'বিশ্বস্ত বন্ধু'কে রাষ্ট্রদূত করে ভারতে পাঠাচ্ছেন ট্রাম্প; কেউ বলছেন 'দিল্লির জন্য চপেটাঘাত', মধ্যস্থতার সুযোগ দেখছেন কেউ
ডোনাল্ড ট্রাম্পের বই প্রকাশ থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ, এমনকি দ্বিতীয় মেয়াদে ওয়াশিংটনে বিশ্বস্তদের নিয়োগেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন সার্জিও গোর।
সম্প্রতি ট্রাম্প সার্জিও গোরকে ভারতে পরবর্তী মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত করেন। গত সপ্তাহে এই ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প গোরকে 'একজন অসাধারণ বন্ধু' এবং এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য 'সম্পূর্ণ বিশ্বস্ত' ব্যক্তি হিসেবে অভিহিত করেন। ভারতে ট্রাম্পের প্রতিনিধির দায়িত্বের পাশাপশি দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার অন্যান্য দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক তদারকির দায়িত্বও থাকছে তার ওপর।
এমনিতেই ভারতের ওপর ট্রাম্পের আরোপিত 'শাস্তিমূলক শুল্কের' কারণে দুই দেশের সম্পর্কে কিছুটা টানাপোড়েন চলছে। এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের একজন ঘনিষ্ঠ ও আস্থাভাজন ব্যক্তির রাষ্ট্রদূত হিসেবে আগমন দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন আলোচনা তৈরি করেছে।
এখন দেখার বিষয়, ট্রাম্পের এই ব্যক্তিগত পছন্দ কীভাবে ভারত-মার্কিন সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যায়।
যদিও গোরের নিয়োগ ভারতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। কিছু পর্যবেক্ষক বলছেন যে, ট্রাম্পের একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী এই পদাসীন হওয়ায় ভারত-মার্কিন সম্পর্কের জন্য এটি একটি ইতিবাচক লক্ষণ। তবে অন্যরা ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, কেন ভারতের দূতকে দক্ষিণ ও মধ্য এশীয় দেশগুলোর— যার মধ্যে পাকিস্তানের মতো ভারতের সঙ্গে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কযুক্ত দেশও রয়েছে— তাদের সাথে সম্পর্ক তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হলো।
অনেকের মতে, গোরের এই আঞ্চলিক ম্যান্ডেট ভারতের জন্য ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক, বিশেষ করে ভারতের 'রেড লাইন' কাশ্মীর ইস্যু—তাতে অতিরিক্ত হস্তক্ষেপের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে কাজ করা আমেরিকান থিংক-ট্যাঙ্ক কাউন্সিল অফ ফরেন রিলেশনস-এর আলিসা আয়ার্স বলেন, 'বিশেষ দূতের অতিরিক্ত এই পদবি সম্ভবত কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে, অন্তত ভারতের ক্ষেত্রে। ভারত সাধারণত পাকিস্তানকে নিয়ে 'একসঙ্গে' আলোচিত হতে পছন্দ করে না।'
ভারত ২০০৯ সালেও একই ধরনের পরিস্থিতিতে পড়েছিল, যখন ওবামা প্রশাসন রিচার্ড হোলব্রুককে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ভারতের জন্য বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগের কথা বিবেচনা করছিলেন। ধারণা করা হয়, দিল্লি এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে লবিং করার ফলে হোলব্রুককে কেবল পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের দূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
তবে, ওবামার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে কাজ করেন ট্রাম্প। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্প্রতি চার দিনের সংঘাতের অবসান ঘটাতে মধ্যস্থতা করার কৃতিত্ব প্রকাশ্যে দাবি করেছিলেন তিনি। যদিও ভারত এই দাবি সরাসরি অস্বীকার করে জানায় যে, যুদ্ধবিরতিতে কোনো বাইরের শক্তির ভূমিকা ছিল না।
এছাড়াও, ট্রাম্প প্রশাসন একটি সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তিতে ভারতের কাছে দুধ ও কৃষিক্ষেত্রে আরও বেশি প্রবেশাধিকারের দাবি তুলেছে, যে খাতগুলোকে ভারত সুরক্ষা দিতে আগ্রহী।
ভারতে গোরের উপস্থিতি ওয়াশিংটন-দিল্লি সম্পর্কের এই ধরনের বাধাগুলো অতিক্রম করে সম্পর্ককে শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে, নাকি তিনি ট্রাম্পের নির্দেশ বাস্তবায়নে কঠোর ভূমিকা পালন করবেন, এটিই এখন দেখার বিষয়।
জানা যায়, গোর শুধু ট্রাম্পের সঙ্গেই নয়, ইভাঙ্কা ট্রাম্প, জ্যারেড কুশনার এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়রসহ ট্রাম্প পরিবারের সবার সঙ্গেই সুসম্পর্ক বজায় রাখেন।
ফক্স নিউজে দুই বছর কাজ করার পর, গোর বেশ কয়েকজন রিপাবলিকান রাজনীতিবিদের সঙ্গে কাজ করেন এবং ২০২০ সালে ট্রাম্পের তহবিল সংগ্রহকারী দলে যোগ দেন।
এর এক বছর পর, তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়রের সঙ্গে 'উইনিং টিম পাবলিশিং' প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরবর্তীতে 'সেভ আমেরিকা' নামক ফটোবুকসহ ট্রাম্পের একাধিক বই প্রকাশ করেছে।
