ইরানের ওপর পরমাণু নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করতে চায় ইউরোপের তিন দেশ, তেহরানের ক্ষোভ

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপের তিন দেশ—ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি (ই-থ্রি) বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের ৩০ দিনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। 'স্ন্যাপব্যাক মেকানিজম' নামে পরিচিত এই ধারা অনুযায়ী, আগামী এক মাসের মধ্যে নিরাপত্তা পরিষদে কোনো ভিন্ন সিদ্ধান্ত না হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইরানের ওপর আগের সব নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল হবে। এর ফলে দেশটির ব্যাংকিং, জ্বালানি ও প্রতিরক্ষা খাত বড় ধরনের চাপে পড়বে।
ঘটনার পরপরই ইরানের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলোর এই পদক্ষেপ কূটনীতির পথে বাধা তৈরি করছে। তবে তিনি জানান, তেহরান আলোচনার দ্বার পুরোপুরি বন্ধ করছে না।
২০১৫ সালে বিশ্বশক্তিগুলোর সঙ্গে হওয়া পারমাণবিক চুক্তির অধীনে ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছিল। কিন্তু চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ তুলে ই-থ্রি নতুন করে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের উদ্যোগ নেয়। এ পদক্ষেপের আগে তারা জেনেভায় ইরানের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা চালায়, তবে সেখান থেকে পর্যাপ্ত অগ্রগতির ইঙ্গিত না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত কঠোর অবস্থান নেয়।
ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নোয়েল বারো বলেন, এ সিদ্ধান্ত কূটনীতির ইতি টানবে না। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ওয়াডেফুল ইরানকে জাতিসংঘের পরমাণু সংস্থার সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসার আহ্বান জানান।
ইতিমধ্যে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে এ নিয়ে শুক্রবার বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। অন্যদিকে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ইউরোপীয় দেশগুলোর পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য যুক্তরাষ্ট্র আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। তবে ইরান জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সামরিক হামলা না করার নিশ্চয়তা দিলে তবেই তারা আলোচনায় রাজি হবে।
রাশিয়া ও চীন ইরানের পক্ষ নিয়ে নতুন একটি খসড়া প্রস্তাব দিয়েছে, যাতে চুক্তি আরও ছয় মাস বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। তবে প্রস্তাবটি এখনও ভোটে তোলা হয়নি।
আইএইএ জানিয়েছে, জুনে ইসরায়েলি হামলার আগে ইরান ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুত করেছিল, যা আরও পরিশোধিত হলে একাধিক পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মতো উপাদান হতে পারে। যদিও এখন পর্যন্ত সমন্বিত অস্ত্র তৈরির প্রকল্পের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
পশ্চিমা দেশগুলোর দাবি, ইরানের কর্মসূচি বেসামরিক সীমা ছাড়িয়ে গেছে। তবে তেহরান বলছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি কেবল শান্তিপূর্ণ জ্বালানি উৎপাদনের জন্যই।