‘নদীতে আইসা সব ইলিশ খায়া ফেলছে’, কুষ্টিয়ায় বিলুপ্তপ্রায় শুশুক নিয়ে যুবকের ভিডিও
বিলুপ্তপ্রায় শুশুক ধরে ভিডিও প্রকাশ করেছেন এক কনটেন্ট ক্রিয়েটর। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে ইতোমধ্যেই তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
ওই কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের নাম সাদ্দাম হোসেন (২৮)। তিনি কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার আমবাড়িয়া ইউনিয়নের নতুন তহ বাজার এলাকার আব্দুল আওয়ালের ছেলে। তার নিজের নামে থাকা একটি ফেসবুক পেজ থেকে গতকাল মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়।
২৮ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি কাঁধে একটি মৃত শুশুক নিয়ে দৌড়ে এসে বলেন, 'পাইছি রে পাইছি, এই … এবার পদ্মা নদীতে আইসা সব ইলিশ খায়া ফেলছে, মানুষজন কোন ইলিশ পাইতেছে না, তাই ধরিয়া আনছি।'
তাকে আরও বলতে শোনা যায়, 'এর নাম ডলফিন, পদ্মার সব ইলিশ খায়া ফেলছে।'
ভিডিওটি প্রকাশের পর প্রাণীপ্রেমী ও সচেতন নাগরিকদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দেয়। ভিডিওটির মন্তব্যে অনেকেই বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে ওই কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের শাস্তির দাবি জানান।
এর আগে একই পেজ থেকে নদীর বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী ধরে তৈরি করা একাধিক ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে।
সাদ্দাম হোসেন বলেন, ইলিশের মৌসুমে শুশুক বেশি ইলিশ খেলে পেটে ব্যথা হয়ে নদীর চরে উঠে পড়ে। তখন চড় থেকে নামতেও পারে না এবং কিছুক্ষণ পর মারা যায়। গতকালও একটি শুশুক মারা গেছে। জেলেরা শুশুকটি মৃত অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছিল। তাদের কাছ থেকে শুশুকটি নিয়ে ভিডিও বানিয়েছি।
জানতে চাইলে খোকসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মইনুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ড আইনগতভাবে অপরাধ। ঘটনাটি সম্পর্কে আমার জানা নাই। আপনার কাছ থেকে জানতে পারলাম। যাচাই করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল আলম বলেন, এ ঘটনার একটি ছবি আমাকে গতকাল হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো হয়েছিল। প্রথমে ভেবেছিলাম এটি রাজবাড়ীর ঘটনা। তাই খোঁজ নিইনি। তবে আপনি জানালেন, এখন বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
শুশুক এক প্রকার স্তন্যপায়ী জলজ প্রাণী। এটি ডলফিনের মতো দেখতে এবং মূলত মিঠা পানিতে বাস করে। বাংলাদেশে এটি 'বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন, ২০১২'-এর আওতায় সংরক্ষিত প্রজাতি। এই প্রাণী হত্যা, আটক বা বিক্রি আইনত দণ্ডনীয়।
বর্তমানে শুশুক বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির তালিকায় রয়েছে। বিনোদনের নামে বা আর্থিক লাভের আশায় বন্যপ্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ বন্ধে সামাজিক সচেতনতা এবং আইনের কঠোর প্রয়োগের দাবি জানিয়েছেন প্রাণীপ্রেমীরা।
