জাতিসংঘে বসে অভিজ্ঞতা নিয়ে পরিবারের কাছে লেখা চিঠি, ৭২ বছর পর ফিরে এলো প্রেরকের হাতেই!

সময়টা ১৯৫৩ সাল। আমেরিকার ইলিনয়েসের ওটাওয়া শহরের এক হাইস্কুল ছাত্র অ্যালান বল প্রথমবার বাড়ি ছেড়ে পাড়ি দিয়েছিলেন সুদূর পুয়ের্তো রিকোর উদ্দেশ্যে, গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে। পথে নিউ ইয়র্কে নেমে জাতিসংঘের সদর দপ্তর ঘুরে দেখার সুযোগও পান তিনি।
সেমুহূর্তেই সেখান থেকে পরিবারের জন্য পাঠিয়েছিলেন একটি পোস্টকার্ড। মাত্র ২ সেন্টের সেই পোস্টকার্ডে হাতে লেখা ছিল 'সবাইকে ভালোবাসা, অ্যালান'। কিন্তু সে পোস্টকার্ড আর কখনও তার পরিবারের হাতে পৌঁছায়নি। ৭১ বছর পর, ৮৮ বছর বয়সী সেই অ্যালান বলের হাতেই অবিশ্বাস্যভাবে ফিরে এলো তার কিশোর বয়সের স্মৃতিমাখা সেই পোস্টকার্ডটি!
৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আইডাহোর স্যান্ডপয়েন্টে বাস করছেন অ্যালান। কিছুদিন আগেই এক ডাককর্মীর হাত ধরে তার ঠিকানা খুঁজে পেয়েছে সেই হারানো দিনের পোস্টকার্ড। চিঠিটা পেয়ে তিনি নিজেই তো অবাক! অবসরে যাওয়া জরুরি বিভাগের এই চিকিৎসক বলেন, '২ সেন্টের ডাকটিকিটটা দারুণ কাজ করেছে! এটা আমাকে কেবল হাসিয়েছে, বলুন তো, ৭২ বছর পর কার চিঠি ফেরত আসে?'
১৯৫৩ সালে, পুয়ের্তো রিকোতে তার খালার বাড়িতে গ্রীষ্মকালের ছুটি কাটানোর পরিকল্পনা ছিল কিশোর অ্যালানের। নিউ ইয়র্কে ট্রেনযোগে পৌঁছে তিনি ফ্লাইটের আগে সময় করে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে যান। পোস্টকার্ডের সামনে ছিল জাতিসংঘের একটি ভবনের ছবি। তার ওপর তিনি লিখেছিলেন, 'আমরা এখন জাতিসংঘের ভবনে আছি। পুরোটাই অত্যন্ত আধুনিক।'
চিঠিতে তিনি পুয়ের্তো রিকো থেকে আবার লেখার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। তবে সেই প্রতিশ্রুতি পূরণের আগেই হারিয়ে যায় এই পোস্টকার্ড। এত বছর পর এটি হাতে পেয়ে অ্যালানের স্মৃতিতে উঁকি দিচ্ছে পুরনো দিনের সেই সাদা-কালো দিনগুলো।

এই পোস্টকার্ডটি যেন সেই সময়ে অ্যালান বলের ভ্রমণ বিষয়ক এক ধরণের 'স্ট্যাটাস আপডেট'।
জাতিসংঘের সদর দপ্তরের আধুনিকতার বর্ণনা দেওয়ার পাশাপাশি, তাতে তিনি লিখেছিলেন যে তিনি তখনও বিমানের টিকিট কেনেননি, তবে 'খুব শিগগিরই বিষয়টি দেখবেন'। এছাড়াও ট্রেনে বসে পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া একটি টেলিগ্রামের কথাও উল্লেখ ছিল, যার উত্তরে তিনি লিখেছিলেন, 'মনে হয় সব ঠিক হয়ে যাবে।'
অ্যালানের বাবা রেভারেন্ড এফ.ই. বল এবং তার পরিবারের উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছিল এই পোস্টকার্ডটি। তারিখ ছিল ১৯৫৩ সালের ১৭ জুন এবং তাতে লাগানো ছিল জাতিসংঘের বিশেষ ব্র্যান্ডের ডাকটিকিট।
সামনের দিকে ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া ছবিতে দেখা যায় উজ্জ্বল নীল আকাশের পটভূমিতে জাতিসংঘের সুউচ্চ সচিবালয় ভবন। এক কোণায় ভবনটির পাশ দিয়ে উঁকি দিচ্ছে ইস্ট রিভারের ফিরোজা জলরাশি।
জাতিসংঘে তার সেই সফর বা নিউ ইয়র্কে কাটানো সময় সম্পর্কে অ্যালানের খুব বেশি কিছু মনে নেই। তবে যখনই তিনি ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া পোস্টকার্ডের বার্তাটির ছবি দেখেন, সঙ্গে সঙ্গেই নিজের হাতের লেখা চিনতে পারেন।
পোস্টকার্ডটি যে তার ঠিকানায় পৌঁছায়নি, সে কথা তিনি জানতেনই না। আর বিষয়টি পরিবারের কাছে উল্লেখ করার কথাও কখনো ভাবেননি। অ্যালান বলেন, 'এর মধ্যে তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল না। শুধু লেখা ছিল, 'আমি এখানে আছি, আর একরকম ঘোরাঘুরি করছি', সম্ভবত, 'নিউ ইয়র্কের কোথাও উড়োজাহাজের জন্য অপেক্ষা করছি'। অবশ্যই, এই ভ্রমণের আগে আমি কখনও ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের বাইরে যাইনি, তাই এটা আমার জন্য একটা বিশাল ব্যাপার ছিল।'
গত মাসেই ইলিনয়ের ওটাওয়া পোস্ট অফিসে অপ্রত্যাশিতভাবে পোস্টকার্ডটি খুঁজে পাওয়া যায়। ডাক বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, তাদের ধারণা, গত সাত দশক ধরে এটি জাতিসংঘের ভেতরেই কোথাও হারিয়ে ছিল।
পরে তাদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ১ হাজার ৭০০ মাইলেরও বেশি দূরে থাকা অ্যালানের কাছে পোস্টকার্ডটি পৌঁছানোর ব্যবস্থা হয়।
এরপর থেকে স্পোকেন, ওয়াশিংটনের প্রায় ৭০ মাইল উত্তর-পূর্বে অবস্থিত ১০ হাজারেরও বেশি জনসংখ্যার শহর স্যান্ডপয়েন্টে তিনি একরকম স্থানীয় তারকা হয়ে উঠেছেন। পোস্টকার্ডটি পৌঁছে দেওয়া ডাককর্মীর সাথে তিনি ছবি তুলেছেন এবং তার এই অসাধারণ গল্প স্থানীয় সংবাদপত্র 'দ্য বনার কাউন্টি ডেইলি বি'র প্রথম পাতায় প্রকাশিত হয়েছে।
যদিও ৭২ বছর দেরিতে পৌঁছেছে, তবুও অ্যালান এখন সেই স্মরণীয় গ্রীষ্মের ভ্রমণকে ধরে রাখার এক নতুন উপায় খুঁজে পেয়েছেন। তিনি পোস্টকার্ডটি বাঁধিয়ে তার বাড়ির দেওয়ালে ঝুলিয়ে রাখার পরিকল্পনা করেছেন। অ্যালানের কথায়, 'আমি অপ্রত্যাশিত বিষয়গুলো পছন্দ করি, আর মজার জিনিসও ভালো লাগে; এই ঘটনাতে দুটোই ছিল।'