দ্রুতগতিতে মাত্র ১৫ মিনিট হাঁটলেই বাড়বে আয়ু: গবেষণা

ফিটনেসের জন্য জিম বা ব্যায়ামাগারে যাওয়ার সময় হচ্ছে না? চিন্তার কিছু নেই—প্রতিদিন অন্তত ১৫ মিনিট দ্রুতগতিতে হাঁটলেই সুস্থ থাকতে পারবেন আপনি, নতুন এক গবেষণায় এমনটাই জানানো হয়েছে।
গবেষণার প্রধান লেখক ডা. ওয়েই ঝেং বলেছেন, সাধারণত স্বাস্থ্যসচেতনরা সপ্তাহে মোট ১৫০ মিনিট মাঝারি ধরনের শারীরিক কর্মকাণ্ড করার পরামর্শ পেয়ে থাকেন, তবে যদি ১৫০ মিনিট সম্পূর্ণ করা কঠিন মনে হয়, তাহলে প্রতিদিন দ্রুতগতিতে অন্তত ১৫ মিনিট হাঁটলেই স্বাস্থ্যের জন্য সমান সুফল পাওয়া যায়।
ঝেং এবং তার দল ২০০২ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত মূলত নিম্ন-আয়ের এবং কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর প্রায় ৮৫ হাজার অংশগ্রহণকারীর ওপর এই গবেষণা পরিচালনা করেন।
অংশগ্রহণকারীদের তাদের ব্যায়াম অভ্যাস, হাঁটার গতি ও স্বাস্থ্যের ওপর বিস্তৃত প্রশ্নমালা দেওয়া হয়েছিল। প্রায় ১৬ বছর পর অংশগ্রহণকারীরা আবার প্রশ্নাবলী পূরণ করেন এবং ২০২৩ সালে এর বিশ্লেষণ শুরু হয়।
ন্যাশভিলের ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের ভ্যান্ডারবিল্ট এপিডেমিওলজি সেন্টারের ডিরেক্টর এবং অ্যান পটার উইলসন প্রফেসর ইন মেডিসিন ড. ঝেং বলেন, 'আমরা জানি 'দ্রুত হাঁটা ধীর হাঁটার চেয়ে ভালো', কিন্তু গড়ে কত মিনিট দ্রুত হাঁটা উচিত সে বিষয়ে খুব বেশি গবেষণা নেই।'
আমেরিকান জার্নাল অফ প্রিভেন্টিভ মেডিসিনে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে, যারা প্রতিদিন অন্তত ১৫ মিনিট দ্রুত গতিতে হাঁটেন, তাদের অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ধীরে ধীরে হাঁটেন, তাদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি হ্রাসের পরিমাণ মাত্র ৪ শতাংশ।
কার্ডিওভাসকুলার বিশেষজ্ঞ ডা. অ্যান্ড্রু ফ্রিম্যান বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরেই আমরা জানি হাঁটার গতি ও স্বাস্থ্যফলাফলগুলোর মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে। দ্রুত হাঁটা মানে ভালো স্বাস্থ্য, কারণ যারা শারীরিকভাবে দুর্বল, তারা সাধারণত দ্রুত হাঁটতে পারেন না।'
হাঁটার মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণ, রক্তে চিনি কমানো, ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো, জয়েন্টের ব্যথা কমানো এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির মতো স্বাস্থ্যগত উপকার পাওয়া যায়। নিয়মিত হাঁটা রক্তনালীগুলোর প্রসারণ ও কোলেস্টেরল কমানোর কাজ করে, যা হৃদরোগ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করে, জানালেন ফ্রিম্যান।
তাছাড়া, নিয়মিত হাঁটা আলঝেইমার বা স্মৃতিশক্তি হ্রাসের মতো জটিল রোগ থেকে মস্তিষ্ককে সুরক্ষিত রাখতেও সাহায্য করে।
পিডমন্ট মেডিক্যাল সেন্টার সূত্রে জানা যায়, দৈনিক শারীরিক পরিশ্রম মস্তিষ্কের গঠন উন্নত করে, প্রদাহ কমায় এবং ঘুমের গুণগত মান বাড়ায়।
ঝেং বললেন, 'ধীরে হাঁটলেও উপকার হয়, তবে দ্রুত হাঁটা যত্নসহকারে মাত্র ১৫ মিনিট করলেই তা প্রমাণিত সুফল দেয়।'
দ্রুত হাঁটা হৃদরোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস এবং হৃদস্পন্দনজনিত সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
ফ্রিম্যানের ভাষ্যে, 'রক্তচাপের ওপর ব্যায়ামের ব্যাপক প্রভাব আছে। যখন রক্তচাপ ১২০-এর উপরে প্রতি ২০ পয়েন্ট বাড়ে, তখন হৃদরোগের ঝুঁকি প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। নিয়মিত ব্যায়াম রক্তচাপ কমিয়ে এই ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে রাখে।'
কখন বুঝবেন আপনি দ্রুত হাঁটছেন? যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস বলছে, দ্রুত হাঁটার সময় আপনি কথা বলতে পারবেন, কিন্তু গান গাইতে পারবেন না।
জুলাইয়ে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণায় বলা হয়েছে, দ্রুত হাঁটার আরও একটি উপায় হলো, হাঁটার গতি একটু বাড়িয়ে সেটি মেট্রোনোম দিয়ে মেপে নেওয়া।
ফ্রিম্যানের পরামর্শ, 'সকালের আগে উঠেই দ্রুত হাঁটা, সাঁতার বা বাইক চালানো বা উচ্চ-তীব্রতার ব্যায়াম করুন। এটি দিনে কোথাও কিংবা বাড়ির কাছাকাছি নিরাপদ জায়গায় করতে পারেন।'
সঠিক হাঁটার ভঙ্গি মেনে চলা যেমন: কাঁধ পেছনে সরিয়ে উঁচু দাঁড়া, হাতের সুইং করা, মেরুদণ্ডের ব্যথা কমায়, শ্বাসপ্রশ্বাস সহজ করে এবং শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করে।
স্ট্রেন্থ ও কন্ডিশনিং বিশেষজ্ঞ ডানা সান্টাস বলেন, 'হাঁটা মানে শুধু পায়ের কাজ নয়, পুরো শরীরের কাজ। হাতের সুইং [দোলানো] পায়ের চলার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত।'
আর একটু উন্নত করতে চান? হাঁটার সময় নাক দিয়ে শ্বাস নিন এবং মুখ দিয়ে ছাড়ুন। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে কার্যকর।