মোটরসাইকেল কিনতে সুদমুক্ত ঋণ পাবেন এসআই ও এএসআইরা, থাকবে জ্বালানি ও রক্ষণাবেক্ষণের সুবিধাও

ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিতি নিশ্চিত করা, আসামি গ্রেপ্তার ও মামলার তদন্ত দ্রুত সম্পন্ন করতে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ও সহকারী উপপরিদর্শকদের (এএসআই) সুদমুক্ত ঋণ সুবিধায় মোটরসাইকেল কেনার সুযোগ দিতে যাচ্ছে সরকার। একইসঙ্গে এই ঋণে কেনা মোটরসাইকেলের জ্বালানি ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বাবদ প্রথম পাঁচ বছর প্রতি মাসে সরকার থেকে ৫ হাজার টাকা এবং পরবর্তী বছর থেকে প্রতি মাসে ৭ হাজার টাকা দেওয়া হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এসআই ও এএসআইদের সর্বোচ্চ ১৫০ সিসি পর্যন্ত মোটরসাইকেল কেনার জন্য সুদমুক্ত ঋণ দিতে সোনালী ব্যাংক ৯ শতাংশ সরল সুদে পুলিশ পরিচালিত কমিউনিটি ব্যাংককে ৬০০ কোটি টাকা ঋণ দেবে। আর কমিউনিটি ব্যাংক এসআই ও এএসআইদের ঋণ দেবে। পাঁচ বছরে ৬০ কিস্তিতে ঋণগ্রহীতাদের বেতন থেকে কিস্তিতে টাকা কেটে নেবে কমিউনিটি ব্যাংক। আর এই ঋণের সুদ পরিশোধ করবে অর্থ মন্ত্রণালয়।
গত ৩০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় এসব সিদ্ধান্তসহ একটি নীতিমালা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত হয়। সভার কার্যবিবরণী থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, পুলিশের এসআই ও এএসআইদের মোটরসাইকেল দেওয়ার সুদমুক্ত ঋণ দেওয়ার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গেও আলোচনা করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রধান উপদেষ্টা যেকোনো তফসিলি ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে বলেছেন এবং সরকার এ ঋণের সুদ পরিশোধ করবে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আশ্বাস দিয়েছে।
এর আগে গত জানুয়ারিতে পুলিশ সদস্যদের মোটরসাইকেল কেনার জন্য বেতন স্কেলের ওপর ভিত্তি করে জনপ্রতি আড়াই লাখ থেকে ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত সুদমুক্ত অগ্রিম সুবিধা চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাতে সরকারের কাজে ব্যবহারের জন্য মোটরসাইকেল বন্ধক রাখা সাপেক্ষে অবচয়ন নির্ধারণ করে মূল্য পরিশোধের সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই প্রস্তাব গত মার্চে নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়।
প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা অনুযায়ী এখন নতুন করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রস্তাব পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে সোনালী ব্যাংক থেকে ৯ শতাংশ সরল সুদে পাওয়া ঋণ পুলিশ সদস্যদের মাঝে বিতরণ করবে কমিউনিটি ব্যাংক। এ বিষয়ে দুই ব্যাংকের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় এই ঋণের সুদ সরকারের পক্ষ থেকে সোনালী ব্যাংককে পরিশোধ করবে। তবে ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে কমিউনিটি ব্যাংকের আরোপ করা সার্ভিস চার্জ ঋণগ্রহীতা পুলিশ সদস্য বহন করবেন।
গ্রামাঞ্চল, দূর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকার পুলিশ সদস্যদের ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। চাকরিতে যোগদানের দুই বছর পর থেকে এসআই ও এএসআইরা এ ঋণ সুবিধা নিতে পারবেন এবং চাকরিজীবন শেষ হওয়ার কমপক্ষে সাত বছর আগ পর্যন্ত এ ঋণ নেওয়ার সুযোগ থাকবে। অর্থাৎ, যাদের চাকরির মেয়াদ সাত বছরের কম রয়েছে, তারা এ সুবিধা পাবেন না।
এছাড়া, মোটরসাইকেল জ্বালানি ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতি মাসে এসআই ও এএসআইদের অর্থ দেওয়া হবে বাংলাদেশ পুলিশের জ্বালানি ও রক্ষণাবেক্ষণ খাত থেকে। এই খাতে প্রতি বছর পুলিশের যানবাহনের জন্য বাজেট বরাদ্দ দিয়ে থাকে অর্থ মন্ত্রণালয়। মোটরসাইকেলের জ্বালানি ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ও এ খাত থেকে দেওয়া হলে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমরা এখনও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নতুন কোনো প্রস্তাব পাইনি। প্রস্তাব পাওয়ার পর তা পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।'
সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণি বলেন, 'মামলা তদন্ত পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম, যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসআই ও এএসআই পর্যায়ের কর্মকর্তারা পরিচালনা করেন। ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছানো, সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ ও সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মাঠপর্যায়ে অধিক চলাচলের প্রয়োজন হয়। ব্যক্তিগত যানবাহনের অভাবে অনেক ক্ষেত্রেই তদন্ত কার্যক্রম বিলম্ব হয়।'
তিনি আরও বলেন, 'এসআই ও এএসআই পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যদের জন্য বিনাসুদে মোটরসাইকেল কেনার ঋণ সুবিধা দেওয়ার ফলে তদন্তে গতি আসবে, মাঠপর্যায়ে পুলিশের উপস্থিতি বাড়বে এবং সার্বিকভাবে জনসেবার মান বাড়বে।'
সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, ঋণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত মোটরসাইকেলটি বাংলাদেশ পুলিশের অনুকূলে বন্ধক রাখতে হবে এবং ঋণের টাকা পরিশোধ না করে চাকরি ছেড়ে দিলে বকেয়া পেনশন ও গ্রাচুইটি থেকে তা সমন্বয় করা হবে।
আরও বলা হয়েছে, ঋণ পরিশোধ হওয়ার পরও চাকরির মেয়াদে সুদমুক্ত ঋণে কেনা মোটরসাইকেল সরকারি কাজে ব্যবহার করতে হবে।