ইউক্রেন প্রশ্নে ট্রাম্পের সম্ভাব্য সমর্থন প্রত্যাহার: ইউরোপের বিকল্প পরিকল্পনার অভাব

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির পাশে দাঁড়ানোর জন্য ইউরোপীয় নেতাদের ওয়াশিংটনে যাওয়া নিঃসন্দেহে রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ। উচ্চ ঝুঁকির এই বৈঠকে ডোনাল্ড ট্রাম্প অংশ নিচ্ছেন—যিনি ইউক্রেনকে ভূখণ্ড ছাড় দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করবেন। এতে খুশিই হবেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, কিন্তু ইউক্রেনের জন্য এটি হবে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। একইসঙ্গে, এমন একটি সমঝোতা আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিকে নড়বড়ে করে তুলতে পারে।
এই বাস্তবতায়, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁসহ ইউরোপীয় নেতারা ট্রান্স-আটলান্টিক দ্বন্দ্ব এড়াতে চাইছেন, তবে বড় প্রশ্ন হলো: যুক্তরাষ্ট্র যদি ইউক্রেন ইস্যুতে পুরোপুরি সমর্থন তুলে নেয়, তবে ইউরোপের হাতে রাশিয়ার আগ্রাসনের মোকাবিলায় কার্যকর পরিকল্পনা কোথায়?
ওয়াশিংটনে আজ সোমবারের ধারাবাহিক বৈঠকগুলো থেকে সর্বোচ্চ যে ফল পাওয়া যেতে পারে, তা হলো রাশিয়ার কাছে একটি প্রাথমিক যুদ্ধবিরতির খসড়া প্রস্তাব পেশ করা। তবে একটি স্থায়ী শান্তিচুক্তি গড়ে উঠতে মাসের পর মাস সময় লাগবে। এমনকি সেই সাময়িক চুক্তিও বড় চ্যালেঞ্জের মুখে। কারণ, পুতিনকে প্রথমে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে হবে। এর বিনিময়ে ইউক্রেনকে স্বীকার করতে হবে যে সব ইস্যুই আলোচনার টেবিলে আসতে পারে—এর মধ্যে রয়েছে ২০১৪ সালে রাশিয়ার দখলকৃত ক্রিমিয়ার অবস্থানও।
এছাড়া রুশ প্রেসিডেন্টকেও মেনে নিতে হবে যে যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে তাকে কিছু গুরুতর চাপ দেওয়া হবে। ইউরোপের কিছু শক্তিধর দেশ, যেমন যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স—ইউক্রেনে শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠাতে প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু এখানেই দেখা দিচ্ছে বিভাজন। এই দেশগুলোর সামরিক সক্ষমতা যথেষ্ট নয়, আর যুক্তরাষ্ট্রও স্পষ্টতই যুদ্ধবিরতি তদারকিতে আগ্রহী নয়।
ওয়াশিংটনে আশাব্যঞ্জক কোনো সমঝোতা না হলে ইউরোপের সামনে নগ্ন সত্যটাই প্রকাশ পাবে। আর সেটা হলো ইউরোপের শক্তিগুলো এখনো যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন প্রতিহত করার মতো কোনো বিশ্বাসযোগ্য কৌশল তৈরি করতে পারেনি।
আর্থিক সক্ষমতা এখানে সমস্যা নয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের হাতেই যথেষ্ট সামর্থ্য রয়েছে ওয়াশিংটনের উপস্থিতির ঘাটতি পূরণের। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন—ইউক্রেন সরকারকে ৪৯ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন করেছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের অবদান ৩০ বিলিয়ন ডলার। এমনকি সামরিক সহায়তার ক্ষেত্রেও, কিয়েল ইনস্টিটিউট ফর দ্য ওয়ার্ল্ড ইকোনমির তথ্যমতে, এ বছরের মে থেকে ইউরোপ যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে গেছে।
কিন্তু, সামরিক প্রশ্নটি এখন নতুন মাত্রায় জটিল হয়ে উঠছে। রাশিয়া ধারাবাহিকভাবে ইউক্রেনে নতুন ভূখণ্ড দখল করছে। জুনে ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে ২০৩৫ সালের মধ্যে তাদের সামরিক ব্যয় জিডিপির ৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াবে। কিন্তু এটিও ইউক্রেন পরিস্থিতির জন্য তাৎক্ষণিক কোনো স্বস্তি দিচ্ছে না।
তাই ইউরোপকে এখন গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে সেই পরিস্থিতিকে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে হাত গুটিয়ে নিতে পারে। এর মানে হলো আরও বেশি সামরিক সহায়তা দিতে হবে ইউক্রেনকে, একইসঙ্গে স্বাধীন কূটনৈতিক নীতি তৈরি করতে হবে—যেখানে মস্কোর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ পুনরায় চালুর বিষয়টিও আসতে পারে। শেষপর্যন্ত ইউরোপকে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, তাদের ভবিষ্যৎ কোনো খামখেয়ালি মার্কিন প্রেসিডেন্টের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করে থাকতে পারে না।