ট্রাম্প প্রশাসনের নির্দেশে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় উদ্যানগুলো থেকে সরানো হচ্ছে দাসপ্রথার ঐতিহাসিক ছবি ও প্রতীক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইতিহাস বিরোধী পদক্ষেপ আরও বিস্তৃত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। ওয়াশিংটন পোস্ট এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তার প্রশাসন জাতীয় উদ্যানগুলো থেকে দাসপ্রথার ইতিহাস সম্পর্কিত একাধিক সাইনবোর্ড ও প্রদর্শনী সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে।
পত্রিকাটি জানিয়েছে, এই পদক্ষেপগুলো এসেছে গত মার্চে ট্রাম্প স্বাক্ষরিত এক বিভ্রান্তিকর নির্বাহী আদেশ থেকে। ওই আদেশে স্বরাষ্ট্র দপ্তরকে জাতীয় উদ্যান ও অন্যান্য ফেডারেল স্থাপনায় থাকা উপকরণগুলো থেকে আমেরিকার বৈষম্যের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরা অংশ মুছে ফেলার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। আদেশে এসব ইতিহাসকে 'বিধ্বংসী মতাদর্শ' বলে উল্লেখ করা হয়।
দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'ট্রাম্প প্রশাসন একাধিক জাতীয় উদ্যান থেকে দাসপ্রথা-সম্পর্কিত সাইনবোর্ড ও প্রদর্শনী সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে রয়েছে এক ঐতিহাসিক ছবি, যেখানে একজন সাবেক দাসের পিঠে চাবুকের আঘাতের দাগ স্পষ্ট দেখা যায়। এ তথ্য সম্পর্কে চারজন নিশ্চিত করেছে।'
ঐ ঐতিহাসিক ছবিটি "দ্য স্কার্জড ব্যাক" নামে পরিচিত। ছবিটিতে দেখা যায় পিটার গর্ডন নামে একজন দাসকে। তাকে পালানোর চেষ্টা করার অপরাধে চাবুক মেরে মারা হয়েছিল। মেট্রোপলিটান মিউজিয়াম অফ আর্ট উল্লেখ করেছে, এটি সিভিল ওয়ার যুগের সবচেয়ে বিখ্যাত একটি প্রতিকৃতি।
দাসপ্রথার বর্বরতার এমন বাস্তব চিত্রগুলো স্পষ্টতই ট্রাম্পের নির্লিপ্ত অজ্ঞতার সাথে মেলে না। কারণ তিনি অভিযোগ করেন যে স্মিথসোনিয়ান জাদুঘরগুলো 'দাসপ্রথা কতটা খারাপ ছিল' সেদিকে বেশি মনোযোগ দেয়।
ওয়াশিংটন পোস্ট এর তথ্য অনুযায়ী, সেন্সরশিপ শুধু ১৯ শতকের ছবির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সর্বশেষ নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে পশ্চিম ভার্জিনিয়ার হার্পারস ফেরি ন্যাশনাল হিস্টোরিক পার্ক থেকে তথ্য অপসারণ, যেখানে দাসদের বিদ্রোহের জন্য অস্ত্র দেওয়ার লক্ষ্যে দাসপ্রথা-বিরোধী জন ব্রাউন আক্রমণ পরিচালনা করেছিলেন।
এছাড়া, ফিলাডেলফিয়ার প্রেসিডেন্টস হাউস সাইট-এর ক্ষেত্রেও কর্মীদের জানানো হয়েছে যে সেখানে জর্জ ওয়াশিংটন দাস রাখতেন—এ সম্পর্কিত তথ্য নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং তা সরিয়ে ফেলা হতে পারে।'
তারা প্রকৃতপক্ষে এমন একটি স্থান থেকেও দাসপ্রথার ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা করছে, যা দাসপ্রথা-বিরোধী বিদ্রোহের স্মৃতিবাহী।
ন্যাশনাল পার্কস সার্ভিসের একজন মুখপাত্র 'পোস্ট' পত্রিকাকে বলেছেন যে, সমস্ত সাইনবোর্ড পর্যালোচনা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এমন ব্যাখ্যামূলক উপকরণ যা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস বা ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বদের নেতিবাচক দিকগুলোকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেয়, অথচ বৃহত্তর প্রেক্ষাপট বা জাতীয় অগ্রগতির বিষয়টি স্বীকার করে না, তা জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করার পরিবর্তে অনিচ্ছাকৃতভাবে বিকৃত করতে পারে।
এখানে কয়েকটি ভিন্ন উদ্দেশ্য কাজ করছে বলে মনে করা হচ্ছে। একদিকে, জাতিগত নিপীড়নের চিত্রণের বিরুদ্ধে সরকারের নেতৃত্বে পরিচালিত এই অভিযানটি স্পষ্টতই বর্ণবাদী। প্রশাসনের এই অক্লান্ত প্রচেষ্টা বর্ণবাদী "ব্ল্যাক কোডস"-এর কথা মনে করিয়ে দেয়—ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে রাজ্যগুলোতে পাস হওয়া একগুচ্ছ আইন, যার লক্ষ্য ছিল সদ্য স্বাধীন হওয়া কৃষ্ণাঙ্গদেরকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা।
সেই আইনগুলো প্রায়শই বর্ণবাদের নিন্দা করা বক্তব্যকে বেআইনি ঘোষণা করত এবং এমন বক্তব্যকে কেবল 'ক্ষতিকর' না বলে 'রাষ্ট্রদ্রোহী' হিসেবে আখ্যা দিত।
এটিও মনে রাখা দরকার যে ট্রাম্প একাধিকবার বলেছেন, শিক্ষিত নয় এমন জনগণ নিয়ে কাজ করতে তার সুবিধা হয়। তার প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার সময় তিনি গর্ব করে বলেছিলেন যে তিনি 'অল্প শিক্ষিত'দের ভালোবাসেন, এবং এই গত সপ্তাহান্তেই একটি ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায় যে স্মার্ট লোকেরা তাকে পছন্দ করে না।
প্রেসিডেন্ট এবং তার প্রশাসন যখন দেশটির বাসিন্দাদের থেকে এর ইতিহাস লুকিয়ে রেখে যুক্তরাষ্ট্রকে কার্যকরভাবে 'বোকা' বানানোর চেষ্টা করছে, তখন এই বিষয়টি বিবেচনা করা বেশ সহায়ক হতে পারে।