ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অধিকার পুনর্ব্যক্ত করল ইরান

ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের নিজস্ব অধিকার পুনর্ব্যক্ত করেছে ইরান। ওমানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নির্ধারিত পরবর্তী দফার আলোচনা হঠাৎ করেই স্থগিত হওয়ায় ইরান এই অবস্থান জানায়।
শনিবার (৪ মে) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেন, 'পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিতে (এনপিটি) স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে ইরানের পূর্ণ পারমাণবিক জ্বালানি চক্র রাখার অধিকার রয়েছে।'
আরাঘচি তাদের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কার্যক্রমের দাবি পুনর্ব্যক্ত করে আরও বলেন, 'পরমাণু অস্ত্র উৎপাদন না করেও অনেক এনপিটি সদস্য দেশই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে।'
ইরানকে সব ধরনের সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম বন্ধ করার মার্কিন দাবির জবাবে আরাঘচি বলেন, 'সর্বোচ্চ দাবি আর উত্তেজক বক্তব্য কেবল সাফল্যের সম্ভাবনাই ক্ষুণ্ন করে।'
এর আগে বৃহস্পতিবার ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও দাবি করেন, 'বিশ্বের যেসব দেশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে, তারাই পারমাণবিক অস্ত্রধারী।' তবে জার্মানি, জাপান ও ব্রাজিলের মতো দেশগুলোও পরমাণু অস্ত্র না রেখেই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যকার চতুর্থ দফার পরোক্ষ আলোচনা শনিবার ওমানে হওয়ার কথা থাকলেও তা স্থগিত হয়েছে। মধ্যস্থতাকারী দেশ ওমান বলেছে, 'লজিস্টিক কারণে' আলোচনা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। নতুন তারিখ এখনও নির্ধারিত হয়নি।
রয়টার্সকে এক ইরানি কর্মকর্তা বলেছেন, 'আলোচনা কখন হবে তা যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের উপর নির্ভর করছে।'
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তেল বিক্রি এবং ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখার অভিযোগে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এর জবাবে তেহরান বলেছে, ওয়াশিংটন 'বিরোধপূর্ণ বার্তা' পাঠাচ্ছে, যা কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
এর মধ্যেই ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জঁ-নোয়েল বারো বলেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের দ্বারপ্রান্তে। যদিও তেহরান এ দাবিকে 'একেবারে অযৌক্তিক' বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
ইরান বরাবরই বলে আসছে, তারা পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে চায় না এবং তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-র নজরদারির আওতায় পরিচালিত হচ্ছে।
আরাঘচি আরও বলেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অধিকার 'আলোচনার অযোগ্য', যদিও আইএইএ প্রধান রাফায়েল গ্রোসি গত বুধবার ইঙ্গিত দিয়েছেন, কোনও সমঝোতা হলে ইরানে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম হয় গলিয়ে ফেলা হবে, না হয় রপ্তানি করা হতে পারে।
বৈশ্বিক শক্তিগুলো ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার সম্ভাবনা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে ওই চুক্তি থেকে সরে আসার পর ২০১৮ সালে তা কার্যত ভেঙে পড়ে।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের 'যৌথ বিস্তৃত কর্মপরিকল্পনা' (জেসিপিওএ) নামে পরিচিত ওই চুক্তি ইরানকে তাদের পারমাণবিক কার্যক্রম সীমিত করার শর্তে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার সুযোগ দিয়েছিল।