ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছেছে যুক্তরাষ্ট্র: ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে একটি নতুন পরমাণু চুক্তির "অত্যন্ত কাছাকাছি" পৌঁছে গেছে এবং তেহরান এই চুক্তির শর্তগুলোতে "আংশিকভাবে" সম্মত হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১৬ মে) উপসাগরীয় অঞ্চল সফরকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, "ইরানের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি শান্তির লক্ষ্যে আমরা গঠনমূলক আলোচনায় রয়েছি।"
তিনি আরও বলেন, "এই সমস্যা সমাধানের দুটি পথ আছে—একটি শান্তিপূর্ণ এবং অন্যটি সহিংস। আমি দ্বিতীয় পথটা চাই না। আমরা সম্ভবত এমন একটা জায়গায় চলে এসেছি যেখানে চুক্তি সম্ভব।"
তেহরানের 'আংশিক' সম্মতি, তবু মতবিরোধ রয়েই গেছে
ইরানের আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র রয়টার্সকে জানায়, এখনও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মতপার্থক্য রয়ে গেছে। তবে চুক্তি নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।
ওমানে গত রোববার ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের আলোচকদের মধ্যে চতুর্থ দফা আলোচনা হয়েছে, যার পরবর্তী ধাপের প্রস্তুতি চলছে।
মার্কিন গণমাধ্যম এক্সিওস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই দিন ট্রাম্প প্রশাসন ইরানকে একটি প্রস্তাব দিয়েছে, যার আওতায় নতুন চুক্তির খসড়া উপস্থাপন করা হয়।
জ্বালানি তেলের বাজারে প্রভাব
এদিকে চুক্তির সম্ভাব্যতা নিয়ে খবর প্রকাশের পরপরই আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম আজ বৃহস্পতিবার প্রায় ২ ডলার কমেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, চুক্তি হলে ইরানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শিথিল হতে পারে, যার ফলে বিশ্ববাজারে তেলের সরবরাহ বাড়বে।
তেহরানের প্রস্তাব: পরমাণু অস্ত্র নয়, শান্তিপূর্ণ কাজে ইউরেনিয়াম ব্যবহার
এনবিসি নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির উপদেষ্টা আলি শামখানি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে রাজি হয়, তবে ইরানও একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে আগ্রহী।
তিনি বলেন, ইরান কখনো পরমাণু অস্ত্র তৈরি করবে না—এমন প্রতিশ্রুতি দিতে প্রস্তুত রয়েছে। শুধু শান্তিপূর্ণ বেসামরিক ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করবে এবং আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের তা পর্যবেক্ষণের অনুমতি দেবে।
'রেড লাইন' এখনো অমীমাংসিত
তবে এখানেই রয়েছে মূল সমস্যা জট পাকাচ্ছে। মার্কিন কর্মকর্তারা চাইছেন, ইরান যেন ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়, যা তেহরান স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।
ইরানি কর্মকর্তারা বলছেন, তারা সমৃদ্ধকরণের মাত্রা কমাতে প্রস্তুত, তবে সম্পূর্ণ বন্ধ করতে চান না। পাশাপাশি ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিতে (যা ট্রাম্প ২০১৮ সালে বাতিল করেছিলেন) যে পরিমাণ ইউরেনিয়াম মজুদ রাখার অনুমতি ছিল, তার চেয়ে কমে রাজি নন তারা।
সূত্র জানিয়েছে, ইরান ধাপে ধাপে মজুদ ইউরেনিয়াম সরিয়ে নিতে চায়, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তা একধাপে চায়। এছাড়া কোথায় পাঠানো হবে এই সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম—এই বিষয়েও দ্বিমত রয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, উভয় পক্ষের মধ্যে পারস্পরিক আস্থার ঘাটতি এবং জটিল কূটনৈতিক অবস্থান এই আলোচনাকে এখনও চূড়ান্ত রূপ দিতে বাধা দিচ্ছে। তবে উভয় পক্ষই সামরিক সংঘাত এড়িয়ে কূটনৈতিক সমাধানের পথেই এগোতে চায় বলে বার্তা দিচ্ছে।