মাস্ককে টপকে কিছুক্ষণের জন্য বিশ্বের শীর্ষ ধনী বনে যাওয়া কে এই ওরাকলের ল্যারি এলিসন?

ওরাকলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি এলিসন বেশ দারুণ একটি বছর কাটাচ্ছেন। তার বন্ধু ডোনাল্ড ট্রাম্প আছেন হোয়াইট হাউসে, তার ছেলে ডেভিড এলিসন জনপ্রিয় গণমাধ্যম সংস্থা সিবিএস-এর দায়িত্ব নিয়েছেন। আর গেল বুধবার তিনি তার বন্ধু ইলন মাস্ককে ছাড়িয়ে জিতে নেন 'বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি'র খেতাবও!
মাস্কের মতো এলিসন ততটা পরিচিত নাম না হলেও, তিনি সিলিকন ভ্যালি এবং সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রভাবশালী। বিলাসবহুল জীবনযাপনের জন্য তিনি সুপরিচিত—মেগা ইয়ট, ব্যক্তিগত জেট, একাধিক বিয়ে এবং হাওয়াইয়ের লানাই দ্বীপের মালিকানা তার জীবনধারার অংশ।
ব্লুমবার্গ বিলিয়নেয়ার্স ইনডেক্স অনুযায়ী, এলিসনের মোট সম্পদ একদিনে ১০১ বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯৩ বিলিয়ন ডলারে। এই বৃদ্ধির ফলে তিনি গেল বুধবার ইলন মাস্কের ৩৮৫ বিলিয়ন ডলারকে ছাড়িয়ে গেছেন। তবে দিনের শেষে আবারও তালিকার শীর্ষে ফিরে যান টেসলার ইলন মাস্ক।
৮১ বছর বয়সী এই মেগা-বিলিয়নেয়ার ১৯৭০-এর দশক থেকে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টে তার সম্পদ গড়ে তুলেছেন। অ্যাকাডেমি অফ অ্যাচিভমেন্টের তথ্য অনুযায়ী, তিনি সিআইএ-এর জন্য একটি ডেটাবেস তৈরির দুই বছরের চুক্তি পাওয়ার পর ওরাকল সহ-প্রতিষ্ঠা করেন।
পরবর্তীতে কোম্পানিটি ফরচুন ৫০০ কোম্পানিগুলোর জন্য সফটওয়্যার সরবরাহ করে একটি প্রযুক্তি জায়ান্টে পরিণত হয় এবং সম্প্রতি ক্লাউড কম্পিউটিংয়ে এর প্রভাব বিস্তার করেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উদ্ভাবন, যেমন চ্যাটজিপিটি নির্মাতা ওপেনএআই-এর সঙ্গে লাভজনক চুক্তি ওরাকলের জন্য বড় সুবিধা এনেছে।
এলিসন ৩৭ বছর ধরে ওরাকলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন এবং ২০১৪ সালে তিনি প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তার (সিটিও) ভূমিকায় স্থানান্তরিত হন।
তিনি এখনও পরিচালনা পর্ষদের প্রধান হিসেবে রয়েছেন এবং কোম্পানির ৪০ শতাংশের বেশি শেয়ারের মালিক। ২০২০ সালে কোম্পানির সদর দফতর সিলিকন ভ্যালি থেকে টেক্সাসের অস্টিনে স্থানান্তরিত হয়েছে।
ওরাকলের পাশাপাশি এলিসন ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত টেসলার পরিচালনা পর্ষদেও ছিলেন এবং মাস্কের ইলেকট্রিক কার কোম্পানিতেও তার শেয়ার রয়েছে। ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী, তিনি তার ছেলে ডেভিডের পরিচালিত মিডিয়া গ্রুপ প্যারামাউন্ট স্কাইড্যান্সের প্রায় ৫০ শতাংশ মালিক। এই সংস্থার অধীনে রয়েছে সিবিএস, এমটিভি, প্যারামাউন্ট পিকচার্সসহ আরও অনেক ব্র্যান্ড। জুনিয়র এলিসন জানিয়েছেন যে মিডিয়া সংস্থা রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট হবে না, তবে তিনি সিবিএস নিউজের নেতৃত্বে 'দ্য ফ্রি প্রেস'-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা বারি ওয়েইসকে আনার কথা ভাবছেন।
ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর সঙ্গে এলিসনের সম্পর্ক
সম্প্রতি এলিসন নিজেকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একজন প্রভাবশালী মিত্র হিসেবে তুলে ধরেন। যদিও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদ থেকেই তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এলিসনের। জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জন্য 'স্টারগেট' নামের একটি ডেটা সেন্টার প্রকল্পের ঘোষণায় তাকে দেখা যায়।
এছাড়া, এ বছরের শুরুতে তার ছেলে ডেভিডের প্যারামাউন্ট কেনার ৮ বিলিয়ন ডলারের বিডের মূল অর্থায়নও তিনি করেছেন। এই বিড ট্রাম্প প্রশাসনের ফেডারেল কমিউনিকেশনস কমিশন দ্বারা অনুমোদিত হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাকে টিকটকও কিনতে বলেছিলেন।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুরও বেশ ঘনিষ্ঠ এলিসন। অলাভজনক সংস্থা 'ফ্রেন্ডস অফ দ্য ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস'-এর মাধ্যমে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীকে প্রচুর অর্থ দান করেছেন তিনি। ২০১৭ সালে, তিনি সংস্থাটিকে সে প্রায় ১৬ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার দিয়েছিলেন।
'বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি' দৌড়ে তার সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী মাস্ক এলিসনের খুব কাছের বন্ধুও। এ বছরের শুরুতে একটি পডকাস্টে মাস্ক তাকে নিয়ে বলেন, তার দেখা সবচেয়ে স্মার্ট ব্যক্তি ল্যারি এলিসন।