নিলামে উঠছে বোনকে লেখা জেন অস্টেনের দীর্ঘ চিঠি, বিক্রি হতে পারে ৪ লাখ ডলারে

প্রেম আর বিবাহের জটিলতা নিয়ে তীক্ষ্ণ ব্যঙ্গ করার জন্যই সাধারণত মনে রাখা হয় ইংরেজি সাহিত্যের বিখ্যাত লেখিকা জেন অস্টেনকে। কিন্তু তার উপন্যাসে আরেক ধরনের সম্পর্কও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ—ভাই-বোনের সম্পর্ক।
বিশেষ করে বোনেরা অস্টেনের নায়িকাদের জীবনে বড় ভূমিকা রাখে। কারও কাছে তারা ঘনিষ্ঠ বন্ধু, কারও কাছে সমালোচক, আবার কারও কাছে প্রতিদ্বন্দ্বী। যেমন, 'সেন্স অ্যান্ড সেনসিবিলিটি' উপন্যাসে এলিনর ড্যাশউড আর মারিয়ান—একজন 'যুক্তির প্রতীক', অন্যজন 'আবেগের'। আবার 'প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস'-এ এলিজাবেথ বেনেটের চার বোন, যাদের প্রত্যেকের প্রেম আর বিয়ের অভিজ্ঞতা আলাদা। কিংবা 'পারসুয়েশন'-এ অ্যান এলিয়টের দুই বোন—অহংকারী এলিজাবেথ আর খুঁতখুঁতে মেরি।
অস্টেনের নিজের জীবনেও বোনের ভূমিকা ছিল গভীর। বড় বোন কাসান্দ্রাকে লেখা তার এক দীর্ঘ ও প্রাণবন্ত চিঠি এ বছরের অক্টোবরে নিউ ইয়র্কের সথেবিজ-এর নিলামে উঠছে। চিঠিটির দাম উঠতে পারে প্রায় ৪ লাখ মার্কিন ডলার পর্যন্ত।
দুই বোনের জন্মের ব্যবধান ছিল তিন বছরের মতো। কিন্তু সম্পর্ক ছিল অস্বাভাবিকভাবে ঘনিষ্ঠ। তাদের মা একবার মজা করে বলেছিলেন, 'যদি কাসান্দ্রার মাথা কেটে ফেলা হয়, তবে জেনও নিজের মাথা কেটে ফেলতে রাজি থাকবে।'
সথেবিজ নিউ ইয়র্কের বই ও পাণ্ডুলিপি বিভাগের প্রধান কালিকা স্যান্ডস বলেন, জেন অস্টেন ও কাসান্দ্রার মধ্যে শুধু 'আবেগের বন্ধনই' ছিল না, পাশাপাশি ছিল এক 'শক্তিশালী বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পর্কও'।
চিঠিগুলোতেও ধরা পড়ে এই সম্পর্কের গভীরতা। একটি চিঠিতে দেখা যায়, অস্টেন বাথ শহরে তার দিনযাপনের বিবরণ পাঠাচ্ছেন বোনকে। আশপাশের মানুষজন নিয়ে গল্প করেছেন, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের খবর দিয়েছেন, কাসান্দ্রার অসুস্থতা নিয়ে মজা করেছেন, আবার পরিবারের সামাজিক অবস্থার পতন নিয়ে দুঃখও প্রকাশ করেছেন।

অস্টেনের বাবার মৃত্যুর প্রায় তিন মাস পর লেখা এই চিঠির প্রসঙ্গে কালিকা স্যান্ডস সিএনএন-কে বলেন, ওই সময়েই তাদের সামাজিক পরিসর ছোট হয়ে আসে। এক জায়গায় অস্টেন স্পষ্ট জানিয়ে দেন, পরিবার কতটা 'হীন' অবস্থায় পড়েছে এবং তিনি নিজেও তা কতটা তীব্রভাবে অনুভব করছিলেন।
অস্টেন চিঠিতে লিখেছিলেন, 'সাত বছর চার মাস আগে আমরা মিস লেফ্রয়ের ঘোড়সওয়ারি দেখতে গিয়েছিলাম। এখন আমরা একেবারেই অন্য পরিবেশে চলছি। তবে সাত বছর তো যথেষ্ট সময়, এই সময়ে মানুষের ত্বক যেমন বদলায়, তেমনি মনের ভাবনাও বদলে যায়।'
অস্টেনের বোনদের কেউ-ই আর বিয়ে করেননি। তারা ছিলেন একে অপরের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সঙ্গী। অস্টেনের মৃত্যুর মাত্র দুই দিন পর কাসান্দ্রা লিখেছিলেন, 'তার কাছে আমার কোনো ভাবনা গোপন ছিল না।'
সাহিত্য বিশ্লেষকদের মতে, অস্টেনের উপন্যাসগুলোতে প্রায়ই বোনদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক দেখা যায়। অনেক সময়ই এই সম্পর্ক কেবল আবেগ নয়, বরং টিকে থাকা ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার প্রশ্নে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। গবেষক স্যান্ডস বলেন, 'অস্টেনের উপন্যাস নানা দিক থেকে অর্থনৈতিক ও টিকে থাকার গল্প। আর বোন কিংবা অন্য নারীর সঙ্গে সম্পর্কই আসলে হয়ে ওঠে বড় ভরসা, বড় মিত্রতার জায়গা।'
অস্টেনের টিকে থাকা একমাত্র প্রতিকৃতি তার জীবদ্দশায় বোন কাসান্দ্রা এঁকেছিলেন। আবার অস্টেনের মৃত্যুর পর তার বহু চিঠি ধ্বংসও করেছিলেন তিনি।

গবেষক স্যান্ডসের তথ্য অনুযায়ী, অস্টেন জীবনে প্রায় তিন হাজার চিঠি লিখলেও টিকে আছে মাত্র ১৬১টি। ফলে তাকে বোঝা অনেক সময় কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তবে স্যান্ডস মনে করেন, কাসান্দ্রার এই কাজ আসলে এক বোনের উদারতার নিদর্শন—যেখানে তিনি তার বোনের উত্তরাধিকার ও সম্মান রক্ষার চেষ্টা করেছিলেন।
স্যান্ডস আরও জানান, এই চিঠি লেখার তিন-চার বছর আগে অস্টেনের কোনো চিঠি পাওয়া যায়নি। ওই সময়ে পরিবার নিয়ে বাথে চলে আসা, লেখালিখিতে নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যক্তিগত হতাশার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। অনেক সমালোচকের মতে, সেই সময় অস্টেন হয়তো বিষণ্নতায় ভুগছিলেন।
স্যান্ডস বলেন, 'তাহলে বোঝা যায় কেন কাসান্দ্রা কিছু চিঠি নষ্ট করেছিলেন। আমাদের জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়ের চিঠি বা বার্তা কি সত্যিই সবার সামনে থাকা উচিত?'
এ ছাড়া অক্টোবর ১ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত অনলাইনে চলা এই নিলামে উঠবে আরও কিছু বিরল জিনিসপত্র। সব মিলিয়ে এগুলোর দাম উঠতে পারে প্রায় ১৩ লাখ মার্কিন ডলার।
নিলামে থাকছে ১৮১৬ সালে আইরিশ ঔপন্যাসিক মারিয়া এজওয়ার্থকে পাঠানো 'এমা' উপন্যাসের একটি কপি—যা একমাত্র টিকে থাকা কপি এবং সেটি অস্টেন কোনো লেখককে উপহার দিয়েছিলেন। এর দাম উঠতে পারে ৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার পর্যন্ত।
আবার ১৮১১ সালে লেখা অস্টেনের একটি ছোট্ট ব্যঙ্গাত্মক কবিতাও থাকছে নিলামে, যেখানে সে সময়কার চিকিৎসা পদ্ধতিকে হাস্যরসের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। এর দাম উঠতে পারে দেড় লাখ ডলার পর্যন্ত।