ইউক্রেনে শান্তি ফেরাতে ন্যাটোর সম্প্রসারণ বন্ধ করতে হবে: শি ও মোদির সঙ্গে বৈঠকের পর পুতিন

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কথা বলেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। পুতিন বলেছেন, ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে ও তা টেকসই করতে হলে পূর্বাঞ্চলে ন্যাটোর সম্প্রসারণ ইস্যু সমাধান করতে হবে।
পুতিন ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন আক্রমণের নির্দেশ দেন। এর আগে টানা আট বছর পূর্ব ইউক্রেনে রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে ইউক্রেনীয় সেনাদের সংঘর্ষ চলমান ছিল। বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশের কিছু কম ভূখণ্ড রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
ইউক্রেন ও পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলো রাশিয়ার আগ্রাসনকে নৃশংস সাম্রাজ্যবাদী ভূখণ্ড দখলের চেষ্টা হিসেবে বর্ণনা করে। তবে পুতিন এ যুদ্ধকে একটি 'ক্ষীয়মাণ পশ্চিমা বিশ্বের' বিরুদ্ধে লড়াই হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তার দাবি, ১৯৮৯ সালে বার্লিন প্রাচীর পতনের পর ন্যাটোকে পূর্বদিকে সম্প্রসারণের মাধ্যমে পশ্চিমা শক্তিগুলো রাশিয়াকে অপমান করেছে।
চীনের তিয়ানজিনে সাংহাই কো-অপারেশন ওর্গানাইজেশনের (এসসিও) সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পুতিনের হাত ধরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের দিকে এগিয়ে যান। এ সময় তিন নেতা হাসিমুখে কথা বলেন, তাদের পাশে দোভাষীরাও ছিলেন।
সম্মেলনে বক্তৃতাকালে পুতিন বলেন, পশ্চিমারা প্রথমে ইউক্রেনকে নিজেদের প্রভাববলয়ে টানার চেষ্টা করে এবং পরে সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রটিকে যুক্তরাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা চালায়।
পুতিন বলেন, 'ইউক্রেনে টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সংকটের মূল কারণগুলো দূর করতে হবে। আমি এ বিষয়গুলো কেবল এখনই নয়, এর আগেও বহুবার উল্লেখ করেছি।'
তিনি আরও বলেন, 'নিরাপত্তা ক্ষেত্রে একটি ন্যায্য ভারসাম্য পুনঃস্থাপন করতে হবে।'
২০০৮ সালে বুখারেস্টে অনুষ্ঠিত ন্যাটো সম্মেলনে নেতারা সম্মত হন যে, একদিন ইউক্রেন ও জর্জিয়া এই সামরিক জোটের সদস্য হবে। ২০১৯ সালে ইউক্রেন তাদের সংবিধান সংশোধন করে ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পূর্ণ সদস্যপদ অর্জনের প্রতিশ্রুতি যুক্ত করে।
রয়টার্সের মে মাসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধ শেষ করার শর্ত হিসেবে পুতিন পশ্চিমা নেতাদের কাছ থেকে লিখিত অঙ্গীকার চান যে, তারা ন্যাটোকে আর পূর্বদিকে সম্প্রসারণ করতে দেবে না এবং রাশিয়ার ওপর আরোপিত কিছু নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে।
পুতিন আরও বলেন, আগস্টে আলাস্কায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে তার সঙ্গে যে 'বোঝাপড়া' হয়েছিল, তা ইউক্রেনে শান্তির পথ উন্মুক্ত করেছে। তিনি চীনে অনুষ্ঠিত আঞ্চলিক সম্মেলনে অংশ নেওয়া নেতাদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করবেন বলেও জানান।
ফোরামে বক্তব্য দিতে গিয়ে পুতিন বলেন, 'ইউক্রেন সংকট সমাধানে চীন ও ভারতের প্রচেষ্টা ও প্রস্তাবকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে মূল্যায়ন করি।'
তিনি আরও বলেন, 'সম্প্রতি আলাস্কায় অনুষ্ঠিত রাশিয়া–যুক্তরাষ্ট্র বৈঠকে যে বোঝাপড়া হয়েছে, সেটিও এ লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে বলে আমি আশা করি।'
পুতিন জানান, রোববার তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনার সাফল্য ও সংঘাত সমাধানে ইতিমধ্যেই শুরু হওয়া কাজের বিস্তারিত অবহিত করেছেন। তিনি আরও জানান, শি এবং অন্য নেতাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেবেন।
চীন ও ভারত রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেন রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার কারণে। তবুও, এ পর্যন্ত ভারত বা চীন রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করবে এ বিষয়ে কোনো ইঙ্গিত দেয়নি।