হামলার পরিকল্পনা নেই বলছেন ট্রাম্প, তবু কেন ভেনেজুয়েলা ঘিরে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি বাড়ছে?
ভেনেজুয়েলায় সামরিক হামলা চালানোর কোনো পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের নেই বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও ক্যারিবীয় অঞ্চলে ব্যাপক মার্কিন সামরিক উপস্থিতির মধ্যেই তার এই বক্তব্য চলতি মাসের শুরুতে তারই করা আরেক মন্তব্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে ক্যারিবীয় অঞ্চলে যুদ্ধবিমান, রণতরী এবং হাজারো সেনা মোতায়েন করেছে। একই সঙ্গে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ডও ভেনেজুয়েলার উপকূলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
শুক্রবার এয়ার ফোর্স ওয়ানে থাকা অবস্থায় সাংবাদিকেরা ভেনেজুয়েলায় হামলার পরিকল্পনার বিষয়ে গণমাধ্যমের খবরের সত্যতা জানতে চাইলে ট্রাম্প এককথায় 'না' বলে দেন।
একই সুরে কথা বলেছেন প্রভাবশালী রিপাবলিকান সিনেটর মার্কো রুবিও। মিয়ামি হারাল্ডের প্রতিবেদনকে তিনি ভিত্তিহীন দাবি করেন।
এর আগে ট্রাম্প এই মাসে অন্তত দুইবার ভেনেজুয়েলা নিয়ে মন্তব্য করেছেন। গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, অভিযানের জন্য তিনি 'অগত্যা যুদ্ধের ঘোষণার জন্য অনুরোধ' করবেন না। সেই সাথে তিনি মাদক পাচারকারীদের হত্যা করার কথাও বলেন।
উল্লেখ্য, সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে মার্কিন সামরিক বাহিনী ক্যারিবীয় অঞ্চল ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে বেশ কয়েকটি নৌযানে অভিযান চালিয়েছে। এতে অন্তত ৬২ জন নিহত এবং ১৪টি নৌকা ও একটি সেমি-সাবমার্সিবল ধ্বংস হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসন এসব হামলাকে মাদক চোরাচালানবিরোধী অভিযান বলে দাবি করলেও, তাদের দাবির সপক্ষে এখন পর্যন্ত কোনো প্রমাণ জনসমক্ষে হাজির করতে পারেনি।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক এই হামলাগুলোকে 'অগ্রহণযোগ্য উল্লেখ করে নিন্দা জানান।
এদিকে, শুক্রবার প্রকাশিত নতুন এক ইউগভ জনমত জরিপে দেখা গেছে, ভেনেজুয়েলার চারপাশে মার্কিন নৌবাহিনীর উপস্থিতি মানুষ কম সমর্থন করছে।
সর্বশেষ জরিপে, মাত্র ৩০ শতাংশ মানুষ নৌবাহিনীর এই উপস্থিতিকে সমর্থন করেছেন, যেখানে ৩৭ শতাংশ এর বিরোধিতা করেছেন। এর বিপরীতে, সেপ্টেম্বরে ৩৬ শতাংশ মানুষ এই পদক্ষেপকে সমর্থন এবং ৩৮ শতাংশ এর বিরোধিতা করেছিলেন।
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো এই সামরিক উত্তেজনার জবাবে যুক্তরাষ্ট্রকে 'নতুন এক চিরস্থায়ী যুদ্ধ তৈরির পাঁয়তারা' করার অভিযোগে অভিযুক্ত করে।
মাদুরো যুক্তরাষ্ট্রে মাদক পাচারের অভিযোগও অস্বীকার করেন। গত সপ্তাহে তিনি বলেন, 'ভেনেজুয়েলা কোকেন উৎপাদনকারী দেশ নয়।' বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে বেশিরভাগ মাদক মেক্সিকোর স্থল সীমান্ত দিয়ে পাচার হয় এবং এর সঙ্গে মার্কিন নাগরিকেরাই বেশি জড়িত।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিওর মন্তব্যের পরও, ভেনেজুয়েলার পার্শ্ববর্তী দেশ ত্রিনিদাদ ও টোবাগো শুক্রবার তার সেনাবাহিনী সতর্ক অবস্থানে স্থাপন করেছে এবং সমস্ত সৈন্যকে তাদের ঘাঁটিতে ফিরিয়ে পাঠিয়েছে।
এর আগে গত মঙ্গলবার মার্কিন রণতরী 'ইউএসএস গ্রেভলি'কে নিজেদের বন্দরে স্বাগত জানানোর কারণে প্রতিবেশী দেশ ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্যাস চুক্তি স্থগিত করে ভেনেজুয়েলা। যদিও ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ওই যুদ্ধজাহাজ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিয়মিত যৌথ সামরিক অনুশীলনের জন্য সেখানে অবস্থান করছিল।
