকামান দিয়ে আঘাত করা হয়েছে।
জিএসএফ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছে, 'গাজাকে অনাহার ও বিচ্ছিন্ন করে রাখতে দখলদাররা কত দূর পর্যন্ত যেতে পারে, এটা তারই প্রমাণ। তারা একটি শান্তিপূর্ণ বেসামরিক মিশনে হামলা চালিয়েছে, কারণ মানবিক সহায়তা জিতে গেলে তাদের অবরোধ ব্যর্থ প্রমাণিত হবে।'
অন্যদিকে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ফ্লোটিলাকে জানানো হয়েছিল গাজার উপকূলবর্তী জলসীমায় 'আইনসম্মত নৌ অবরোধ' লঙ্ঘন করছে তারা। তবে নৌযানগুলো অবরোধ অঞ্চলে প্রবেশ করেছিল কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
মন্ত্রণালয় আটক অভিযানের ফুটেজও প্রকাশ করেছে, সেখানে দেখা যায় গ্রেটা থানবার্গ নৌকার ডেকে বসে আছেন এবং এক ইসরায়েলি সেনা তাকে পানি ও একটি জ্যাকেট দিচ্ছেন।

অন্যদিকে, নৌকাগুলো থেকে লাইভ সম্প্রচারে দেখা গেছে, ৪৪টি নৌযানের সবকটি তখনও ইসরায়েলি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
ইসরায়েল সরকার যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে জিএসএফের এই প্রচেষ্টাকে 'উসকানি' হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। একইসঙ্গে জানিয়েছে, 'গ্রেটা ও তার সঙ্গীরা নিরাপদ এবং সুস্থ আছেন।'
এদিকে জিএসএফের দাবি, প্রধান নৌযান আলমা ছাড়াও সিরিয়াস ও আদারা নামের জাহাজসহ একাধিক নৌকা আটক করে তাতে উঠে পড়ে ইসরায়েলি বাহিনী।
এর আগে তারা অভিযোগ করে, ইসরায়েলি সেনারা ইচ্ছাকৃতভাবে জাহাজগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা নষ্ট করে দেয়, যাতে বিপদ সংকেত পাঠানো ও নৌযান দখলের সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ করা যায়।
সংস্থাটি জানায়, আটক অভিযানের সময় বহরটি গাজার উপকূল থেকে ৭০ নটিক্যাল মাইল দূরে ছিল। তারা আশা করছিলেন, বৃহস্পতিবার সকালেই নৌযানগুলো গাজায় পৌঁছাবে।
এদিকে গাজামুখী নৌবহরে ইসরায়েলের এমন হস্তক্ষেপের প্রতিবাদ জানিয়েছে গ্রিস, ইতালি, তিউনিসিয়া ও তুরস্কে মানুষ।
গাজার উদ্দেশে সহায়তা বহনকারী ফ্লোটিলা আটকের ঘটনায় কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো দেশটিতে অবশিষ্ট সব ইসরায়েলি কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছেন। তিনি একে 'নেতানিয়াহুর আন্তর্জাতিক অপরাধ' বলে আখ্যা দিয়েছেন।
অন্যদিকে আয়ারল্যান্ডের উপপ্রধানমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস ঘটনাটিকে 'উদ্বেগজনক' উল্লেখ করে বলেছেন, অন্তত ৭ জন আইরিশ নাগরিক আটক রয়েছেন, যাদের মধ্যে সিন ফেইন দলের সিনেটর ক্রিস অ্যান্ড্রুজও আছেন। তিনি ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার আহ্বান জানান।