যুক্তরাষ্ট্রে সাড়ে ৫ কোটি বিদেশির ভিসা পর্যালোচনা করছে ট্রাম্প প্রশাসন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, বৈধ মার্কিন ভিসাধারী প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি বিদেশির নথি তারা পর্যালোচনা করছে। এর উদ্দেশ্য হলো, কারও ভিসা বাতিল বা অভিবাসন আইনের লঙ্ঘনের কারণে তাকে দেশ থেকে বহিষ্কারযোগ্য কি না, তা নির্ধারণ করা।
এই খবর প্রকাশের অল্প সময় পর বৃহস্পতিবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ঘোষণা দেন যে, দেশটি অবিলম্বে বাণিজ্যিক ট্রাকচালকদের জন্য সব কর্ম ভিসা ইস্যু স্থগিত করছে। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দাবি করেন, বিদেশি ট্রাকচালকরা 'আমেরিকানদের জীবনের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে এবং দেশীয় ট্রাকচালকদের জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত করছে।'
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে দেওয়া লিখিত জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, সসব মার্কিন ভিসাধারীর ভিসাই 'বারবার যাচাই-বাছাই' করা হচ্ছে। এর উদ্দেশ্য হলো, তারা ভিসার জন্য অযোগ্য হতে পারেন—এমন কোনো ইঙ্গিত আছে কি না, তা খুঁজে বের করা।
যদি এমন তথ্য পাওয়া যায়, তবে ভিসা বাতিল করা হবে। আর ভিসাধারী যদি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করেন, তবে তাকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে।
পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, অযোগ্যতার ইঙ্গিত খোঁজার সময় তারা বিশেষ করে যে বিষয়গুলো দেখছে, সেগুলো হলো— ভিসার মেয়াদোত্তীর্ণের পরও অবস্থান করা, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকা, জননিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি করা, কোনো ধরনের 'সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে' জড়িত থাকা কিংবা কোনো 'সন্ত্রাসী সংগঠনকে' সহযোগিতা করা।
পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তারা সব ধরনের তথ্য খতিয়ে দেখে—এর মধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নথি, অভিবাসন রেকর্ড কিংবা ভিসা ইস্যুর পর প্রকাশ পাওয়া যেকোনো নতুন তথ্য অন্তর্ভুক্ত থাকে, যা ভিসাধারীর অযোগ্যতার ইঙ্গিত দিতে পারে।
গত জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসনের বিরুদ্ধে ব্যাপক দমনপীড়নের নির্দেশ দিয়েছেন। এর আওতায় শুধু অবৈধ অভিবাসীরাই নয়, বৈধ কাগজপত্রধারীরাও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন।
শুরুতে সরকার জানিয়েছিল, তাদের নজর থাকবে কেবল বিপজ্জনক অপরাধীদের ওপর। কিন্তু বাস্তবে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। নিউইয়র্ক টাইমস এ সপ্তাহে জানিয়েছে, এ গতিতে চলতে থাকলে ২০২৫ সালে সরকার প্রায় ৪ লাখ মানুষকে বহিষ্কার করতে পারে।
কর্তৃপক্ষ কর্মরত অভিবাসীদের ধরতে নজিরবিহীনভাবে রেস্টুরেন্ট, নির্মাণস্থল ও কৃষিখামারে অভিযান চালাচ্ছে। এমনকি আদালতেও অভিযান হচ্ছে। সেখানে অনেকে বৈধ হওয়ার প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় দেওয়ানি কার্যক্রমে অংশ নিতে গিয়ে অভিবাসন কর্মকর্তাদের হাতে গ্রেপ্তার হচ্ছেন।
এছাড়া সরকার 'হিউম্যানিটারিয়ান প্যারোল' ও 'টেম্পোরারি প্রোটেক্টেড স্ট্যাটাস (টিপিএস)' বাতিল করার উদ্যোগ নিয়েছে।
শিক্ষার্থী ভিসাধারীরাও একইভাবে টার্গেট হয়েছেন। পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, এ বছর এখন পর্যন্ত ছয় হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে।
দপ্তরের দাবি, এসব শিক্ষার্থী হয় 'আইন ভঙ্গ করেছে, নয়তো সন্ত্রাসবাদের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে'। তবে প্রমাণিত অনেক ঘটনায় দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা কেবল ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন বা একটি মতামতধর্মী প্রবন্ধ লিখেছিলেন—যা যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানেই মত প্রকাশের স্বাধীনতার আওতাভুক্ত।
এমনকি যেসব শিক্ষার্থী কোনো ধরনের আন্দোলন বা কর্মকাণ্ডেও জড়াননি, তাদেরও ভিসা বাতিল করা হয়েছে।
