‘আমার তাঁবুর পাশে বসা একটি ছবি পোস্ট করেন ট্রাম্প, তারপর হঠাৎ বুলডোজার দিয়ে তাঁবু গুঁড়িয়ে দেয়া হয়’

'এই যে, এটাই আমি!'
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পোস্ট করা ছবিগুলোতে নিজেকে বের করে দেখান বিল থিওডি। গৃহহীনদের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের সেই এক পোস্টেই বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয় তার তাঁবু।
গত রোববার ওয়াশিংটন ডিসিতে নিজের গলফ ক্লাবে যাওয়ার পথে হঠাৎ ট্রাম্পের নজরে আসে ঘাসের উপর তাবু টানানো একটি শিবির। এটি দেখে তিনি স্পষ্টতই বিরক্ত হন। সঙ্গে সঙ্গে শিবিরের চারটি ছবি তুলে তিনি ট্রুথ সোশ্যালে লিখেন, 'গৃহহীনদের অবিলম্বে এখান থেকে সরে যেতে হবে।'
ছবিগুলোর একটিতে দেখা যায় বিল তার তাবুর পাশে একটি ক্যাম্পিং চেয়ারে বসে আছেন। তিনি বলেন, 'এটা একেবারেই অবিশ্বাস্য যে, ট্রাম্প তার গাড়ির জানালা থেকে ঝুঁকে আমার ছবি তুললেন, তাও আবার সামাজিক মাধ্যমে নেতিবাচকভাবে ব্যবহার করলেন নিজের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে।'
সোমবার ট্রাম্প ঘোষণা করেন, তার প্রশাসনের মাধ্যমে 'সুন্দর সুন্দর পার্কগুলো থেকে গৃহহীনদের সরানো হচ্ছে'।
এই ঘোষণার পর বিবিসি ট্রাম্পের পোস্ট করা ছবিগুলোর বেশকিছু দৃশ্যমান সূত্র, যেমন বাঁকানো রাস্তার ধারে থাকা ঘাসের জায়গা, ব্যবহার করে গুগল স্ট্রিটভিউতে স্থানটির সঙ্গে মিলিয়েছে।
গৃহহীনদের শিবিরটি হোয়াইট হাউস থেকে গাড়িতে মাত্র দশ মিনিট দূরত্বে। স্থানটি পরিদর্শন করে দেখা যায়, স্থানীয় কর্মকর্তারা গৃহহীনদের সতর্ক করছেন যে শিগগিরই তাদের সরে যেতে হতে পারে।
'আমি বুঝি যে তিনি (ট্রাম্প) বিশৃঙ্খলা দেখতে পছন্দ করেন না। এজন্য আমরা এ জায়গাটি বিশেষভাবে পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করি। আমরা প্রেসিডেন্ট বা এখানে আসা অন্য কোনো ব্যক্তিকে অসম্মান করার চেষ্টা করছি না,' বলেন বিল।
২০১৮ সালের পর থেকে পূর্ণকালীন চাকরি নেই বিলের। মাত্র কয়েকটি শিফটে নির্মাণশিল্পে কাজ করেন তিনি। বহু বছর ধরেই তিনি এখানে বসবাস করছেন।

বিল জানান, বুলডোজার পাঠানোর আগে একজন স্থানীয় সাংবাদিক তাদের নিজেদের তাঁবু ও ব্যক্তিগত সামগ্রী সরানোর জন্য বারবার সতর্ক করছিলেন।
ডিসি ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসেসের ডেপুটি মেয়র ওয়েইন টারনেজ বলেন, ের আগেও ওয়াশিংটনে বিভিন্ন স্থান থেকে এসব শিবির সরানো হয়েছে।
তিনি বলেন, সাধারণত এ ধরনের কাজের জন্য অন্তত এক সপ্তাহের নোটিশ দেওয়া হয়, তবে ট্রাম্পের ঘোষণার পর এই প্রক্রিয়াটি খুব দ্রুতই সম্পন্ন হয়েছে।
স্থানীয় কর্মকর্তাদের মতে, এই গৃহহীন শিবিরটি শহরের সবচেয়ে বড় শিবির ছিল। ওয়াশিংটন ডিসি থেকে বেরোনোর প্রধান রুটের এক পাশে এখানে ১১ জন বসবাস করছিলেন।
চলতি বছরে শহরের গৃহহীন শিবিরে ৯৭ জন বসবাস করছিলেন, যা ২০২৩ সালের ২৯৪ জনের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। শহরের বার্ষিক জরিপ অনুযায়ী, চলতি বছরে গৃহহীন ব্যক্তির সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার ১৩৮, যা ২০২৪ সালের ৫ হাজার ৬১৩ জনের তুলনায় কম।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, যারা রাস্তায় ঘুমাচ্ছেন, তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে রাখার প্রস্তাব দেওয়া হবে এবং প্রয়োজন হলে আসক্তি বা মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। তবে কেউ যদি সরতে অস্বীকার করেন, তাদের জরিমানা বা কারাদণ্ডের মুখোমুখি হতে হতে পারে।
বিল থিওডি বলেন, 'আপনি মানুষদের জোর করে আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠাতে পারেন না। আমি সেখানে যেতে চাই না। ওসব ভালো জায়গা না।'
গৃহহীনদের সঙ্গে কাজ করা সংগঠনগুলো বলছে, সিস্টেমে সমস্যার কারণে আশ্রয়কেন্দ্রের ধারণ ক্ষমতা সীমিত।
৬৫ বছর বয়সী ওয়াশিংটন ডিসির বাসিন্দা জর্জ মর্গান ভাড়া দিতে না পারায় ফ্ল্যাট ছেড়ে দিয়ে দুই মাস ধরে ওই শিবিরে ছিলেন। উচ্ছেদের পর তাঁর খোঁজ নিতে ফোন করলে তিনি জানান, বর্তমানে একটি মোটেলের লবিতে পোষা কুকুরের সঙ্গে অবস্থান করছেন। একজন ব্যক্তি ওই মোটেলে থাকার জন্য একটি রাতের ভাড়া দিয়ে সাহায্য করেছিলেন।
মর্গান বলেন, 'দেখি, আরেকটা রাত থাকতে পারি কি না। আমার কুকুরের জন্য ১৫ ডলার দিতে হয়েছে। ওটাই ছিল আমার শেষ অর্থ।'